করোনার দ্বিতীয় প্রবাহ আঘাত করেছে দেশে। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে। বাড়ছে মৃতদের সংখ্যাও। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যাতে কোনো ধরনের সংকট না হয় সেজন্য একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর একটি উদ্যোগ হলো করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় আগামী দুই মাস চিকিৎসকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষায় ছুটি মিলবে না। এ দুই মাস ছুটি অনুমোদন কার্যক্রমও বন্ধ থাকবে। কভিড-১৯ এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বিষয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন চিকিৎসকরা।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কভিড-১৯ এবং দাপ্তরিক কার্যক্রম বিষয়ে গত ২০ এপ্রিল একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বিষয়টি তদারক করবেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।
বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জানান, এ মুহূর্তে দেশে করোনাভাইরাসজনিত মহামারী চলছে। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সেবা অতি জরুরি। তাই এ সময়ে উচ্চশিক্ষাসহ দেশের বাইরে অন্যান্য ছুটি মঞ্জুর করার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে তা যথারীতি নিষ্পন্ন করা হবে।
লোকমান হোসেন মিয়া জানান, বিশ্বব্যাপী চলমান মহামারীতে বাংলাদেশও আক্রান্ত। মার্চের শুরু থেকেই প্রকৃত অর্থে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হানা দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর জন্য হাসপাতালগুলোয় বিদ্যমান শয্যা, অক্সিজেন ও আইসিইউসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানে কিছুটা সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সেজন্য এ সুবিধা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরে বাড়ানোয় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন হলো কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসা সুবিধা দিতে হবে। সে লক্ষ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সবার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। বৈঠকে তিনি আরো বলেন, সারা দেশের মানুষ এখন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের মানুষের সেবা করার এটিই উপযুক্ত সময়। তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমবিবিএস ডিগ্রি নেয়ার পর একজন চিকিৎসককে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হয়ে উঠতে আরো উচ্চশিক্ষা নিতে হয়। দেশে ডক্টর অব মেডিসিন (এমডি) ও মাস্টার্স অব সার্জারিসহ (এমএস) আরো কিছু কোর্স চালু আছে। তবে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত থাকায় অনেকেই ছুটি নিয়ে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যান। এসব কোর্স অতিক্রম করেই একজন চিকিৎসক নির্ধারিত বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। দক্ষতা অর্জন করতেও এসব বিষয়সহ আরো নানা বিষয়ে উচ্চশিক্ষা নিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। জনসংখ্যার অনুপাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংখ্যা কম। রোগীরা সাধারণত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামতের ওপর আস্থাশীল। এজন্যও চিকিৎসকরা উচ্চশিক্ষার্থে আগ্রহী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক জানান, এখন চিকিৎসকদের দেশেই সবচেয়ে বেশি দরকার। দেশের মানুষের সেবা করার এ রকম সুযোগ সবসময় মেলে না। আগামী দুই মাস বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে ছুটি নেয়ার সুযোগ বন্ধ থাকলেও তাতে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি অসুবিধা হওয়ার কথা না।