প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই ৬২ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে - দৈনিকশিক্ষা

প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই ৬২ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের সিংহভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। শিক্ষার্থীর তুলনায় ৬২ শতাংশ কলেজের আয়তন কম। নিয়মিত একাডেমিক কাউন্সিলের সভা হয় না বললেই চলে। 

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে এসব কথা জানা গেছে। অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) বারবার সতর্ক করার পরও বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজ অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে পদক্ষেপ নেয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী সপ্তাহে ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হতে যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শিশির মোড়ল।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ৭৩টি। এর মধ্যে শর্ত পূরণ না করায় ছয়টি মেডিকেল কলেজের নিবন্ধন স্থগিত রেখেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে এই মেডিকেল কলেজগুলো কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করালে তা বৈধ হবে না। এগুলো হলো ঢাকার নাইটিংগেল, আইচি, নর্দান ইন্টারন্যাশনাল ও কেয়ার মেডিকেল কলেজ, রাজশাহীর শাহমখদুম মেডিকেল কলেজ এবং রংপুরের নর্দান মেডিকেল কলেজ।

বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, ‘মেডিকেল কলেজগুলো অনুমতি পাওয়ার দু–চার বছরের মধ্যেও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালার শর্ত পূরণ করে না। তারা বারবার সময় চায়। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না।’

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কলেজ ভবন ও হাসপাতাল একই জায়গায় পৃথক ভবনে হতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মেডিকেল কলেজে তা নেই। ৪৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কলেজ ও হাসপাতাল একই ক্যাম্পাসে আছে বলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে।

শ্রেণিকক্ষ, লেকচার থিয়েটার, লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি—এ ধরনের অবকাঠামোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গার দরকার হয়। একজন শিক্ষার্থীর জন্য ২০০০ বর্গফুট জায়গাকে আদর্শ বলা হয়। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৬২ শতাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ওই পরিমাণ জায়গা নেই। অবশ্য ৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোনো তথ্য অধিদপ্তরে জমা দেয়নি। ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা এই শর্ত মেনে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে।

একটি মেডিকেল কলেজের জন্য হাসপাতালের আয়তন কী হবে, তা–ও ঠিক করা আছে। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বলছে, তাদের হাসপাতালের আয়তন শর্ত অনুযায়ী আছে।

হাসপাতালে রোগী নেই

মেডিকেল শিক্ষায় হাতে–কলমে শেখার গুরুত্ব অনেক বেশি। এই শেখার সুযোগ শিক্ষার্থীরা পান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শ্রেণিকক্ষে পাঠ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক শিক্ষা হয় হাসপাতালের রোগীদের কাছ থেকে।

৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে একটি মেডিকেল কলেজ চালু করতে হলে তার সঙ্গে ২৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল থাকার বাধ্যবাধ্যকতা রয়েছে। শিক্ষার্থী ১০০ হলে হাসপাতাল হতে হবে ৫০০ শয্যার। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থীর জন্য রোগী শয্যা হবে পাঁচটি। এ ক্ষেত্রে বলা আছে, হাসপাতালে ৭০ শতাংশ শয্যায় সব সময় রোগী থাকতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ শর্তটি হাসপাতালে মানা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ৬৮ শতাংশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭০ শতাংশ শয্যা রোগীতে পূর্ণ থাকে না। এমন হাসপাতালে আছে, যাদের রোগী থাকে মাত্র ১০ শতাংশ। দুটি কলেজের এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য ওয়াবসাইটে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে ২৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বলেছে, শর্ত অনুযায়ী তাদের হাসপাতালে রোগী থাকে। ঢাকার ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ বলেছে, তাদের হাসপাতালের শয্যা ১০০ শতাংশ রোগীতে পূর্ণ থাকে।
পরিচালনা সভা হয় না

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনার জন্য নিয়মিত সভা করার কথা আছে। একটি শিক্ষাবর্ষে চারটি গভর্নিং বডি বা পরিচালনা পরিষদের সভা হওয়ার কথা।
৭৩টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের একটিও এই শর্ত পূরণ করেনি। গত শিক্ষাবর্ষে শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজে একটি সভা হয়েছিল, এমন তথ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা রাস্তায়

সম্প্রতি ঢাকার আশুলিয়ায় নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজে গিয়েছিলেন এই প্রতিবেদক। কলেজে অধ্যক্ষ বা অন্য কোনো শিক্ষক ছিলেন না। দুজন কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁরা জানালেন, প্রথম থেকে পঞ্চম বর্ষ—এই পাঁচ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী মোট ৫৮ জন।

এই কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজে মাইগ্রেশনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছেন। তাঁরা একাধিকবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

তবে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন কেয়ার মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ৩৬ জন শিক্ষার্থী। এঁরা ২০১৫–১৬ শিক্ষাবর্ষে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের এই মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁরা ২০২১ সালের চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ২০২১ সালের ১ নভেম্বর থেকে তাঁদের ইন্টার্নশিপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই কলেজটির কোনো অনুমোদন নেই বিএমডিসির।

এঁদের একজন এস এম ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ভর্তির সময় জানতাম না যে কলেজটির অনুমোদন নেই।’ আফসানা মিমি নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের অন্য মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপের সুযোগ করে দেওয়া হোক। দেড় বছর হলো, আমাদের ব্যাপারে কেউ সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না।’ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের ভর্তির শুরুতে মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া উচিত।’

১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। একের পর এক কলেজ প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। কিন্তু বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অধিকাংশই শর্ত পূরণ করছে না। কেউ কেউ অনুমোদন বাতিল হওয়ার পরও ভর্তি করেছে। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে কখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কখনো আদালত ছাড় দিয়েছেন।

বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক মাহমুদ হাসান বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালন নীতিমালা আছে। তাতে কিছু শর্ত আছে। কিন্তু সেই শর্ত মানার বাধ্যবাধকথা নেই। আর নেই বলেই কেউ কেউ ইচ্ছামতো চলতে পারছেন।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043420791625977