বই প্রণয়নের বাজেট অনুমোদন হয়নি প্রাথমিক স্তরে - দৈনিকশিক্ষা

বই প্রণয়নের বাজেট অনুমোদন হয়নি প্রাথমিক স্তরে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রথমে সিদ্ধান্ত ছিল, প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ সাল থেকে সরাসরি চালু করা হবে। কিন্তু পরে বলা হয়, চলতি মাসের শুরু থেকে নির্ধারিতসংখ্যক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে। কিন্তু তা-ও করা যায়নি। নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমিয়ে আগামী মাসে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হবে। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।  

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  তবে বাস্তবায়নের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এসে জানা গেল, প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালুর করার জন্য বই-ই প্রণয়ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) প্রাথমিক শাখা। এমনকি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের জন্য বাজেট প্রস্তাবই অনুমোদন দেয়নি। এতে ফেব্রুয়ারিতেও প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর সম্ভাবনা নেই। তুলনামূলকভাবে মাধ্যমিকের কাজ এগিয়ে থাকলেও সেখানে আংশিক বই দিয়ে চালু করা হবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সব মিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। অথচ এই শিক্ষাক্রম নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্নের কথা বলে আসছিলেন শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। কিন্তু বাস্তবায়নের সময় দেখা যাচ্ছে, এ নিয়ে কথা বেশি হলেও আসল কাজটিই কম হচ্ছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত এনসিটিবির কর্মকর্তা ও বাইরের বিশেষজ্ঞরাও এখন বিরক্ত। এনসিটিবির কর্মকর্তা ও শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রাথমিকের বই তৈরিসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য এনসিটিবি এক মাস আগে গত ১৫ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বাজেট প্রস্তাব পাঠালেও এখনো তা অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। এতে তাঁরা বইও তৈরির কাজ করতে পারছেন না। এ ছাড়া আগে থেকেই এ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা চলছে।

মূল্যায়ন ও শিখনব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের কাজ কয়েক বছর ধরেই শুরু করেছিল এনসিটিবি। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০২০ সালের জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ২০২২ সাল থেকে বাস্তবায়ন শুরু হবে।

কিন্তু গত বছর এসে সেই সিদ্ধান্ত বাদ দিয়ে বলা হয়, চলতি মাস থেকে প্রথম শ্রেণি ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। প্রাথমিকে ১০০ এবং মাধ্যমিকে ১০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা শুরুর কথা। কিন্তু বাস্তবায়ন শুরুর একেবারে শেষ পর্যায়ে গত মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, জানুয়ারি নয়, ফেব্রুয়ারিতে ৬০টি করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা চালু করা হবে।

বিদ্যমান অবস্থায় ফেব্রুয়ারিতে প্রাথমিক স্তরে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা যাবে কি না, জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, এখনো তো পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করার জন্য বাজেট পাওয়া যায়নি। পাঠ্যপুস্তক না লিখে তো আর পরীক্ষামূলকভাবে শুরু করা যাচ্ছে না। তবে পরীক্ষামূলক চালুর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঠিক করা আছে।

আর এনসিটিবির চেয়ারম্যানের রুটিন দায়িত্বে থাকা এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান বলেন, তাঁরা তাঁদের (মাধ্যমিকের) কাজটি যথাযথভাবে করছেন। আর প্রাথমিকের কাজটি এনসিটিবির সদস্যের (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) নেতৃত্বে হচ্ছে। 

তবে চেয়ারম্যান হিসেবে যেহেতু একেবারে রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন, তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন না। প্রাথমিকে কী চ্যালেঞ্জ বা অসুবিধা আছে, তা নিয়ে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) যা বলবেন, সেটাই চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বক্তব্য।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম ঠিকমতো বাস্তবায়িত হলে শিক্ষায় পরীক্ষার চাপ কমে যেত। কারণ, পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূল্যায়নের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। আরও অনেক ভালো দিক রয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। কিন্তু প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের নতুন এই শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নের কাজটি সমন্বিতভাবে না হওয়ায় সমস্যা রয়েই যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্জন কোর কমিটির সদস্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, একসঙ্গে কাজটি করা গেলে একটি স্তর থেকে আরেকটি স্তরে উন্নয়নের অভিজ্ঞতাটি সুগম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ত। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষা উপকরণ তৈরির কাজ একসঙ্গে করতে পারলে শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রস্তাবিত যোগ্যতার ধারাবাহিক ক্রম বজায় রেখে কনটেন্ট বণ্টন ও বিষয়ের আন্তশ্রেণি সম্পর্ক বজায় রাখা সহজ হতো। এতে কাজের জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতাও কমত।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003831148147583