বাজেটের লক্ষ্য অর্জনে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা - দৈনিকশিক্ষা

বাজেটের লক্ষ্য অর্জনে দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা

মনোয়ার হোসেন |

রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া বাজেটের লক্ষ্য অর্জন বা উদ্দেশ্য হাসিল সম্ভব নয়। এটা গোটা বিশ্বে একটি প্রমাণিত বিষয়। কথাটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য যদি বাজেটটি কোনো রাজনৈতিক সরকার প্রণীত হয় এবং তার বাস্তবায়নও যদি একই সরকারের দায়িত্বে পড়ে।

বাজেট হচ্ছে একটি দেশের এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব বা দলিল। এই দলিল প্রায় এক বছরের কার্যক্রমের ফলাফল। একটি বাজেট ঘোষণার ১/২ মাস পর থেকেই পরবর্তী বছরের জন্য আরেকটি বাজেট প্রণয়নের কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে যায়। এই কারণেই বলা হয়, একটি বাজেট প্রায় এক বছরের খাটুনির ফল। 

একটি বাজেটে বর্ষব্যাপী খরচের হিসাব দেখানো ছাড়াও বাজেট বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অর্থ কোন্ খাত থেকে কি ভাবে আসবে তার বিষদ বিবরণ থাকে, আর থাকে আকস্মিক প্রয়োজন মেটাতে কি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বা নেয়া হতে পারে।

উল্লেখ্য, বাজেটের আয় এবং ব্যয় উভয়ই কিন্তু ‘এস্টিমেট’, তবে ব্যয় এস্টিমেট হলেও তুলনামূলকভাবে তা লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছে যায়।

বাজেটে একটি সরকারের রাজনৈতিক দর্শন এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সেই দর্শনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদক্ষেপ বিবৃত থাকে। যদি তা না থাকে তাহলে বুঝতে হবে বাজেটের কোনো রাজনৈতিক দর্শন নেই, অর্থাৎ সরকারের রাজনৈতিক দর্শন বলে কিছু নেই। সে ক্ষেত্রে বাজেট বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের একটি ফর্দ ছাড়া আর কিছু নয়। 

বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যতগুলো বাজেট প্রণিত হয়েছে তার প্রায় সবগুলোতেই সংশ্লিষ্ট সরকারের রাজনৈতিক দর্শন কম বা বেশী মাত্রায় প্রতিভাত হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী তিন বছরে বাজেটে ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক দর্শন স্পষ্টভাবে প্রতিভাত ছিলো। এর পরবর্তী কয়েক বছর বাজেটে রাজনৈতিক দর্শন ছিলো অস্পষ্ট। পরবর্তীতে বাজেটের অর্থনৈতিক লক্ষ্য (এখানে প্রবৃদ্ধি) নির্দিষ্ট রাখা হয় পুঁজিতান্ত্রিক আলোকে। এখনো তাই চলছে। 

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা পরবর্তী তিন বছরে বাজেট প্রস্তুত করা হতো সমাজতান্ত্রিক আলোকে। ওই সময়ের কোনো এক বছর প্রবৃদ্ধি ঘটেছিলো প্রায় ১০ শতাংশ। আজ পর্যন্ত কোনো বছরই এই মাত্রার প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি। 

জনমানুষের কাছে বাজেটের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত পদক্ষেপ। বাজেটে যে ব্যয় প্রস্তাবিত থাকে তা মেটাতে নতুনভাবে রাজস্ববৃদ্ধির জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ প্রস্তাব করা হয়, তা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের ওপরেই প্রভাব ফেলে। এই রাজস্ববৃদ্ধির দায়ভার প্রধানত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)কেই বহন করতে হয়। প্রতিবছরই রাজস্ব আহরণে ঘাটতি থাকে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। 

তবে দক্ষতা এবং কার্যকরভাবে রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে। এক, রাজস্ব বোর্ডের কাঠামোগত দুর্বলতা এবং দুই, পলিসিগত বা নীতিগত অষ্পষ্টতা। এই দুই ক্ষেত্রে যে দুর্বলতা রয়েছে তা অপসারণে এখন পর্যন্ত সঠিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে মতভেদ রয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রেই দুর্বলতা অপসারণে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। 

বলা বাহুল্য, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া জনগণের কল্যাণে প্রণীত বাজেটের লক্ষ্য সব সময়ই অধরা থেকে যায়। 

লেখক : মনোয়ার হোসেন, উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক আমাদের বার্তা

 

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073850154876709