প্রোভিসি বললেন, ‘কিসের বিদায়, আমি আবার আসছি’ - দৈনিকশিক্ষা

প্রোভিসি বললেন, ‘কিসের বিদায়, আমি আবার আসছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদমহলে তিনি ‘কাটপেস্ট অধ্যাপক’ হিসেবে পরিচিত। অনেক তদবির করে প্রেষণে অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি হয়েছিলেন। সেই মেয়াদ ৬ মে শেষ হয়। সহকর্মীরা বিদায় জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাফ বলে দিলেন, ‘কিসের বিদায়? আমি ফিরে আসছি ১ নম্বর পদেই।’

ঢাকার অদূরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়টিসহ বর্তমানে সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ শূন্য আছে। এগুলোর মধ্যে কোনোটি সর্বোচ্চ ৪ মাস ধরে শূন্য। আবার কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের একটি পদেও কেউ নেই। কোথাও উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ভারপ্রাপ্ত হিসাবে পরবর্তী সিনিয়র ডিন বা অধ্যাপক দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি মাসে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য হবে। আর ১৩ জুনের মধ্যে শূন্য হবে আরও তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদ। এছাড়া নতুন প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো উপাচার্য নিয়োগ করা হয়নি।

উপাচার্য হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ভারপ্রাপ্তরা সাধারণত রুটিন দায়িত্বের বাইরে মৌলিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থবিরতা নেমে আসে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে তাগিদ দিয়ে বলা হয়, ‘উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ-এই তিনটি পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের পদ শূন্য থাকায় প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কাজে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।’ প্রতিবেদনটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়েছে। এছাড়া সংসদেও উপস্থাপিত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উপাচার্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় অনেকটাই সুবিধাজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে কারণে পূর্ণকালীন উপাচার্যের শূন্যতা অনুভূত হয়নি কোথাও। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য নিয়োগ একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এ কারণে একটু বিলম্ব হচ্ছে। শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।’

দেশে বর্তমানে ৪৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এগুলোর মধ্যে ৩টির কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। বাকি ৪৬টির মধ্যে ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় চলছে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে অনুমোদিত তিনজনের প্যানেল থেকে এই চার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সিনেটে প্যানেল করা না গেলে জরুরি পরিস্থিতিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়েও সরকার অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করে থাকে। এর বাইরে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সরকার সরাসরি উপাচার্য নিয়োগ দেয়। প্রক্রিয়া অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় তিনজনের একটি প্যানেল তৈরি করে। এরপর ওই প্যানেলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয়। সেই প্যানেল থেকে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।

বর্তমানে উপাচার্য শূন্য থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলোর মধ্যে প্রথমটি গত ৪ জানুয়ারি, দ্বিতীয়টি ২৯ জানুয়ারি আর তৃতীয়টি ৩১ জানুয়ারি শূন্য হয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উপাচার্যসহ তিনপদের একটিতেও কেউ কর্মরত নেই। ডিন অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আছেন। ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পদ শূন্য হয়। তবে যথাসময়ে সেখানে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্যবিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান  বলেন, দায়িত্ব শেষ হওয়ার প্রায় আড়াই মাস আগে এ পদে নতুন উপাচার্য নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মতো সার্বক্ষণিক পদে যথাসময়ে নিয়োগ দেওয়া দরকার। না হলে নানান জটিলতার সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা থাকে। করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না থাকলে হয়তো বিষয়টি বোঝা যেত। জানা যায়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেনের মেয়াদ ১৯ মে শেষ হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের ১০ জুন এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর ১৩ জুন মেয়াদ শেষ হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্র জানিয়েছে, কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ানোর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে নারীঘটিত অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিব্রত। এ কারণে সৎ, নীতিবান এবং দক্ষ শিক্ষকদের নিয়োগের লক্ষ্যে সময় নেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ শূন্যপদে নিয়োগ পেতে সরকারপন্থি বেশকিছু অধ্যাপক লবিং-তদবির করছেন। তাদের কেউ স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে আবার কেউ জাতীয় নেতাদের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন কিংবা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র ও প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞাপনের একজন অধ্যাপক স্পীডবোট ভাড়া করে চাঁদপুর গেছেন কয়েকবার কিন্তু খুব পাত্তা পাননি। কারণ, এই অধাপকের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। তিনি অপর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ছিলেন। 

মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিনিয়র অধ্যাপকদের ১০ শতাংশকে নিয়ে সম্প্রতি একটি তালিকা করা হয়েছে। সেই তালিকা থেকে শিক্ষকরা বিবেচিত হয়েছেন।

ইউজিসির বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষের শূন্যপদ পূরণে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ শতাংশ সিনিয়র অধ্যাপককে নিয়ে গত বছর একটি পুল গঠন করা হয়েছে। তবে কেবল সিনিয়রিটির ভিত্তিতে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া ঠিক নয়। অভিজ্ঞতা, সংকট ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা, একাডেমিক এক্সিলেন্স, বিশেষ করে সততার দিকটি দেখে উপাচার্য নিয়োগ করা জরুরি। 

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0071530342102051