প্রভাষকদের সাথে এ কেমন বৈরি আচরণ? - দৈনিকশিক্ষা

প্রভাষকদের সাথে এ কেমন বৈরি আচরণ?

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ সংশোধনের বিষয়ে বেশ আগ্রহ নিয়ে এতোদিন সবাই অপেক্ষা করছিলেন। বদলি বিষয়ে একটা কিছু হবে বলে অনেকের একটা আশা ছিলো। এতে নতুন একটি শব্দও সংযোজিত হয়নি বলে জেনেছি। আগে এক বাক্যে যা বলা হয়েছিলো তাই রয়ে গেছে। অনুপাত প্রথাটি চিরতরে দূর হবে বলে ধারণা করা হয়েছিলো। প্রণীত এমপিও নীতিমালার যাবতীয় অসঙ্গতি দূর করে সম্পূর্ণ একটি শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব সংশোধিত জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা আসছে বলে সবার দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ ছিলো। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষক সমাজ অনেক আশা ও ভরসা নিয়ে সংশোধিত নীতিমালার দিকে তীর্থের কাকের মতো  তাকিয়ে ছিলেন। যৌক্তিক ও অযৌক্তিক নানা কারণে বার বার নীতমালা সংশোধন কমিটির সভার তারিখ পরিবর্তন হয়েছে। এভাবে দু'-তিন তারিখ পেছানোর পর কেনো জানি আমার মনে হয়েছে যে, চুড়ান্ত নীতিমালায় তেমন একটা ভালো কিছু আসছেনা।

মাদরাসা ও কারিগরির সংশোধিত নীতিমালা প্রকাশের পর সেই ধারণাটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। স্কুল-কলেজের সংশোধিত নীতিমালা এখনো হাতে আসে নাই। নতুন সপ্তাহ পর্যন্ত আসতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। সেটিও মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার অনুরুপ কিংবা একটু এদিক সেদিক ছাড়া অন্য কিছু হবেনা, সে রকম ধারণা আগে থেকেই করা যেতে পারে। বিভিন্ন উপায়ে যেটুকু জানা গেছে এবং মাদরাসা ও কারিগরির সংশোধিত নীতিমালার আলোকে যেটুকু অনুমান করা যায়, তাতে মনে হয় 'যেই লাউ সেই কদু' ছাড়া নতুন কিছু আশা করা যায়না। তাই সঙ্গত কারণে সংশোধিত নীতিমালায় শিক্ষক সমাজ দারুণভাবে মর্মাহত ও পীড়িত হয়েছেন।

একটি প্রশ্ন বার বার মনের মধ্যে জাগ্রত হয়ে। প্রশ্নটি এই, যে সেক্টর বা যাদের জন্য নীতিমালা সংশোধন অপরিহার্য ছিলো, সংশোধন কমিটিতে তাদের কয়জন প্রতিনিধি ছিলেন ? অথবা প্রতিনিধি যে কয়জন থাকুন না কেনো, তাদের প্রস্তাবনা কতটুকু গৃহীত হয়েছে ? তারাই বা কতটুকু বলিষ্ঠ ও স্বাধীনভাবে ভুমিকা পালন করতে পেরেছেন? বেসরকারি শিক্ষকদের দূর্ভাগ্য এই যে, শিক্ষা ও শিক্ষক বিষয়ক যে কোনো নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব সমানুপাতিক হারে রাখা হয়না।  ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে নানা সুবিধা পাওয়াদের মধ্য থেকে যে দুই-চারজন রাখা হয়, তাদের কথা ও পরামর্শ কেউ তেমন একটা আমলে নেয়না। এজন্য যাচ্ছেতাই একটি নীতিমালা আসে। ফলে যাদের জন্য সেটি প্রণীত হয়, তারা তাতে তেমন একটি স্বস্তি বোধ করতে পারেন না। অধিকন্তু, তারা অসন্তোষের দাবানলে পুড়তে থাকেন।

