বানরের দেহে বঙ্গভ্যাক্স টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন বিএমআরসিতে জমা দিয়েছে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড।
করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির লড়ইয়ে থাকা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান সোমবার এই প্রতিবেদন জমা দেয়। তারা এর আগে দাবি করেছিল, বানরের দেহে টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘ভালো’ ফল পাওয়া গেছে।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের কোয়ালিটি অ্যান্ড রেগুলেটরি বিভাগের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সোমবার বলেন, বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা কাউন্সিলের (বিএমআরসি) নির্দেশনা অনুসারে বানরের দেহে চালানো বঙ্গভ্যাক্স পরীক্ষার ফলাফল তারা দুপুরে জমা দিয়েছেন।
“এর মধ্য দিয়ে বিএমআরসির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পূর্বশর্তসহ সকল পর্যবেক্ষণের যথাযথ উওর দেওয়া শেষ হয়েছে,” বলেন তিনি।
এখন বিএমআরসি অনুমোদন দিলে নভেম্বরেই মানবদেহে এই টিকার পরীক্ষা শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদী গ্লোব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন।
যে কোনো টিকা তৈরির পর ধাপে ধাপে নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সর্বশেষ মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তা নির্দিষ্ট রোগ প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি তৈরিতে সফলতার মুখ দেখলে তা টিকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
এর আগে বাংলাদেশে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন এবং চীনের ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি অব দ্য চাইনিজ অ্যাকাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্স উদ্ভাবিত টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছিল বিএমআরসি। তবে কোনোটিরই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরুর খবর মেলেনি।
ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গ্লোব ফার্মার সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক দেশে করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর গত বছরের ২ জুলাই কোভিড টিকা তৈরির কাজ শুরুর কথা জানায়।
এরপর খরগোশের উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ‘সফল’ হয়েছেন দাবি করে মানবদেহেও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করতে গত জানুয়ারিতে বিএমআরসিতে আবেদন করেছিল গ্লোব বায়োটেক।
তখন বিএমআরসি বানর কিংবা শিম্পাঞ্জির উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে সংশোধিত আবেদন জমা দিতে বলে। তা মেনে ৫৬টি বানরের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এখন প্রতিবেদন দিল তারা।
ড. মহিউদ্দিন বলেন, “বানর আর মানুষের মধ্যে জিনগত বেশ মিল রয়েছে। আমরা খুবই আশাবাদী যে বঙ্গভ্যাক্স মানবদেহেও অনুরূপভাবে কাজ করবে। নৈতিক অনুমোদন পেলে নভেম্বরের মধ্যেই মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।”
বিএমআরসির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন সোমবার বলেন, গ্লোব বায়োটেকের প্রতিবেদন তারা পেয়েছেন। এখন তা যাচাই করে দেখবেন।
“আমরা এই ফলাফলটা দেখব। আমাদের বিভিন্ন রিভিউয়ার আছেন, তাদের কাছে পাঠিয়ে দেব। উনারা দেখার পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
কোভিড মহামারী মোকাবেলার লড়াইয়ে সারাবিশ্বেই টিকার চাহিদা বাড়ছে। ভারতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে টিকা তৈরি করেছে, যার প্রয়োগও হচ্ছে।
বাংলাদেশে টিকা কিনে নাগরিকদের দিচ্ছে, এছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও বিনামূল্যে টিকা পাচ্ছে। স্বীকৃত টিকার মধ্যে বাংলাদেশে এই পর্যন্ত প্রয়োগ হয়েছে চারটি টিকা। সেগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, চীনের সিনোফার্ম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মডার্নার টিকা।