প্রসঙ্গ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরকালীন সুবিধা - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরকালীন সুবিধা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক ও কলেজ বাদে বাকি বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও ও নন-এমপিওভুক্ত। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আবার বেশির ভাগের সরকারীকরণের গেজেট প্রকাশিত হয়েছে মাত্র, বাকি কাজ শেষ হয়নি। এর অর্থ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই বেশি। সরকারি প্রতিষ্ঠান সরকারি বেতন ভাতায় পরিচালিত, সরকার কর্তৃক প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ এবং এ কারণে সাধারণের ধারণা এখানে ভালো পড়াশোনা হয়। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের মান উন্নত হওয়ার কারণে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ও ফলাফল ভালো। কিন্তু শতভাগ ভালো এমনটি বলার সুযোগ নেই। আর এর অর্থ এই নয় যে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান একেবারেই খারাপ। শিক্ষার্থীদের বড় অংশ এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে যাঁরা পরবর্তী সময়ে মেডিক্যাল এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে সরকারের বড় বড় পদে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের মেধা, শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রম, ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং পুরনো ধারাবাহিকতা ও প্রতিষ্ঠানের সুনাম তাঁদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শহরের নামিদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যেও এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষকদের বেতন, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের বলতে দ্বিধা নেই এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া অনেক ভালো।

কিন্তু যাঁরা এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কারিগর, তাঁদের কষ্টের শেষ নেই। আমরা অতীতের দিকে তাকালে দেখতে পাই একসময় বেতনের একটি অংশ তাঁরা তিন মাস অন্তর অন্তর পেতেন। পরবর্তী সময়ে বেতনের ৯০ শতাংশ তাঁরা সরকার থেকে পাওয়া শুরু করেন, বাকি অংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে, যা অনেকের পক্ষে পাওয়া সম্ভব হতো না। এরপর শতভাগ পাওয়া শুরু করেন; কিন্তু বাড়িভাড়া নামমাত্র। কল্যাণ তহবিলে তাঁদের বেতনের একটি অংশ কেটে রাখা হয়। বর্তমান সরকার তাঁদের কিছু কিছু আর্থিক সুবিধা প্রদান করেছে।

যেমন—উৎসব ভাতা যদিও মূল বেতনের সমপরিমাণ নয়, নববর্ষ ভাতা এবং ইনক্রিমেন্ট। এ জন্য তাঁরা খুশি এবং সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। শিক্ষকদের প্রমোশনের বিষয়টিও সরকারি চাকরিজীবীদের মতো নয়। রয়েছে টাইম স্কেল সংক্রান্ত জটিলতা। এত সব আর্থিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের হাতে গড়া শিক্ষার্থীদের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য থাকলেও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। বরং অবসর গ্রহণের পর আর্থিক সংকট আরো বাড়ে এবং সরকারের কাছ থেকে অবসর-পরবর্তী সময়ে আর্থিক সুবিধা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতা।

অবসরের পরে শিক্ষকরা সরকারের কাছ থেকে কল্যাণ তহবিল থেকে একটি অংশ এবং এককালীন বেতনের গুণাক্রমিক একটি টাকা পেয়ে থাকেন। টাকার অঙ্ক একেবারে কম নয়; কিন্তু পাওয়া নিয়ে যত সমস্যা। একসময় শিক্ষকরা শূন্য হাতে বিদায় নিতেন। এখনো নিতে হয় অবসরের পরদিন থেকে। কেননা তাঁদের জন্য পিএলআরের কোনো বিধান নেই। তাঁদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থাও নেই। এরপর অপেক্ষা আর উপেক্ষার পালা। কেউ কেউ নানা পর্যায়ে যোগাযোগ করে অপেক্ষাকৃত দ্রুত সময়ে টাকা পান। তবে বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ কিংবা তারও বেশি লেগে যায়। এই টাকা না পেয়ে অনেকে মৃত্যুবরণও করেন। কল্যাণ তহবিলে তাঁদেরই জমা দেওয়া টাকা পেতেও অনেক সময় লেগে যায়। এ সমস্যার সমাধান দরকার।

এ কাজটি অতি সহজ। প্রথমত, এ বছর কতজন শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর গ্রহণ করবেন তার একটি তালিকা তৈরি করতে হবে। এর বিপরীতে তাঁদের জন্য কত টাকা দরকার তার হিসাব তৈরি করা। এরপর বড় বিষয় অর্থের সংস্থান। আমাদের সরকারের অনেক ব্যয় রয়েছে। শিক্ষকদের প্রতি মানবিক হয়ে বাজেটে সেই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারীকরণের মধ্যে নিয়ে আসা। তার আগে এই মুহূর্তে তাঁদের অবসরকালীন আর্থিক সুবিধা দ্রুত মেটানো দরকার। তাৎক্ষণিকভাবে মেটানো সম্ভব না হলে অন্তত এক বছরের মধ্যে মেটানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা যাঁরা সরকারি চাকরি করি তাঁদের জন্য অবসর আনন্দের। কেননা চাকরি শেষে পিএলআর, তারপর এককালীন টাকা এবং পরবর্তী সময়ে প্রতি মাসে রয়েছে পারিবারিক পেনশন। কিন্তু এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য অবসর কোনোভাবেই আনন্দের নয়; বরং হতাশা আর দুশ্চিন্তার। অবসরের পর কিভাবে সংসার চলবে তার জন্য চিন্তা। দ্রুত সময়ে তাঁদের আর্থিক সহায়তা প্রদানই পারে তাঁদের বৃদ্ধ বয়সে চিন্তামুক্ত রাখতে।

শিক্ষকরা যেন হয়রানির শিকার না হয়ে টাকা পান। বৃদ্ধ বয়সে অবসর সময় তাঁদের জীবন যেন দুর্বিষহ হয়ে না ওঠে তার জন্য আমাদের দায়িত্ব আছে।

লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041148662567139