প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে তিনটি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এর প্রথমটি হচ্ছে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা থাকবে না। আমি শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ এই সময়টায় বাচ্চাদের মানবিক বোধ ও নানা মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে। যেমন: শারীরিক বিকাশ, মানবিক বিকাশ, আবেগিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ, নৈতিক বিকাশ ইত্যাদি ঘটা খুবই জরুরি। তাছাড়া আনন্দময় শৈশব শিশুদের অধিকার। এই শৈশবকালীন আনন্দময় অভিজ্ঞতা তাদের সারা জীবনের ভালো আচরণের মৌলিক ভিত্তি। তাই এ সময়ে শিশুরা পরীক্ষাভীতি, প্রাইভেট-কোচিং-গাইড বই পড়ার বাধ্যবাধকতা বা পড়াশোনার কড়াকড়ি ছাড়া যে শিক্ষাটা পাবে, সেটি তাদের উপরিউক্ত সব ধরনের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে। সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগ বিভাজন থাকছে না-এটিও খুবই ভালো উদ্যোগ। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে বিজ্ঞান শিক্ষা সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই দেশের সব শিক্ষার্থীকে বিজ্ঞানের মৌলিক কিছু বিষয় শেখানোর পর বিশেষায়িত শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে। প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির কোর্স কারিকুলামটি যথাযথ হলে তা আমাদের শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে বলে বিশ্বাস করি।
এইচএসসির ক্ষেত্রে দুই সেশনে পরীক্ষা হবে, আর দুটোর সমন্বয়ে রেজাল্ট নির্ধারণ করা হবে। এটাও আমার কাছে একটি ভালো উদ্যোগ বলেই মনে হয়। কারণ দুই সেশন শেষে পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ার চাপ অনেক বেশি হয়ে যায়। তার চেয়ে বরং বছর শেষে প্রথম পত্রের পরীক্ষা হয়ে গেলে পরের সেশনে শিক্ষার্থীরা শুধু দ্বিতীয় পত্রের বিষয়বস্তুগুলোই পড়বে। তাছাড়া প্রতি শ্রেণিতে তো বছর শেষেই শিক্ষার্থীরা বার্ষিক পরীক্ষা দেয়। এক্ষেত্রে তা-ই হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে না বলেই আমার মনে হয়। আর যেহেতু দুই সেশনের পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের ফাইনাল গ্রেড নির্ধারণ করা হবে, সেহেতু সময় নষ্ট না করে শুরু থেকেই শিক্ষার্থীরা দুটো সেশনকে সমান গুরুত্ব দিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। নতুন বা পরিবর্তিত শিক্ষাপদ্ধতি বাস্তবায়ন করা শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। তবে শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ বা ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা থাকলে ধীরে ধীরে সবাই পরিবর্তনগুলোয় অভ্যস্ত হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়।
লেখক : ড. আকতার বানু, প্রফেসর, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়