প্রিয় জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা - দৈনিকশিক্ষা

প্রিয় জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা

প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন |

সময় স্বল্পতার কারণে নিজ গ্রামে খুব একটা যাওয়া হয়ে উঠে না। কদাচিৎ যাওয়া হলেও সময়ের অভাবে বেশিদিন থাকা হয় না। ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে রাস্তায় ধুলোবালি, রাস্তার দুরাবস্তা, ট্রাফিক বিশৃঙ্খলা, রাস্তার উপর দোকানপাট, মানুষের হট্টগোল ইত্যাদি দেখে ভীষণ বিরক্তি অনুভব করি। প্রতিবারই ভাবি, আগামীবার যখন বাড়ি আসব হয়তো অবস্থার উন্নতি দেখব, কিন্তু উন্নতির বদলে দিনে দিনে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে! বেপরোয়া বাস চালক চোখের সামনে রিকশা বা অটো রিকশাকে ধাক্কা মেরে চলে যায়, ছোট্ট রাস্তা দিয়ে ৫ বা ১০ টন মালামাল নিয়ে ট্রাকগুলো চলাচল করে। ছোট্ট গাড়ির জন্য নতুনভাবে তৈরি করা রাস্তার বারটা বাজিয়ে দেয়, তাদেরকে আইনের আওতায় আনা কারোরই যেন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এটাই যেন স্বাভাবিক! আর এভাবেই চলছে দেশ, চলবে বহুদিন, কতদিন, কে জানে? তারপরও গ্রামের বাড়িতে যাই, কারণ এ-যে আমার জন্মভূমি, মাতৃভূমি, জননীরই মতন আপন!

গ্রামের বাড়িতে গেলে কয়েকটি বিষয় আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে, আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, মনকে আন্দোলিত করে। বিশেষ করে, প্রিয়জন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের সংস্পর্শ ও সান্নিধ্য, তাঁদের সাথে মন খুলে আড্ডা মারা, গল্প করা এ যেন আমার জন্য দারুণ মজার ব্যাপার! এসব আড্ডার আসরে আমি এক ধরনের আনন্দ খুঁজে পাই, কথায় কথায় সময় যে কখন চলে যায় টেরই পাই না। স্বজনদের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং তাঁদের উদার ও সহৃদয় আপ্যায়নে মুগ্ধ হই, সীমাহীন তৃপ্তি পাই। সবকিছুকেই খুব স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত মনে হয়। হবে না কেন, তাঁরা যে আমার অতি কাছের মানুষ, আপনজন, তাঁদের সাথে যে আমার রক্তের সম্পর্ক, হৃদয়ের বন্ধন, কোনো কিছুই এ বাঁধন টুটাতে পারে না। নাড়ির টানেই তো বাড়ি যাই, ফলে সাধারণ মানুষের সঙ্গ আমাকে অপরিসীম আনন্দ দেয়। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাতেই আমি বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তাঁদের আতিথেয়তা আমাকে দেয় এক স্বর্গীয় অনুভুতি যা প্রকাশ করার ভাষা আমার নেই। তাঁরাও আন্দোলিত, পুলকিত ও বিমোহিত হয়, শহরে থাকা মানুষদের জন্য কিছু করতে পেরে। বাঙালি সংস্কৃতির এটি একটি অপূর্ব বৈশিষ্ট্য বৈকি!

নানা রকমের দেশীয় খাবার আমার খুব ভালো লাগে, তৃপ্তি সহকারে খাই আর প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি। আমাদের থানা সদরে তৈরি ক্ষীর-দই-মিষ্টিও কোনো অংশে কম লোভনীয় নয় এবং দেশের সেরা ক্ষীর হিসেবে খ্যাত। যে ক’দিন থাকি, রয়ে-সয়ে খাই! আমার প্রিয় খাবারের তালিকায় আছে মলা মাছ, পাবদা মাছ, টেংরা মাছ, লাল চেউয়া, ছোট চিংড়ি দিয়ে লাউ, পুই শাক, মিষ্টি কুমড়া, কচুরলতি, কাঁচকলা দিয়ে ইলিশের ঝোল, বড় কৈ-এর দো-পেয়াজা, ভাজা পুটি ও খলিশা মাছ, কেচ্কি মাছের চচ্চড়ি, শিং মাছের ঝোল, তাজা তরিতরকারি, লালশাক, পুইশাক, ডাটাশাক,পালংশাক ইত্যাদি।

