প্রসঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি - দৈনিকশিক্ষা

প্রসঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সম্প্রতি আবারও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের দুটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে ‘উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা’ পদে পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়েছে, শর্ত দুটি হলো—শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতকোত্তর ও বয়স ৪৫ বছরের মধ্যে। বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে প্রধান শিক্ষকদের পাশাপাশি সহকারী শিক্ষকদের জন্যও আবেদনের সুযোগ রাখায় সারা দেশের মেধাবী-তরুণ শিক্ষকদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চারিত হচ্ছে। সহকারী শিক্ষকরাও নতুন করে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে, তারাও আশাবাদী একদিন প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা হবেন। একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা সমাধানে শিক্ষক থেকে কর্মকর্তা হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা ভালোমতোই বুঝতে পারবেন, যা বাইরে থেকে আসা কর্মকর্তাদের বুঝে উঠতে বেশ সময় লাগবে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে অতীতে অনেক শিক্ষকই কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাই পরবর্তীকালে এভাবেই নিয়োগ চলমান থাকা উচিত। তা ছাড়া একজন চাকরিজীবীর পেশাগত জীবনে ধাপে ধাপে পদোন্নতির সুযোগ থাকলে কাজে কর্মস্পৃহা ও আত্মমর্যাদা বাড়ে। বিভাগীয় প্রার্থিতা বহাল রাখলে শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও বৈষম্য কমে গিয়ে কাজের প্রতি আন্তরিকতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। সব সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন পদে বিভাগীয় পরীক্ষা বা সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ বিদ্যমান থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতির অচলাবস্থায় পুরো শিক্ষকসমাজ বিশেষ করে মেধাবী-তরুণ শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট এবং শিক্ষকতা পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ কেউ সুযোগ বুঝে অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছেন।

এদিকে আবারও ৪৫তম বিসিএস থেকে ৪৫৬ আর ৪০তম বিসিএস থেকে ৩৮৪ জনকে বিসিএস নন-ক্যাডার পদে তথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া জন্য সার্কুলার জারি করা হয়। এখন আবারও বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে পদগুলো পূরণের সার্কুলার জারি করায় দীর্ঘসময় পদোন্নতিবিহীন চলতি দায়িত্ব পালনকারী শিক্ষকরা মনঃক্ষুণ্ন ও হতাশ হয়ে পড়ছেন। আমরা জানি, একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষককে অবশ্যই দক্ষ ও অভিজ্ঞ হতে হয়, যেটা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দেখা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যায়। নিজ ডিপার্টমেন্টে যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকরা থাকতে বাইরের থেকে তথা প্রশাসনিক কাজে একদম আনকোরা জনবল নিয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে দায়িত্ব দেওয়া কতটুকু যুক্তিসংগত, তা একেবারেই বোধগম্য নয়। এতে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনরাও চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়ছেন। এ শিক্ষকদের বড় একটি অংশ মাস্টার্স, বিএড; ডিপিএড; এমএডসহ প্রযুক্তি দক্ষতাসম্পন্ন, তারা প্রত্যেকেই মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন, সবাই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে এর প্রমাণ রেখেছেন।

বিগত বিসিএস পরীক্ষাগুলোতেও প্রাথমিক ডিপার্টমেন্টে নিয়োগপ্রাপ্ত অনেক সহকারী শিক্ষক বিসিএস ক্যাডার নির্বাচিত হয়েছেন। যোগ্যতার পরীক্ষায় যেহেতু অনেকে বিসিএস প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা নির্বাচিত হয়েছেন, তেমনি সহকারী শিক্ষকদের সুযোগ দেওয়ায় তারাও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাও হতে পারবেন আশা করি। চাকরি জীবনে কেউ কখনো ব্লক পোস্টে আটকে থাকুক, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়, এতে যেমন বেতন-ভাতা বা গ্রেড বাড়ে না, তেমনি শিক্ষকদের আত্মমর্যাদাও বাড়ে না। মেধাবী শিক্ষকরা একসময় পদোন্নতির মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা কর্মকর্তা হয়ে চাকরি জীবন সুন্দরভাবে শেষ করতে পারলেই তাদের পেশাগত জীবন ধন্য হবে। আশা করব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির ধাপটি চলমান রাখবেন এবং একই সঙ্গে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির সুযোগদানেই শিক্ষকদের মেধার ও কর্মদক্ষতার মূল্যায়িত হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা বিভাগীয় পরীক্ষা বা সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদোন্নতির সুযোগ পেলে সহজেই প্রধান শিক্ষক-সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হতে পারবেন, ঠিক এভাবে সময়মতো ও যথাযথভাবে বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দিলে শিক্ষকরা কাজের প্রতি আরও আন্তরিক হবেন, তেমনি শিক্ষা প্রশাসনেও শতভাগ সফলতা আসবে।

বিসিএস নন-ক্যাডার থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করলে দেখা যায় যে, বেতন-ভাতা ও গ্রেড বৈষম্যের কারণে অনেকে যোগদান করেন না। আবার কিছুসংখ্যক যোগদান করে দাপ্তরিক বিভিন্ন কাজের চাপে ওই চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোনো পেশায় চলে যান, এতে করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষক শূন্য থেকে যায়। তখন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি আবার প্রশাসনিক কাজগুলোও চালাতে বেগ পেতে হয়। এভাবে শিক্ষক সংকটে প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার মান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। নিজ ডিপার্টমেন্টে পদোন্নতি বন্ধ থাকায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে এ পদেই অনেকের কর্মজীবন শেষ হয়, এভাবেই মেধাবী শিক্ষকরা পদোন্নতিবঞ্চিত হচ্ছেন। তাই বিসিএস নন-ক্যাডার বা সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে বিভাগীয় পরীক্ষা ও সিনিয়রিটির ভিত্তিতে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক বা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা পদে পদোন্নতি প্রদান করা হোক।

লেখক: গাজী আরিফ মান্নান, শিক্ষক, ফেনী

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0041937828063965