সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি (নেপ) ‘অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা, ২০২১‘ প্রণয়ন করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট দেয়া হবে। মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট তৈরি করবেন। ওয়ার্কশিট অনুসারে শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ করবে এবং তা স্কুলে জমা দেবে। লকডাউন শেষ হলে পরদিন থেকেই এই পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট বিতরণ শুরু হবে। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনে ক্লাস চলবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি জানিয়ে অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে।
মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, এ অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট দেয়া হবে। ওয়ার্কশিট অনুসারে শিক্ষার্থীরা বাড়ির কাজ করবে এবং তা স্কুলে জমা দেবে। এ পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট তৈরি করবেন। পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও অনলাইনে ক্লাস চলবে।
অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়, কোভিড-১৯ জনিত কারণে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে আগামী ২২ মে পর্যন্ত বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণি পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিখন-শেখানো ঘাটতি পূরণকল্পে গত ১৫ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা ২০২১ (লেসন প্ল্যান) সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ওয়ার্কশিট ও অ্যাক্টিভিটিশিট প্রণয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমির (নেপ) মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শিখন ফল অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দুই সপ্তাহের কর্ম পরিকল্পনাসহ ওয়ার্কশিট ও অ্যাক্টিভিটিশিট (পরীক্ষামূলক বাড়ির কাজ) প্রণয়ন করা হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, দুই সপ্তাহের ওয়ার্ক সিট ও অ্যাক্টিভিটি সিটসহ (পরীক্ষামূলক বাড়ির কাজ) অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা পাঠানো হলো। অফিস আদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নেপের অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা ২০২১ (পরীক্ষামূলক বাড়ির কাজসহ) পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পাঠ পরিকল্পনায় সাধারণ নির্দেশনাসহ শিক্ষকদের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
পাঠ পরিকল্পনার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের প্রথম থেকে ক্রমান্বয়ে সকল অনুশীলনীকে বাড়ির কাজ নামে ক্রমিক নম্বর প্রদান
করা হয়েছে। বাংলা বিষয়ের বাড়ির কাজ করার ক্ষেত্রে কোন বিষয়বস্তু (গল্প, কবিতা, নাটক, বর্ণনা) পড়তে হবে, তার নির্দেশনা বাড়ির কাজের সাধারণ তথ্য অংশে উল্লেখ করা আছে। প্রতি সপ্তাহের জন্য মূল পাঠপরিকল্পনার ৬ দিনের পাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। সাপ্তাহিক পরিকল্পনায় শুক্রবারসহ অন্যান্য জাতীয় ছুটির দিন বাদ দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রমের দিনগুলোকে তারিখের কলামে উল্লেখ করা হয়েছে। মূল পাঠপরিকল্পনায় সাময়িক পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত দিনগুলোকে পাঠ দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়ছে, শিখন ঘাটতি পূরণে পুর্বের শ্রেণির আবশ্যকীয় শিখন বিষয়বস্তু চিহ্নিত করা হয়েছে। চিহ্নিত ঘরের সংযুক্ত পূর্ববর্তী পাঠ বা পাঠ্যাংশ বা অনুশীলনগুলো আগে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিতে হবে, তারপর বর্তমান শ্রেণির পাঠ বা পাঠ্যাংশ বা অনুশীলনী শিক্ষক বুঝিয়ে দিবেন।
যে পাঠের সাথে যে বাড়ির কাজ সম্পর্কিত তা শ্রেণি ও নম্বরসহ টেবিলে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সরবরাহকৃত বাড়ীর কাজগুলো পূরণ করার আগে তাদের পাঠ্যবইয়ে প্রদত্ত অনুশীলনী বা এক্টিভিটিগুলো কলম বা পেন্সিল দিয়ে পূরণ করবে, তারপর ওয়ার্কশীটগুলো পুরণ করবে।
শিখন ঘাটতি পূরণে পূর্বের শ্রেণির পাঠের সাথে সম্পর্কিত বাড়ির কাজ পরবর্তী শ্রেণির বাড়ির কাজের সাথে। ক্রমিকনম্বরসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
বিদেশি ভাষা হিসেবে ইংরেজি বিষয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের পড়া, বাড়ির কাজগুলো করতে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের (পিতা-মাতা, ভাই, বোন) সহায়তা করবেন। লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী তারিখ থেকে ১ম দিন ধরে পাঠপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
শিক্ষকের জন্য ব্যবহার নির্দেশিকা অংশে বলা হয়েছে, প্রতি সপ্তাহের নির্দিষ্ট পাঠের বিষয়বস্তু ও সংশ্লিষ্ট বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও নির্দেশনাসহ পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নির্দিষ্ট সময় শেষে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি যাচাই করবেন ও বাড়ির কাজ সংগ্রহ তার ভিত্তিতে
অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঠপরিকল্পনায় নির্দিষ্ট তারিখের নির্ধারিত পাঠ (শিখন ঘাটতি পূরণ পরিকল্পনাসহ) উপস্থাপন করবেন। পাঠ উপস্থাপনার সাথে সাথে ঐ পাঠের জন্য নির্ধারিত বাড়ির কাজ শিশুদের যথাযথ নির্দেশনাসহ বুঝিয়ে দিবেন। সকল কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন।
মাঠ পর্যায়ের একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা পাঠ পরিকল্পনাটি পেয়েছি। এ অনুসারে ওয়ার্কশিট তৈরি করা হচ্ছে। ক্লাস্টার ভিত্তিক ভাগ করে শিক্ষকদের ওয়ার্কশিট বিতরণ ও বাড়ির কাজ সংগ্রহের কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাড়িতে যেতে হবে এমন কথা নেই। ক্লাস্টারগুলো নিজ নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ দিচ্ছে ও তা সংগ্রহ করছে।
কি পদ্ধতিতে বাড়ির কাজ দেয়া হবে জানিতে চাইলে তিনি ঢাকার অদূরের এক উপজেলার উদাহারণ টেনে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোথাও কোথাও শিক্ষকরা স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট দেবেন। অভিভাবকরা তা সংগ্রহ করবেন। আবার স্কুলে জমা দেবেন। কোন কোন ক্লাস্টারের পরিকল্পনা শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওয়ার্কশিট পৌঁছে দেবেন। কোথাও একটি নির্দিষ্ট স্থানে ওয়ার্কশিট রাখা হবে এবং সেখান থেকে অভিভাবকরা সংগ্রহ করবেন।
এদিকে গত ২৯ এপ্রিল জারি করা এক আদেশে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস শুরুর নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের সপ্তাহভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনাটি তুলে ধরা হল।
পাঠ পরিকল্পনা দেখতে ক্লিক করুন :
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।