মজার ব্যাপার হলো, বাড়িতে পৌঁছালে ছোট বেলার নানান স্মৃতি মনে পড়ে যায়। যেমন: বিছানায় গেলে, মাথায় এলোমেলো বিচ্ছিন্ন ভাবনা এসে জট পাকায়। মাঝে মাঝে মনের ঘড়ির কাঁটা চলে যায় চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর পেছনে। আমি দশ বারো বছরের বালক, শুয়ে আছি আমাদের গ্রামের বাড়ির বাঁশের বেড়া আর কাঁচা মেঝের চারচালা টিনের ঘরের একটি ছোট্ট কামরায় থাকা শক্তকাঠের চকিতে। ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে বেড়ায়, দূর থেকে শোনা যায় বাইরের যাবতীয় চেচামেচির আওয়াজ। সরু আঁকা বাঁকা মেঠো পথ ধরে হাটবাজার শেষে দলে দলে গল্প করে মানুষজনের বাড়ি ফেরার স্মৃতি। ছোট বেলায় যে সকল দুরন্তপনা করে বেড়াতাম তা স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। যেমন - মার্বেল খেলা, কইট বাড়ি খেলা, গোল্লাছুট, দাড়িয়া বাঁধা, হা-ডু-ডু, ষোলগুটি, লুডু খেলা, নৌকা বাইচ, সাঁতার প্রতিযোগিতা, উঁচু গাছের ডাল বা ব্রিজ থেকে পানিতে লাফিয়ে পড়া, ইত্যাদি আজও আমাকে শৈশবে নিয়ে যায়।

সকাল বেলায় চাচাত-ফুফাত-খালাত-মামাত ভাইদের মাঝে এক ধরনের প্রতিযোগিতা হতো কে কার আগে আম, জাম, লিচু, গাব ইত্যাদি গাছে উঠে পাকা ফল খেতে পারবে। আবার দুপুর বেলায় বাতাবি লেবু, পেয়ারা, ডাব-নারিকেল, জামরুল, শরিফা ফল, ঢেউয়া ফল গাছে উঠে পেট ভরে খেয়ে গাছ থেকে নেমে আসতে পারে। ভাবতে থাকি বর্তমান প্রজম্ম কীভাবে এ বিষয়গুলো উপভোগ করছে? সেই মেঠো পথের দশাইবা কী রকম হয়েছে? সে পথ ধরে এখনো কি বাজার থেকে লোকজন গভীর রাতে গান গেয়ে গেয়ে বাড়ি ফিরে? এ প্রশ্নগুলো যখন তখন মনের মাঝে উঁকি মারে। জিজ্ঞেস করার মতো হাতের কাছে কাউকে খুঁজে পাই না। আপন মনে জবাব খুঁজতে গিয়ে ভাবি। হয়তোবা এখন আর বাজার ফেরত লোকজনের ওইভাবে জোরে জোরে গান গেয়ে বাড়ি ফেরার দরকার পড়ে না। কারণ ওইসব জায়গায় এখন আর রাতের বেলায় অন্ধকার থাকে না। পল্লী বিদ্যুতের বদৌলতে ওই রাস্তায় এখন সারারাত্র আলো ঝলমল করে। আগে যেমন ওখানে অন্ধকারে একদিকে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি পোকার মেলা বসতো এবং আরেক দিকে ওই একই জায়গা পরিণত হতো গা ছমছম করা ভয়াল এক পেত্নীপুরীতে। আর সেই আমাদের রাস্তার ওপরে এখন ফকফকা বিদ্যুৎ বাতির চারদিকে গিজগিজ করে হাজার জাতের কীটপতঙ্গ। পাখিরা ভীড় জমায়, উড়াউড়ি করা হরেক রকমের পোকা-মাকড় খাওয়ার জন্য।
 
