প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের ক্ষমতা কমছে - দৈনিকশিক্ষা

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের ক্ষমতা কমছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা শতাধিক। আরও কয়েকটির অনুমোদন পেতে চলছে চেষ্টা-তদবির। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বেশ কয়েকটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ তথা উদ্যোক্তাদের পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে দ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে।

এ অবস্থায় বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা সীমিত করা এবং শিক্ষার্থী ফি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়াসহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সংশোধিত আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও বিদ্যমানগুলো পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইন সংশোধনের পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা।

সম্প্রতি সংশোধিত আইনের এ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রমতে, ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি খসড়া প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এখন এই খসড়া চূড়ান্ত করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত নেওয়া হচ্ছে।

জানতে চাইলে অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, আইন সংশোধনের উদ্যোগটি মন্ত্রণালয়ই নিয়েছে। বিদ্যমান আইনে বেশ কিছু দুর্বল দিক আছে। এখন এসব অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দেওয়া হচ্ছে। উপাচার্যেরা যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারেন, সে জন্য একটি ভারসাম্য আনাসহ বেশ কিছু কারণে আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে।

প্রণীত খসড়ায় কী আছে

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে করা আইনের আলোকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শুরু হয়। এরপর ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে আইনটি সংশোধন করে নতুন আইন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এখন আবারও আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। আইনের খসড়ার সঙ্গে একটি খসড়া সংবিধিও করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কাজগুলো কী হবে, তা বিস্তারিতভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

বোর্ড অব ট্রাস্টিজের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা সীমিত করার প্রস্তাব করে খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। ইউজিসির সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদন ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। প্রয়োজন হলে ইউজিসি বা সরকার সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দিতে পারবে। বিদ্যমান আইনে সর্বোচ্চ ২১ জন ও কমপক্ষে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকতে হয়। এখানে আলাদা করে শিক্ষাবিদের কথা বলা নেই।

সংশোধিত আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই কমপক্ষে এক লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা সাময়িক সময়ের জন্য ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। বর্তমান আইনে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন হলে হয়।

সংরক্ষিত তহবিলের পরিমাণ যেমন বাড়ানো হচ্ছে, তেমনি স্থায়ী অনুমোদনের জন্য এলাকাভেদে জায়গার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে সনদের জন্য (স্থায়ী অনুমোদন) ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কমপক্ষে এক একর পরিমাণ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে দুই একর জমি থাকতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনে তা বাড়িয়ে কমপক্ষে পাঁচ একর করা হয়েছে। অবশ্য ইতিমধ্যে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমির এই বিষয় প্রযোজ্য হবে না। এটি মূলত নতুন করে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

অন্যদিকে সংশোধিত আইনের খসড়া অনুযায়ী, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সংরক্ষিত তহবিল হিসাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে আট কোটি এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে তিন কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। বর্তমানে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি এবং অন্য মহানগরগুলোর জন্য কমপক্ষে তিন কোটি আর অন্যান্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকা রাখতে হয়।

কমছে ট্রাস্টিদের ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা

এখন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকসহ (অর্থ) বিভিন্ন পদেও চাকরি করেন। যেখান থেকে তাঁরা মাসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় দামি গাড়ি হাঁকানো, সম্মানীর নামে প্রচুর টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এখানে রাশ টানতে চাইছে সরকার।

প্রণীত খসড়ায় বলা হয়েছে, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোনো সদস্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে বসতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভায় বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য কোনো আর্থিক সুবিধা (সম্মানী বা অ্যালাউন্স, গাড়ির সুবিধা ইত্যাদি) গ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে বসতে পারবেন না।

অন্যদিকে অর্থ কমিটির সভাপতি হবেন উপাচার্য। আর অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত একজন প্রতিনিধি থাকবেন। বর্তমানে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত তিনজন সদস্য এই কমিটিতে থাকেন, যার মধ্যে একজন সভাপতি হন।

তিন শীর্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতা

আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ–উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দেন। সংশোধিত আইনের খসড়া অনুযায়ী, উপাচার্য নিয়োগের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যেকোনো একটি স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ–৪–এর মধ্যে ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বীকৃতি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বর্তমানে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে মোট ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। সহ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও সংশোধনী আনা হচ্ছে।

এসব পদে মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে চার মাস আগেই নিয়োগের জন্য প্রস্তাব পাঠাতে হবে। বর্তমানে মেয়াদ শেষ হওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে বা পরেও এই পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফলে জটিলতা হয়, এমনকি অনেক সময় পদ শূন্য থাকে।

শিক্ষার্থী ফি নির্ধারণে লাগবে ইউজিসির অনুমোদন

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি ‘ইচ্ছামতো আদায়সহ’ নানা রকম অভিযোগ আছে। খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার মানদণ্ডে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষার্থী ফি ঠিক করে ইউজিসির অনুমোদন নিতে হবে। এটি আবার সরকারকে (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) জানাতে হবে। এর কোনো পরিবর্তন করতে চাইলেও ইউজিসির অনুমোদন লাগবে।

এমনকি কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির সময় যে ফি কাঠামো দেখে ভর্তি হবেন, তা প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো যাবে না বলে খসড়ায় বলা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফি ঠিক করে ইউজিসিকে কেবল অবহিত করে থাকে।

এ ছাড়া সংশোধিত আইনের খসড়ায় এখনকার আইনের শাস্তিগুলোর পাশাপাশি নতুন একটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আইনে এমন কোনো বিধান যেগুলোর বিষয়ে পৃথক কোনো জরিমানা বা অর্থদণ্ডের বিধান নেই, সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা ব্যক্তি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে।’

‘ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে’

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, যেভাবে খসড়াটি করা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হলে নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা কঠিন হবে। একই সঙ্গে বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিচালনা করতেও হিমশিম খেতে হবে।

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির প্রধান উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, এখানে ভালো-মন্দ দুটি দিকই আছে। জমির পরিমাণ এবং সংরক্ষিত তহবিলে কত টাকা আছে, সেটি অত গুরুত্বপূর্ণ নয়। বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছেন, তাঁদের উচ্চশিক্ষায় অবদান রাখার মতো যোগ্যতা ও মানসিকতা আছে কি না।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, একটি বোর্ডের সভায় নির্ধারিত পরিমাণ সম্মানী নিলে দোষের কী? কিন্তু বোর্ডের সদস্যরা বেতন নিয়ে কাজ করতে পারবে না এটি ভালো বিধান। কিন্তু সবকিছু যদি সরকার নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কেন?

জানতে চাইলে ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, সময়ের সঙ্গে মিল রেখে আইনের পরিবর্তন-পরিমার্জন হতেই পারে। তবে সেটি যেন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামতের ভিত্তিতেই করা হয়।

সূত্র : প্রথম আলো

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071790218353271