প্রাথমিক শিক্ষায় অনুকরণীয়: জিয়ারকান্দি বিদ্যালয় - Dainikshiksha

প্রাথমিক শিক্ষায় অনুকরণীয়: জিয়ারকান্দি বিদ্যালয়

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

দাউদকান্দি ব্রীজ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে এগিয়ে গোমতি নদীর পাড় ঘেঁষে খাল পাড়ে অবস্থিত তিতাস উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জিয়ারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। কুমিল্লা জেলার জনগণের মাঝে বিদ্যালয়টির সুনাম সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মরহুম এ কে ফজলুল হক সরকার (দুধ মিয়া সরকার) এলাকার সাধারণ মানুষের শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করার প্রয়াসে ৫০ শতাংশ জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় ৮শ’ জন শিক্ষার্থী, ১৪ জন উচ্চশিক্ষিত শিক্ষকম-লী নিয়ে বিদ্যালয়টি সুনাম বৃদ্ধি করে আসছে।

শিক্ষক সংকটের কারণে দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল প্রত্যয় নিয়ে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস। ডিজিটাল শিক্ষক হাজিরা, ওয়াই-ফাই সংযোগ, আলাদা মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ (চার জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক), প্রাথমিকের কারিকুলামের গানের সিডি, প্রাক প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ডিজিটাল কনটেন্টের মাধ্যমে পাঠদান, বিদ্যালয়ের পাঠাগার থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের গল্প, কবিতা, ছড়া, কার্টুন, মনীষীদের জীবনীসহ নানা ধরনের আনন্দদায়ক ও জ্ঞান বিকাশের বই বিতরণ ও জমা নেওয়ার কাজ চলে। সুসজ্জিত বিজ্ঞানাগারের মাধ্যমে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়। এক কথায় বলতে গেলে পুরো বিদ্যালয়টি সুসজ্জিত। শ্রেণিকক্ষগুলোর নামকরণ হয়েছে কবি মনীষীদের নামে।

বিদ্যালয়ের বাহিরের দেয়াল জুড়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও জাতীয় নিদর্শনের ছবি শিক্ষার্থীদের দেশের ইতিহাস এবং অতীত নিদর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তোলে। ময়নামতি বৌদ্ধবিহার, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা, মহাস্থানগড়, পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার, সোনারগাঁও কারুশিল্প জাদুঘর, বায়তুল মোকাররমের জাতীয় মসজিদ, জাতীয় সংসদ ভবন, জাতীয় শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, জাতীয় জাদুঘর, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সুন্দরবন, বঙ্গবন্ধু সেতু অন্যতম। শতভাগ শিক্ষার্থীর পোশাকের পাশাপাশি, শিক্ষকদের একইরকম পোশাক, ক্ষুদে ডাক্তারের দল, নৃত্যের দল, স্কাউট দল, ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল দলের আলাদা পোশাক বিদ্যালয়টির বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে চলছে। এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় মিড-ডে মিল চালু আছে।

সাংস্কৃতিক কর্মকা- শিক্ষক রত্না রাণী রায়ের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের শিক্ষকম-লী। কাজ করে যাচ্ছেন। এর ফলে বিদ্যালয়টি সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। ডিজিটাল পিয়ানো, হারমোনিয়াম, তবলা, তানপুরাসহ সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে প্রতিদিন সমাবেশে জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি দেশাত্ববোধক ও ছড়াগান সমস্বরে পরিবেশন করা হয়। খেলাধুলা , চিত্রাঙ্কন ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সাফল্য এলাকার বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে ১ম স্থান অধিকার করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা ও নগদ এক লাখ টাকা অনুদান, খেলাধুলা ও সাংস্কৃৃতিক কর্মকা-ে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে ১ম স্থান ও একক অভিনয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে ৩য় স্থান প্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে নিজস্ব শহীদ মিনার অবস্থিত। শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় জাতীয় দিবসসহ সকল বিশেষ দিবস জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয়।

উপকরণ মেলা, ডিজিটাল মেলা ও বিভিন্ন জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লেতে উপজেলায় ১ম স্থান বহাল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষালয়টি। বঙ্গমাতা ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ হওয়ার গৌরব বরাবর অর্জন করে আসছে। বিদ্যালয়টির ফলাফলও নজর কাড়ার মতো। বিগত বছরে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীতে মোট পরীক্ষার্থী ১১২ জন। শতভাগ উত্তীর্ণসহ জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৯ জন। সাধারণ বৃত্তি ৫ জন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ১০ জন। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৯৫ জন পরীক্ষার্থী। পাশের হার ৯৮ শতাংশ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৫ জন, সাধারণ বৃত্তি ১১ জন ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি ৩ জন। ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষার্থী ১৫১ জন।

উপকরণ সংরক্ষণের স্ট্যান্ড ও আলমারি থেকে শিক্ষকেরা প্রতিনিয়ত উপকরণের মাধ্যমে শিক্ষাদান করে আসছেন। বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ফুল, ফল ও সবজির বাগানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় যত্ন নিয়ে থাকে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেটের ব্যবস্থা বিদ্যমান। প্রাক প্রাথমিকসহ সকল শ্রেণিকক্ষ সুসজ্জিত ও আকর্ষণীয়। বিদ্যালয়ে সিটিজেন চার্টার, নোটিশ বোর্ড, পরামর্শ বক্স, মনিটরিং বোর্ড, শিক্ষক পরিচিতি বোর্ড, বিজ্ঞানাগার, ছবির গ্যালারির মাধ্যমে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ও বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সাজানো আছে। দুইটি সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে চারটি ভবনে নিরাপদ পানি সরবরাহ করা হয়। এছাড়া নিয়মিত মা সমাবেশ, উঠান বৈঠক, অভিভাবক সমাবেশ, এস এমসি, পিটিএ সভার কার্যক্রম নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থীদের পাঠের সাপ্তাহিক ও মাসিক মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হয়। অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে ১ম, ২য় ও বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পাশাপাশি বৃত্তিপ্রাপ্তসহ সকল শ্রেণির ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অধিকারীকে পুরস্কৃত করা হয়। স্টুডেন্ট কাউন্সিলকে তাদের কার্যক্রম নিয়মিত করার মাধ্যমে সক্রিয় রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বিদ্যমান। বিগত ৫ বছরে বিদ্যালয়টি উপজেলা পর্যায়ে ২ বার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয়, ২ বার শ্রেষ্ঠ ম্যানেজিং কমিটি, ১ বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের পুরস্কার লাভের গৌরব অর্জন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠত্বের স্থানে এগিয়ে নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষাকে গতিশীল করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিদ্যালয়টির সুনাম, কার্যক্রম অক্ষুন্ন রাখতে প্রশাসন, সরকার ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049018859863281