বর্ষাকালে গ্রামের খালবিল পানিতে টইটুম্বুর হয়ে উঠে, ওই সময় মাঝি নাও বাইতে বাইতে ভাটিয়ালী সুরে গান গায় আর ফুটে থাকা শাপলা ফুল কুড়িয়ে লয়। শীতকালে লাঙ্গল কাঁধে কৃষকের দল দূরের কোনো মাঠে যেতে হয়তো গরম কালের গান গায়! কেহবা পল্লীগীতি বা দেশাত্ববোধক গান গেয়ে মনের শখ মিটায়। সে যা হউক আমাদের গ্রামের সেকালের ঘরগুলো এখন আর চোখে পড়ে না। সেখানে গড়ে উঠেছে পাকা দালান কোঠা। এতে অন্য সবাই খুশি হলেও আমি ততটা খুশি হতে পারছি না। দালান কোঠায় ফাঁক ফোকর নেই, দরজা জানালা বন্ধ করলে সে ঘরে আর আলো - বাতাস খেলে না। বাড়িতে বিদ্যুৎ এসেছে, তাই নতুন দালান ঘরে ফ্যান চলে, বাতি জ্বলে। এর মধ্যে অনেক ঘরে ফ্রিজ ও এসিও লাগানো হয়ে গেছে। শীতে বা গরমে বাহিরে গিয়ে ওয়াজ মাহফিল বা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ না করেও ইউটিউবের বদৌলতে তা ঘরে বসে উপভোগ করা যায়। পাকা ইমারত গরমকালে টিনের ঘরের মতো গরম হয় না এবং শীতকালে তেমন ঠান্ডাও হয় না। বা! কী মজা!

মজা যতই হোক না কেন, আমার আফসোসটা অন্যখানে। সুবিধাটা যত সহজ হোক না কেন, অসুবিধাটা কারো চোখে ধরা পড়েছে বলে মনে হয় না, কারো হৃদয় এতটুকু স্পর্শ করেছে বলেও মনে হয় না। শীতকালে দালান ঘরে চারদিক থেকে যেমন নির্মল কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া হু হু করে ঢুকে না। তেমনি পেছনের রাস্তা থেকে ভেসে আসে না অজানা অচেনা বাজার ফেরত গ্রাম্য কৃষক-কণ্ঠের সুমিষ্ট ভাটিয়ালী গানের সুর, যে সুরের মূর্চ্ছনায় ছোটবেলায় আমার গ্রামের ওই কাঁচা ঘরের শক্ত বিছানায় কাঁথার নিচে আমি বড় আরামের ঘুম ঘুমাতাম। স্কুল থেকে ফিরে তাজা ফলমূল খেতাম। এখন আমরা অনেক আধুনিক, এ আধুনিকতা আমাদেরকে দিয়েছে অনেক। আবার যা নিয়েছে, তাও কম নয়। যা দিয়েছে, তা টাকার অঙ্কে হিসেব করা যায়, কিন্তু যা নিয়েছে, তার কোনো পরিমাপ হয় না!

শহরে থাকলেও গ্রামের স্মৃতিকথা, প্রিয়জনদের কথা সব সময় মনে পড়ে। ছোটবেলার পড়ালেখা ও খেলা-ধুলার সাথীদের কথা ভাবি, সবার মঙ্গল কামনা করি। দূরে থাকলেও এলাকার প্রকাশিত খবরের কাগজের পাতায় চোখ বুলাই, একবার নয় বারবার। সকালে ঘুম ভাঙ্গে গ্রামের জনপদের খবর দেখে, ঘুমোতে যাওয়ার আগেও আরেকবার, গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গলেও বিছানায় শুয়ে শুয়ে সেল ফোনের পর্দায় ফেসবুক বন্ধুদের নানান প্রশ্নের জবাব দেই। যখন কোনো ভালো খবর দেখি তখন খুশি হই, মন আনন্দে নেচে ওঠে। যখন কোনো দুঃসংবাদ পড়ি তখন মনটা স্বাভাবিকভাবেই খারাপ হয়ে যায়। ভাবি কখনো শহর অনিরাপদ হয়ে পড়লে ঠাঁই পাব কোথায়?

