প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নেতারা। তারা বলছেন, এ পরীক্ষা শিশুদের আনন্দময় শৈশব কেড়ে নিয়ে শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ তরান্বিত করছে। সরকারের দেওয়া পূর্বঘোষণা অনুযায়ী চলতি বছর থেকেই শিশু শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে অবস্থান নিয়ে সংগঠনটির নেতারা এসব কথা বলেন।
আবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মাসুদ রানা, সহ-সভাপতি ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সঞ্জয় কান্ত দাস ও প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, দপ্তর সম্পাদক সালমান সিদ্দিকীসহ অনেকে।
অবস্থান কর্মসূচিতে রাখা বক্তব্যে সহ-সভাপতি ডা. জয়দীপ ভট্টাচার্য বলেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু করার পর থেকেই আমাদের সংগঠন তা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলে। এ পরীক্ষা শিশুর আনন্দময় শৈশবকে কেড়ে নিচ্ছে। আনন্দের সাথে শেখার মনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। গাইড-কোচিং নির্ভর এ পরীক্ষা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণকে তরান্বিত করছে। ভালো ফলের অসুস্থ প্রতিযোগিতায় প্রশ্ন ফাঁসের মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটেছে। যা শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতি বাড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের সংগঠন এ পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে জনমত তৈরি করে। সারাদেশে অবিভাবক-শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। সরকার ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেয়।
তিনি আরও বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছিল ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল হবে। কিন্তু আমরা সম্প্রতি দেখলাম, পূর্বঘোষিত সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সরকার এ বছর পরীক্ষাটি নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এর ওপর প্রাথমিক সমাপনীর মতো একটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলো। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। এই দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার সব থেকে ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে। শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার এই স্তরে বেশি। করোনা পরিস্থতিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্থ। তাই প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ মুক্ত পড়াশোনা এবং পাঠ মূল্যায়ন করা দরকার। যেন শিশুদের ওপর মানসিক চাপ না পড়ে। কিন্তু আমরা দেখলাম সরকার এই সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা দিয়েই প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। আমরা সরকারের এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষক- অভিভাবক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।