সংশোধিত এমপিও নীতিমালার ভালো দিকটি এই যে, তাতে কলেজের প্রভাষকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিদ্যমান অনুপাত প্রথাটির কিছুটা সংস্কার সাধিত হয়েছে। প্রভাষক সমাজ দীর্ঘদিন থেকে সেটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা আশা করেছিলেন, সংশোধিত নীতিমালায় সেটি আর থাকবেনা। কিন্তু কেনো জানি, এমপিও নীতিমালা চুড়ান্ত সংশোধনী কমিটি অনুপাত প্রথার মায়াটি একেবারে ত্যাগ করতে পারেনি। তদুপরি প্রভাষকদের পদোন্নতি ১ঃ১ করায় তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে। সংশোধনী কমিটিকে এজন্য ধন্যবাদ জানাই যে, তারা সম্ভবত অনুপাত প্রথাটি বিলুপ্তির অংশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫ঃ২ এর জায়গায় ১ঃ১ করেছেন। সে পথ ধরে একদিন জঘন্য এই অনুপাত প্রথাটির বিলুপ্তি হবে এবং  প্রভাষকদের শতভাগ পদোন্নতির পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু, ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও আলিম মাদরাসার প্রভাষকদের সাথে নীতিমালা সংশোধন কমিটির এ কেমন বৈরি আচরণ সংশোধিত নীতিমালায় প্রত্যক্ষ করি ? আট বছর পর তাদের সিনিয়র প্রভাষক পদে পদোন্নতির একটি বিধান রাখা হয়েছে। 

এরপর আর কোনো পদোন্নতি নেই। এটি কেনো বা কাদের স্বার্থে করা হয়েছে সেটি আমার বোধগম্য হয়নি। তাতে ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও আলিম মাদরাসার প্রভাষকগণ সংক্ষুব্ধ হয়েছেন। এটিই স্বাভাবিক। ইতিমধ্যে তারা তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং কঠোর আন্দোলনের জন্য মনস্থির করতে শুরু করেছেন। আমাদের দেশে সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলোতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের কোনো পদ আছে বলে জানা নেই। যদি সরকারি কলেজে পদটি না থাকে, তবে বেসরকারিদের বেলায় সেটি প্রযোজ্য হবে কেনো ? শিক্ষক সমাজকে সরকারি-বেসরকারি দু'ভাগে বিভক্ত করে এর আগে অনেক বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সহকারি প্রধানের বেতন কোডের বৈষম্যের বিষয়টি সবার জানা। এ জাতীয় বৈষম্য দূর করার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে নতুন নতুন বৈষম্য সৃষ্টির প্রয়াস সত্যি মেনে নেয়া কঠিন। এর নিন্দা জানানোর ভাষা শিক্ষক সমাজ খুঁজে পান না। প্রয়োজনে নিজেদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তারা আন্দোলন সংগ্রামের পথেই হাঁটতে শুরু করবেন।

ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও আলিম মাদরাসার প্রভাষকদের সিনিয়র প্রভাষকের পর আর কোথাও যাবার জায়গা রাখা হয়নি। উপরে উঠবার পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একটা পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করলে মাঝপথে কাউকে থামিয়ে দেয়া অন্যায় কাজ। তাকে তার গন্তব্যে যেতে দেয়া উচিত। ইন্টারমিডিয়েট কলেজ ও আলিম মাদরাসার প্রভাষকদের কাম্য অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা নিয়ে পর্যায়ক্রমে অধ্যক্ষ পদ পর্যন্ত উন্নীত হবার পথ সংকুচিত না করে প্রশস্ত করে দেয়া উচিত। বেসরকারি শিক্ষকদের 'Divide & rule' এর মাধ্যমে আর বিভক্তির মধ্যে ফেলে দেয়া ঠিক হবেনা।

শিক্ষা প্রশাসনের কতিপয়ের কলোনীযুগের মানসিকতা বদল না করলে শিক্ষায় সুদিনের প্রত্যাশা করা কঠিন। 'শিক্ষা নিয়ে গড়বো দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ' স্লোগানটি সফল করতে শিক্ষা থেকে সব বৈষম্য উঠিয়ে দিতে হবে। সর্ষে তেলে ভূত থাকলে সে তেলে ভূত তাড়িত হয় না। এই সত্যটি আমাদের সর্বাগ্রে উপলব্ধি করার এখন উপযুক্ত সময়। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বৈষম্যের অবসান না হলে উপরোক্ত স্লোগানটি কেবল স্লোগানই থেকে যাবে। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

লেখক ঃ অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042669773101807