মনে পড়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের কথা, আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। ঢাকায় শুরু হলো নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণ। তখন ঢাকায় বসবাসরত বেঁচে থাকা সকল আত্মীয়-স্বজন আশ্রয়ের জন্য গ্রামে ছুটে এসেছিলেন। আজও ভুলি নাই, সারা রাত পায়ে হেঁটে কীভাবে আমার অনেক আত্মীয়-স্বজনজীবন বাঁচাতে গ্রামে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন!

এ ছাড়াও আমার গ্রাম আমাকে কেবল আলো-হাওয়া দিয়ে লালন ও শুধু বড়ই করেনি, আমাকে দিয়েছেও অনেক কিছু!বিনিময়ে আমি জন্মভূমির প্রতি ঋণ শোধ করতে পারলাম কই? এ যন্ত্রণা আমাকে সবসময় তাড়া করে বেড়ায়। মনে হয়, যুগ যুগ ধরে এলাকা থেকে পালিয়ে এসে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছি। নিজের ভাগ্য কতটা গড়তে পেরেছি জানি না, তবে গ্রামের মানুষের ভাগ্য গড়ার মহৎ কাজে প্রিয় গ্রামবাসীর সঙ্গে আশানুরূপভাবে শামিল হতে পারিনি। আফসোস হয়, গ্রামে ফিরে গিয়ে গঠনমূলক কোনো কাজ করার সুযোগ বুঝি জীবনে আর আসবে না, পাব না, তবু গ্রামকে ভুলতে পারি না।

একবার আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে বেশ কয়েকটি পাখি ও কয়েক প্রকার ফুলের সন্ধান পেলাম।  ছেলেরা তাদের মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে সেগুলোর ছবি উঠিয়ে আমার কাছে নাম জানতে চেয়েছে। কিন্তু ভালো করে লক্ষ করে  দেখলাম, পাখিগুলো আগেও অনেকবার দেখেছি। অপূর্ব সুন্দর পাখি যারা ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। ছোট্ট পাখি, কুচকুচে কালো এবং উজ্জ্বল নীল রঙের ছোঁয়া, চমৎকার লাগছে! যেন কোনো শিল্পী তুলি দিয়ে আঁচড় মেরেছে কালো পাখিগুলোর ঘাড়ে ও পিঠে। কী সুখে তারা কোত্থেকে উড়ে এসে কোথায় যায়, কে জানে কোথায় তাদের গন্তব্য? কোনো গাছের গায়ে প্যাঁচিয়ে ওঠা জংলি লতায় বসে একাগ্রমনে তাজা ফুলের নির্যাস শুষে লয়!

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ইদানিং নানাভাবে অত্যাচার ও নির্যাতন চলছে। তারপরও লোকালয়ে এখনো সুন্দর টগবগে লতা গজায়; সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে নানান রকমের ফুল ফুটে; ফুলের বুকে মিষ্টিমধুর রসও জমে; এ-তো সব সুখের কথা, আনন্দের কথা! অনেক সুন্দর ঝলমলে পাখি বাংলাদেশের বাতাসে উড়ে বেড়ায়, গাছে গাছে বসে, ডালে ডালে লাফায়, গান গায়, ফুলের রস খায়, সে-ও তো সুখেরই গল্প, সুখেরই কাহিনী। ছবিটি দেখে আনন্দ পেয়েছি, উপভোগ করেছি। ছবিগুলো দেখে চোখ জুড়িয়েছে, হৃদয়-মন ভরেছে। এ সবই গ্রামবাংলার কথা বলে, কী অপরূপ আমার দেশ! কী সুন্দর আমার গ্রাম বাংলা!

জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় আমি গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথে খালিপায়ে লক্ষ্যহীনভাবে মাইলের পর মাইল হেঁটেছি, পাখির বাসা খুঁজেছি। ধান ক্ষেতের সরু আইল ধরে কাদাপানি মাড়িয়ে ঘুরেছি প্রজাপতি ও ফড়িং ধরব বলে। বেত বনে ঢুকেছি, বেত ফল খাওয়ার লোভে, কাঁটার খোঁচা খেয়ে রক্তাক্ত দেহে নিয়ে বেরিয়ে এসেছি, বেত ফলের থোকায় হাতও দিতে পারিনি। বন বাদাড়ে, বাংলার মাঠেঘাটে, ঝোপঝাড়ে নানান পাখি উড়ে বেড়ায়। লতাগুল্মে এমন রঙিন ফোটা ফুলকখনো গুরুত্ব দিয়ে দেখিনি। বাঙালি হয়ে, বাংলার আলো-হাওয়ায় বড় হয়ে, আমার দেশের এমন সুন্দর রূপ দেখার চেষ্টা করিনি, যা দেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ। হয়তো বা আমার দৃষ্টিতে সেই তীক্ষ্ণতা ছিল না, মনের উদারতায় ঘাটতি ছিল। তাই তো গ্রামীণ প্রকৃতির এত কাছে থেকেও বাংলাদেশের পূর্ণ অবয়ব আমি দেখতে পাইনি। এর চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে! এ হলো আমার আজকের দুঃখের কথা, দুঃখের গল্প!
 
তারচেয়ে বড় বেদনার ও হতাশার কথা-এমন সুন্দর এই পাখিগুলোর নামও আমি জানি না। এমন চোখ-জুড়ানো মন-ভুলানো ফুলগুলিও চিনি না! কেউ আমাকে শেখায়নি, আর আমিও শেখার চেষ্টা করিনি। তাই তো মনে প্রশ্ন জাগে, যে আমি আমার দেশের পাখি চিনি না, ফুলের নাম জানি না, সে আমি দেশকে কতটুকুই বা জানতে পেরেছি?

আপনারা হয়তো বলবেন, তা হলে আমার দুঃখটা কোথায়? আছে বৈকি, তবে সেটা আমার দুর্বল চিত্তের! বাংলাদেশে পরিচিত অপরিচিত অনেক পর্যটক আসতে দেখি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে পর্যটকেরা মুগ্ধ হয়েছেন। তাছাড়া এদেশের প্রত্মতাত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ, মিনার, পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত, পাহাড়, ম্যানগ্রোভ বন, চিরসবুজ অরণ্য,  জীববৈচিত্র্য ইত্যাদি রয়েছে।

বাংলাদেশের প্রত্যেকটি এলাকা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে মহিমাম্বিত। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হচ্ছে বাংলাদেশের কক্সবাজার। তারপরও আমি সুযোগ পেলেই বাহিরের দেশের কৃত্তিম সৌন্দর্য দেখার জন্য বা পরিবারের সদস্যদের দেখানোর জন্য নিজের দেশের টাকা খরচ করে বিদেশ পাড়ি জমাই। বড়ই দুংখের বিষয় নিজের দেশের পাখি, ফুল, ফল, জীববৈচিত্র্য চিনতে পারি নাই। গ্রামের সাধারণ মানুষ জীবন বাজী রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়ে যে টাকা (রেমিটেন্স) দেশের উন্নয়নের জন্য পাঠায় তার কতটুকুই বা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাই। এটা দৃশ্যমান যে আমরাবিদেশের মোহে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশের পাখি, ফুল, ফল, জীববৈচিত্র্য চিনতে গিয়ে দেশের অর্থ বিদেশে রেখে আসি। বিশ্লেষণ করে দেখা প্রয়োজন কতটুকু নিয়ে যাই আর বিনিময়ে কতটুকু পাই? পাঠকদের নিকট আমার প্রশ্ন হলো, আমরা কি পারি না নিজ জন্মভূমিকে পৃথিবীর সেরা আবাস ভূমি হিসেবে তৈরি করতে? 

লেখক : প্রফেসর ড. মো. লোকমান হোসেন, পরিচালক (গবেষণা ও তথ্যায়ন), নায়েম, ঢাকা।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063321590423584