শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। একজন শিক্ষক অতি যত্নের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত মানুষ হিসাবে গড়ে তোলেন। অথচ প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন, যা দিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ফেধ্রুয়ারি ১৩তম গ্রেড ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকরা এখনো তা পাননি। আগে সহকারী শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল পুরুষদের স্নাতক এবং নারীদের এসএসসি। কিন্তু নতুন নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকদের যোগ্যতা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, স্নাতক পাশের ক্ষেত্রে যোগ্যতা অনুযায়ী দ্বিতীয় শ্রেণির ১০ম গ্রেড পাওয়ার কথা। অথচ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।
নিন্ম বেতন-ভাতার কারণে উচ্চশিক্ষিতরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চান না। এর প্রভাব পড়ছে সার্বিক শিক্ষার মানে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিক্ষকদের ভিআইপি মর্যাদা দেওয়া হয়, অথচ এ দেশের শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী, এটি দুঃখজনক। একজন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর কাছ থেকে দেশ ভালো কিছু আশা করতে পারে না। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু শিক্ষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে না।
প্রাথমিকের একজন প্রধান শিক্ষককে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। অথচ তাদের বেতন দেওয়া হয় ১১তম গ্রেডে। মাধ্যমিকের একজন সিনিয়র শিক্ষক ৯ম গ্রেডে বেতন পান, আর প্রধান শিক্ষক বেতন পান ৭ম গ্রেডে। অথচ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেলায় নেই এমন বিধান। ঘরে খাবার না থাকলে সম্মান ধুয়ে পানি পান করে দিন চলবে না।
আজকাল একজন শিক্ষিত মেয়ে প্রাথমিক শিক্ষককে বিয়ে করতে চায় না এই ভেবে যে এ শিক্ষক তার সামান্য বেতন দিয়ে সংসার চালাবেন কীভাবে! শিক্ষকতা সম্মানের পেশা, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর সমতুল্য! এই অভিশাপ থেকে প্রাথমিকের শিক্ষকরা মুক্তি চান।
যোগ্যতা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড, প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের ৮ম গ্রেড এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের ৭ম গ্রেডে বেতন দেওয়া উচিত। মানসম্মত শিক্ষা পেতে হলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। যোগ্যতার মাপকাঠি সব স্তরে সঠিক রাখতে হবে।
তবেই দেশ এগিয়ে যাবে। তাই প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড এবং প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেডে বেতন প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
লেখক : মুন্নাফ হোসেন, সহকারী শিক্ষক, ধনবাড়ী, টাঙ্গাইল