বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন বঙ্গবন্ধুই নন। তিনি ছিলেন বাংলার মানুষের মুক্তির দূত। শিক্ষা নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল সুদূরপ্রসারী। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি শিক্ষার মূল ভিত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতেন। শিশুদেরকে তিনি অনেক বেশি ভলোবাসতেন। প্রাথমিক শিক্ষা ও শিশু শিক্ষায় তার দর্শন ছিল অনুকরণীয়। তিনি সব সময়ই বলতেন, “শিশু হও, শিশুর মতো হও। শিশুর মতো হাসতে শেখো, দুনিয়ার ভালোবাসা পাবে”।
বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠ, ব্যক্তিত্ব তার অসিম বিক্রম সাহস, দুর্জয় আত্মবিশ্বাস, অপরিসীম ধৈর্য্য ও সহনশীলতা বিচার করলে দেখা যাবে তিনি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সারা বিশ্বের একজন সিংহপুরুষ। অথচ এই সিংহপুরষও কোনো কোনো সময় শিশুর মতো আচরণ করতেন। শিশুদের নিয়ে ভাবতেন, শিশুশিক্ষা নিয়ে ভাবতেন। এজন্য তিনি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-এ-খুদার নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কমিশনের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বলেন, “পুনর্গঠিত শিক্ষাব্যবস্থায় আমাদের সীমিত সম্পদের কথা স্মরণ রেখে কমিশন শিক্ষার এমন এক দীর্ঘ মেয়াদী রূপরেখা প্রণয়ন করবেন, যা শিক্ষা ক্ষেত্রে সার্থক ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার সাধনে সাহয্য করবে।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন এই কমিশন অন্তর্বর্তীকালীন রিপোর্ট ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে বঙ্গবন্ধুর হাতে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট পেশ করেন। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, শিক্ষার আলো না পেলে অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও ধর্মান্ধতার হাত থেকে মানুষের মুক্তি মিলবে
না। এজন্য সমাজকে অগ্রগতির পথে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষাকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দিতে হবে। সত্যিকারের শিক্ষিত লোক কারো দ্বারা প্রতারিত বা শোষিত হতে পারে না। এজন্যই তিনি অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য চাল-ডালসহ পুর্নাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা মূল্যে পোষাক প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন।
শুধু তাই নয়, প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ঘোষণা দিয়েছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী ৪৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগ এবং ১১ হাজার নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ১৫ হাজার নতুন বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কবলে ৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ’১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ায় তাঁর চিন্তা চেতনা ও কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করে যেতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্টদেরকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষার অগ্রযাত্রায় সামিল হওয়ার বিকল্প নেই।
লেখক : সুব্রত রায়, সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]