প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন করতে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন, সেখানে নতুন করে আরও মাত্রা যোগ হওয়া সময়ের উপহার। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মিড-ডে-মিল দেয়ার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে সংবাদ মাধ্যমে খবর হয়েছে। কোমলমতি শিশুদের জীবন গড়তে শুধু জ্ঞান নয়, আনুষঙ্গিক অনেক বিষয়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর তীক্ষ নজরদারি বর্তমান সরকারের নিত্যনতুন কর্ম প্রকল্পের অভাবনীয় সংযোগ। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, করোনা সংক্রমণে উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচকে যে স্থবিরতার আকাল, সেখানে শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র সবচেয়ে নাজুক। সবার আগে বন্ধ করে দেয়া হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণকে ঠেকাতে এবং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে আমলে নিয়ে সেই ১৭ মার্চ থেকে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মযোগ স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে সংসদ টিভি আর বেতারের মাধ্যমে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠদান কর্মসূচি শুরু হলেও তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারেনি পারিপার্শ্বিক সংযোগের অপ্রতুলতায়। সেখানে তথ্য প্রযুক্তির নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ কোনভাবেই সবার জন্য অবারিত হতে পারেনি।
গ্রামেগঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে টিভি থাকলেও ইন্টারনেট ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততায় অনেকের বাসায় সংসদ টিভি আসে না। আবার হতদরিদ্র পিতা-মাতার সন্তানদের ঘরে টিভি পর্যন্ত নেই। যারা সব ধরনের প্রযুক্তির সহায়তায় এই কার্যক্রম দেখার সুযোগ পেয়েছে, তাদেরও অনেকে এই পাঠদানে মনোযোগী হতে পারেনি।
ফলে প্রাইমারি থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গত ৬ মাস ঘরে বসে অলস জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়েছে। তার ওপর করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভয়ভীতিও চেপে বসেছে শিক্ষার্থীদের জীবনে। ফলে মানসিক দৈন্যকে সামাল দেয়াও এক চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। যা পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে।
সঙ্গত কারণে প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের কিছুটা স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতে ফিরিয়ে আনতে নতুন কিছু পদক্ষেপ সংযুক্ত করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুরের খাবারের আয়োজন তেমন একটি নতুন মাত্রা। আরও একটি তথ্য এসেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে, সংসদের নবম অধিবেশনের সমাপনী দিনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন আগামী নতুন বছরের শুরুতেই প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ১০০০ করে অর্থ দেয়া হবে। যা মোবাইলের মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে যাবে।
এই মুহূর্তে দেশের প্রাইমারি শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি তিরিশ লাখ। ২০ কোটি টাকা খরচ হবে শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠাতে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দের পরামর্শ এসেছে প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে, যা প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আগামী শিক্ষা বাজেটে যুক্ত করা হবে। এটা বাজেটের নতুন শিক্ষাবর্ষের আওতাধীন থাকবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী বছর জানুয়ারির নতুন বই উৎসবে শিক্ষার্থীদের এই প্রণোদনা প্যাকেজটি দেয়া হবে। টাকাটা পাঠানো হবে মূলত স্কুল ড্রেস, টিফিন বক্স, খাতা-কলম ইত্যাদি শিক্ষাসংক্রান্ত জিনিস কেনার উদ্দেশ্য নিয়ে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অভিভাবক কিংবা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সংযুক্ত হতে হবে। আর সেভাবেই টাকাগুলো চলে যাবে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রাক্কালেই বইয়ের সঙ্গে এই টাকাও শিক্ষার্থীরা পাবে।
মূলত এই বরাদ্দ কোমলমতি শিশুদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার। এই উপহার উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতাধীনে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হবে। এই মহৎ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন হবে সারাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা। সেই মোতাবেক টাকা বরাদ্দ হবে।
তার আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই তালিকা যাচাই- বাছাই করবে। শিক্ষা ব্যবস্থাপনাকে যুগোপযোগী এবং আধুনিকায়ন করতে বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপ সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সূচকে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার একেবারে নিচের দিকে। আবার সমতাভিক্তিক শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীর অংশীদারিত্ব দৃষ্টিনন্দনভাবে সমান। তা ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ছাত্রীরা এগিয়েও। কিন্তু করোনা সঙ্কট সেই সফল ব্যবস্থাপনায় যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে সেখান থেকে বের হওয়াও এক দুঃসহ পরিক্রমা।
এ বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খোলার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। অটো প্রমোশনের কথাও বিবেচনায় থাকছে। সার্বিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা একেবারে সময়ের ব্যাপার। তবে প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার যেন যথাযথ কাজে খরচ হয় সেদিকেও নজরদারি দিতে হবে।