প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা বাতিল হতে পারে। এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মাউশি অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালরয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর ছিদ্দীকের সঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দোষী যেই হোক তাকে ছাড় না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে সচিব বলেছেন, ‘সামগ্রিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পরীক্ষা বাতিলের চিন্তাভাবনা করছি।’
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল মঙ্গলবার বলেছিলেন, ‘আমাদের কথা হলো ডিবি পুলিশ যে সুপারিশ দেবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তারা যদি বলে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তাহলে পরীক্ষা বন্ধ করে দেব। আমার কথা হলো স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা, স্বচ্ছতা। আমাদের ভবিষ্যতেও পরীক্ষা নিতে হতে হবে। তাই চক্রটি যদি মাউশির ভেতরও থাকে, তাহলেও যেন বের করা হয়। আমরা চাই এর রুট (উৎস) বের করা হোক। যাতে অপরাধীরা শাস্তির মুখে পড়তে পারে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগের জন্য গত শুক্রবার ঢাকার ৬১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়। ৫১৩টি পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার।
ওই দিন রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাঁর নাম সুমন জোয়াদ্দার (৩০)। তাঁর প্রবেশপত্রের পেছনে ৭০ নম্বরের উত্তর লেখা ছিল। ডিবি জানিয়েছিল, গ্রেপ্তার সুমন বাইরে থেকে প্রবেশপত্রের পেছনে ৭০ নম্বরের প্রশ্নের সমাধান লিখে নিয়ে যান। প্রবেশপত্র দেখে পরীক্ষা দেওয়ার সময় এক শিক্ষকের সন্দেহ হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা যাচাই-বাছাই করে দেখেন, তাঁর প্রবেশপত্রে প্রশ্নের উত্তর ছোট ছোট করে লেখা রয়েছে। পরে তাঁকে আটক করা হয়।
ডিবির পক্ষ থেকে ওই দিন জানানো হয়েছিল, কেন্দ্রে নেওয়ার পথে অথবা কেন্দ্রে পৌঁছার পর প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরও একাধিক জনের নাম পাওয়া গেছে। পরে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সর্বশেষ ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, মাউশির ভেতরেরই কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তারা জানিয়েছে, পরীক্ষা শুরুর ঘণ্টা দুয়েক আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকতে পারে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা হয়েছে। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষক আবদুল খালেক বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পরীক্ষা শুরু হয় বেলা তিনটায়। তবে পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে সুমন জোয়াদ্দার জানান, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বেলা ২টা ১৮ মিনিটে তাঁর মোবাইলে পটুয়াখালীর সাইফুল ও টাঙ্গাইলের খোকন প্রশ্নের উত্তর পাঠান।
জানা গেছে, গ্রেপ্তার শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রাশেদুলের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। বরগুনার আমতলীতে তার শ্বশুর বাড়ি।
পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নুরুল আমীন বলেন, রাশেদুল জরুরি কাজে ঢাকা যাওয়ার কথা জানিয়ে ১৮ মে পর্যন্ত ছুটি নেয়। ১৯ মে কলেজে তার যোগদান করার কথা ছিল। পরে পত্রিকা দেখে জানতে পারি রাশেদুল ও সুমন প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। এটা দুঃখজনক ও লজ্জার।