দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শীতকালীন ছুটি আজ রোববার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ছুটি কমানো হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শীতকালীন ছুটি। গতকাল শনিবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে শীতকালীন ছুটি পুনঃনির্ধারণ করে আলাদা আলাদা আদেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে কর্মকর্তাদের ছুটির দিনে আদেশ জারি করে স্কুলগুলোতে ছুটি কমানোয় শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। শিক্ষকরা বলছেন, বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন শেষ। তারা স্কুল ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। এই তিন দিন কাকে তারা ক্লাস করাবেন সে প্রশ্ন শিক্ষকদের মুখে মুখে। আর হঠাৎ ছুটি কমানোর সিদ্ধান্তকে 'অপরিকল্পিত, অপরিপক্ক, অমানবিক ও বেআইনি' বলে আখ্যা দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, বার্ষিক ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৯ থেকে ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বড়দিন ও শীতকালীন অবকাশ ছুটি নির্ধারিত থাকে। কিন্তু ব্লেন্ডেড রুটিনের অজুহাতে শনিবার সরকারি অফিস বন্ধের দিনে দুপুরে উপসচিব নাজমা শেখ স্বাক্ষরিত আদেশে ছুটি পুনঃ নির্ধারণ করা হয়। ছুটি পুনঃনির্ধারণে আগামী ২৪ থেকে ২৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটি কার্যকরীর কথা বলা হয়েছে। যা ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় চার লক্ষ শিক্ষকের মধ্যে অসন্তোষের শোকে পরিনত হয়।
শিক্ষকরা জানান, প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের দেওয়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিদ্যালয় ছুটি দিয়েছে।
স্কুল ছুটির পর প্রধান শিক্ষক মুঠো ফোন, মেসেঞ্জার, গ্রুপ ও মেসেঞ্জারে বিষয়টি অবগত হন। অথচ সব ক্লাসের মূল্যায়ন শেষ। কোমলমতি শিশুরা ছুটি চলাকালীন সময়ের বিনোদন হিসেবে নানার বাড়ি,দাদার বাড়ি সহ বিভিন্ন আত্মীয়ের বাড়িতে সময় কাটানোর পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে, এ অবস্থায় এহেন অমানবিক ও নির্বাহী আদেশের ছুটির তালিকাকে অবমাননা করে ছুটি বাতিলের চিঠিতে পুরো শিক্ষক সমাজের মাঝে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে।
এদিকে একাধিক প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের মোর্চা প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদের নেতারা বলছেন, শীতকালীন অবকাশ ছুটিতে মাধ্যমিক, কলেজের ছুটি বহাল থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর এমন অমানবিক ও বৈষম্য পরিলক্ষিত হওয়ায় নেতারা আলোচনা করেছেন। মন্ত্রণালয়ের অপরিকল্পিত,
অপরিপক্ক, অমানবিক ও বেআইনি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ। সেই সাথে ছুটি বহাল রাখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি।জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তবর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে স্কুলগুলোতে বড়দিন ও শীতকালের ছুটি শুরু হবে। ১৯ ডিসেম্বর থেকে প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শীতকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি জানিয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷
চলতি বছরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর থেকে বড় দিন ও শীতকালীন ছুটি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) প্রণীত অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান চলছে। অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে আগামী ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। সে অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোতে শীতকালীন ছুটি শুরু হবে।