প্রশ্নপত্র ‘কঠিন’ হয়েছে। এতে ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থীও পাস করবেনা। এই অজুহাতে পরীক্ষা বর্জন করেছেন রাজধানীর কয়েকটি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। তারা প্রশ্নপত্র ও খাতা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেছেন। আজ শনিবার সকাল নয়টায় এই পরীক্ষা শুরু হয়।
ঢাকা মহানর মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা প্রথমে হইচই শুরু করেন বলে জানা যায়। পরে এই কেন্দ্রের সবাই পরীক্ষা না দেয়ার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে যান। এই পরীক্ষায় পাস করলে তাদেরকে ভাইভার মুখোমুখি হতে হবে। প্রিলিমিনারিতে এমসিকিউ, লিখিত পরীক্ষা এবং ভাইভা---এই তিন ধাপ উত্তীর্ণ হলেই কেউ আদালতে আইনজীবী হিসেবে লড়তে পারেন। ফেল করলে দেশের কোনো আদালতে তারা লড়তে পারবেন না।
আরও পড়ুন :
আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার সিক্রেট
বার কাউন্সিলের পরীক্ষাকেন্দ্রে হামলা, আটক ১২
পরীক্ষা বর্জনের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছি। মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। কেউ যদি পরীক্ষা না দেয় তাহলে কিছু করার নেই।’
উল্লেখ্য, সব সময়ই এই পরীক্ষাগুলোতে হবু আইনজীবীরা প্রকাশ্যে নকল করে থাকেন। তাদেরকে কেউ কিছু বলার সাহস পায়না। কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বরত শিক্ষকদের পরীক্ষার আগের রাতেই হুমকি দেয়া হয়। তবে, গত কয়েকবছরে এই পরীক্ষাগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা সকাল নয়টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজধানীর ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এ পরীক্ষার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আজিমপুর গভমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, শেখ বোরহান উুদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়াদ্দি কলেজ, মোহাম্মাপুর মহিলা কলেজ. মোহাম্মাদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ, সেন্ট্রাল ইউমেন্স কলেজ, বিসিএসআইআর হাইস্কুল, গভমেন্ট মোহাম্মাদপুর মডেল স্কুল এন্ড কলেজ এবং ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা বাতিল করে শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে সনদের দাবিতে আগে থেকেই একদল পরীক্ষার্থী আন্দোলন করছিল। তারাই এই হামলা করেছে বলে পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা জানান।
যথেষ্ট পরিমান নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে এভাবে পরীক্ষা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির জন্য প্রায় ১৩ হাজার প্রার্থী এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তারপর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির লিখিত এ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অবশেষে সে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী এ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবীদের সনদ পেতে নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। আবার ওই তিন ধাপের যেকোনো একটি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা একবার উত্তীর্ণ হলে পরবর্তী পরীক্ষায় তারা দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো অংশগ্রহণের সুযোগ পান। তবে দ্বিতীয়বারেও অনুত্তীর্ণ হলে তাদের পুনরায় শুরু থেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।
২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩৪ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে থেকে লিখিত পরীক্ষায় দ্বিতীয় ও শেষবারের মতো বাদ পড়া তিন হাজার ৫৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ২০২০ সালে প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মধ্যে নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আট হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ হাজার ৮৫৮ জন সনদপ্রত্যাশীর এবার লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
যদিও লিখিত পরীক্ষা স্থগিতের দাবি জানিয়েছিলেন এমসিকিউ উত্তীর্ণরা। করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে লিখিত পরীক্ষা প্রত্যাহার করে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ভাইভা বা মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির দাবি জানিয়েছেন প্রার্থীরা।