রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও নারী সহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক পদে রয়েছেন। এ সময়ে একাধিকবার দুলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্ক, অবৈধ নিয়োগ ও এমপিভুক্তি, স্কুলের টাকা মেরে দেওয়া, কাজ করিয়ে প্রতিষ্ঠানের বিল না দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠলেও প্রতিবারই কৌশলে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি নারী কেলেঙ্কারি ও অবৈধভাবে কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগের পৃথক তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। গত সপ্তাহে সরেজমিনে গিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে আসা অভিযোগে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে স্কুলের একজন শিক্ষিকার অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তারা স্কুলে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অশ্লীল আচরণ করেন ও কথাবার্তা বলেন। এছাড়া স্কুলের একজন আয়াকে তথ্য গোপন করে নিয়োগ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগে জটিলতা তৈরি করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা মেরে দেওয়ার অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৫ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে ঢাকা বোর্ড। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকা বোর্ডের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক মো. শাহ আলমকে। অপরদিকে তথ্য গোপন করে আয়া নিয়োগ এবং এমপিওভুক্ত করার অভিযোগের তদন্ত করছেন রমনা এলাকার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এই কমিটি গঠন করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
গত সেপ্টেম্বর মাসে বোর্ড দাখিল করা অভিযোগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ও আয়া নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলের ধর্ম শিক্ষক হুমায়ুন কবির স্কুলের প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে স্কুলের এক শিক্ষিকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ দেন। অভিযোগটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতি ধামাচাপা দেন। পরে বর্তমান সভাপতির কাছে অভিযোগটি পুনরায় তদন্তের আবেদন জানানো হলে তিনি প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরীকে শোকজ করেন। কিন্তু তিনি শোকজের জবাব দেননি। অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিধি লঙ্ঘণ করে চলতি বছর স্কুলের আয়া পদে তথ্য গোপন করে এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়ে তাকে এমপিওভুক্ত করেছেন। প্রার্থীর প্রকৃত তথ্য গোপন রেখে কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এর আগে প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী আর ওই শিক্ষিকার অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুললেও তা আপস মীমাংসা হয়। ওই অভিযোগ দিয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ধর্ম শিক্ষক হুমায়ুন কবির। কিন্তু পরে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র, ধর্ম শিক্ষক হুমায়ুন কবির ও ওই শিক্ষিকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ না তোলার আঙ্গীকার করেছেন। সে অঙ্গীকার নামার একটি কপি দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে আছে।
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক দুলাল চন্দ্র চৌধুরী দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে গেছেন, আমি এ বিষয়ে মিডিয়ার সাথে কোন কথা বলবো না।
২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১০ অক্টেবরের শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন কার্যালয়ে দেওয়া অপর এক লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে স্কুলের ৮ লাখ ৫৬ হাজার টাকার গরমিল করেছেন প্রধান শিক্ষক দুলাল। খাতা-কলম কেনার নামে ভুয়া ভাউচার বানিয়ে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই স্কুলের ফিক্সড ডিপোজিটের ৫০ লাখ টাকা ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর অন্য খাতের জামানতের ৪০ লাখ টাকা নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের আইডিকার্ড নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ আছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বরে আইডি প্রিন্টার্সের থেকে রমনা থানার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে দাখিল করা এক লিখিত অভিযোগে জানা যায়, আইডি কার্ড প্রিন্টার্সের ২৫ হাজার ৮৩০ টাকার আইডি কার্ডের বিল পরিশোধ করা নিয়ে তালবাহানা করেছেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের কাছে দুইদফা বিল চালান দেওয়া হলেও বকেয়া টাকা পাওয়া যায়নি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি।