সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রার্থীরা। ক্ষণে ক্ষণে এই পরীক্ষার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হচ্ছে। এত পরিবর্তনের ফলে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে কর্মরতদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ফলে বিভ্রান্তিতে পড়েছে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী।
এই পরীক্ষা নিয়ে রোববার অধিদপ্তর সারাদেশের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে ভার্চ্যূয়াল সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নেয়া হবে না। কিন্তু এ নিয়ে কোনো কর্মকর্তা স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না। তবে অধিদপ্তরের কর্মচারীরা এই সভার সূত্র দিয়ে ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে নয়, আগের মত জেলায় জেলায় নেয়া হবে। তবে কত তারিখ থেকে এই পরীক্ষা নেয়া হবে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মুখ বন্ধ। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে জানা গেছে।
রোববার রাতে একটি উপজেলার এক রিসোর্স সেন্টারের (ইউআরসি) ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ফেসবুকে ষ্ট্যাটাস দিয়ে লিখেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়েছে। খুব শিগগিরই জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।’
ওই ষ্ট্যাটাসে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রবিবারের ভার্চ্যূয়াল সভাকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হবে। তখনই চূড়ান্ত হবে।
ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আলেয়া ফেরদৌসী শিখা বলেন, অধিদপ্তরের উদ্যোগে সভায় কেন্দ্রীয়ভাবে না নিয়ে জেলায় জেলায় পরীক্ষা হওয়ার কথা হয়েছে। লিখিতভাবে এখনো নির্দেশনা পাইনি।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বলেন, জেলায় জেলায় পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চাওয়া হতে পারে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে এরআগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেয়া হত কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না, আগে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নেয়া হত না। মন্ত্রণালয়ই অনুমোদন দিত। কিন্তু এবার বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর অনুমতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে এত কথা হয়েছে যে নতুন করে লিখিত নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলতে চাই না।
এরআগে গত ১০ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, আগামী এপ্রিল মাসের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর জুলাই মাসে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ দেয়া হবে। এতে আরো জানানো হয়, প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত বছরের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে অবসরজনিত কারণে আরো দশ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়েছে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা পাঠদান কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে। এ সমস্যা নিরসনে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্যপদ এবং বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্যপদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর দুদিন পরে গত ১২ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠির বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছিল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। পাঁচ ধাপে হতে যাওয়া এই পরীক্ষা শেষ হবে আগামী ২৮ এপ্রিল। চিঠিতে জানানো হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ-২০২০ এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ০১, ০৮, ১৫, ২২ ও ২৮ এপ্রিল কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। নির্ধারিত তারিখে সকাল ১০টায় বা বিকেল ৩টায় পরীক্ষা হবে। এরপরে গত সপ্তাহে বলা হয়, ০১ নয় ০৮ এপ্রিল থেকে পরীক্ষা নেয়া শুরু হবে। এখন ৮ এপ্রিল থেকেও পরীক্ষা শুরু হবে না।