বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা যেতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নেয়া যেতে পারে পরীক্ষা - দৈনিকশিক্ষা

বিশেষ ব্যবস্থায় খোলা যেতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নেয়া যেতে পারে পরীক্ষা

অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্ |

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা না খোলা ও বিভিন্ন পরীক্ষা বিষয়ে অনেক রকম জল্পনা কল্পনা ও গুজব শোনা যাচ্ছে বেশ কিছু দিন ধরে। কেউ বলছেন, এখন কোনভাবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত হবে না। অনলাইন ক্লাস আরও জোরদার করা হোক। অনেক প্রতিষ্ঠানেই অনলাইন ক্লাস চলছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে বলা হচ্ছে, বলা হবে খুব সফল হচ্ছে অনলাইন ও টিভি-রেডিওর ক্লাস। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও চলছে অনলাইন ক্লাস। আমাদের এমন অনেক শ্রেণি শাখা আছে যেখানে শতভাগ ছাত্রী অনলাইন ক্লাসে ও পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ও নিচ্ছে। [iside-ad]

তার পরেও আমি বলবো, অনলাইন ক্লাস দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। বিশেষ করে আমাদের দেশের বাস্তবতায়। যেখানে গ্রামের লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও হাজার হাজার শিক্ষক ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে অবস্থিত। তাই আমি ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছি। কেননা, এই করোনার ভয়াবহ অবস্থা থেকে মানুষের পরিপূর্ণ মুক্তি কতদিনে মিলবে তা অনিশ্চিত। এতদিন তো আর ক্লাস-পরীক্ষা থেমে থাকতে পারে না। 

এ বিষয়ে গত ২৫ জুলাই দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত আমার বক্তব্যটি  ছিল নিম্নরূপ :

[রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভিভাবকদের অনেকেই জানতে চান, কবে স্কুল খুলবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগই স্কুল খোলার বিপক্ষে। আমার মনে হয়, যখন সব ধরনের অফিস-আদালত স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে তখনই স্কুল-কলেজ খোলার বিষয়টি ভাবা উচিত। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে বড় বিপদে পড়তে হবে। আর যখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয় তখন বড়দের প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে ছোটদের প্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।’] 

এরপর গত ০৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে একই পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানতে পারলাম, ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে। সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আমার সেই প্রস্তাবটির বিস্তারিত উপস্থাপন করছি। আমার বক্তব্য হচ্ছে, সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে খুলতে হবে এমন চিন্তাভাবনা যুক্তিযুক্ত নয়। কেননা, তা করতে গিয়ে যদি একসাথে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা করনায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে এবং আবার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করতে হয় তো সেটি হবে আমাদের জন্য চরম ব্যর্থতা ও বিপর্যয়! তাই আমার প্রস্তাব হচ্ছে, প্রথমে পিএইচডি, এমফিল ও মাস্টার্স ফোর্সের ক্লাস চালু করা হোক। কেননা, এসকল ক্লাসের শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষা করে এখনই  ক্লাসে আসার চেষ্টা করতে সক্ষম। একুশ দিন থেকে ত্রিশ দিন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে তাদের ক্লাস চলার পর যদি দেখা যায় করোনা পরিস্থিতির খুব বেশি অবনতি হয়নি তো স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে একইভাবে অনার্স ও পাসকোর্স এর ক্লাস চালু করা যেতে পারে।

সেক্ষেত্রে এমনও করা যেতে পারে যে, প্রথমদিকে কয়েক মাস সপ্তাহের একেকদিন একেক বর্ষের ক্লাস চলবে। অবস্থা বুঝে আবারও স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস চালু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রেও প্রথম দু'একমাস একদিন প্রথম বর্ষের ও অন্যদিন দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস চলতে পারে। অবস্থা সহনশীল থাকলে এরপর একইভাবে মাধ্যমিক এবং আরও দু'একমাস পরে প্রাথমিক স্তরের ক্লাস চালু করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রেও প্রথমদিকে সপ্তাহের একেকদিন একেক শ্রেণির ক্লাস চালাতে হবে। এভাবেই ৫-৬ মাসের মধ্যে আমাদের সকল স্তরের (স্নাতকোত্তর থেকে প্রাথমিক পর্যন্ত) সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। কোন ধাপে গিয়ে অবস্থা খারাপ মনে হলে পরের ধাপে আর না এগোয়ে সেখানে কিছুদিন দেরি করা যেতে পারে বা পিছনে যেয়ে আরো সময় ও প্রস্তুতি নিয়ে আবার সামনে আসা যেতে পারে। এভাবে স্লো এন্ড স্ট্রিটি পদ্ধতিতে সকল স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে আরও কিছুটা বেশি সময় লাগলেও করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে এবং উপরের স্তরের ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যাবে। অপরদিকে মেডিকেল কলেজ ও নার্সিং কলেজের শিক্ষক শিক্ষার্থী উভয়ই অন্যদের তুলনায় অধিক স্বাস্থ্য বিধি জানেন ও মানেন। এসব প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্ষভিত্তিক ক্লাসের জন্য সাপ্তাহিক বা মাসিক বিশেষ রুটিন তৈরি করে এখনই খুলে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা উচিত।

তবে এই বিশেষ পরিস্থিতিতে চলু করা সকল পর্যায়ের ক্লাসসমূহে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রেও শিথিলতা দেখাতে হবে কিছুদিন। সেক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ ক্লাসে উপস্থিত থাকলেই একজন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য বিবেচনা করা যেতে পারে।
                  
এছাড়া পরীক্ষা বিহীন অটোপাস দেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছেন কেউ কেউ। আমি মনে করি তা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। আগেও বলেছি, আবারও বলছি, প্রয়োজনে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত নিতে হলেও বিশেষ ব্যবস্থায় একটা পরীক্ষা নিয়ে ফলাফলের ভিত্তিতেই উপরের ক্লাসে প্রমোশন দেওয়া উচিত। পিইসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাসহ সকল বোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমাল পরীক্ষাগুলো না হওয়ার কারণে থেমে আছে এসব পরীক্ষার্থীদের জীবন। তারা এখন আর লেখাপড়ায় মনোযোগী নেই। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আমার ভাইপো রসিকতা করে বলে, আমি এখন ইন্টারমিডিয়েট থার্ড ইয়ারে পড়ি। কোন ইয়ার পর্যন্ত এই ক্লাসে থাকতে হবে তাতো জানিনা।

তাই এখন আর লেখাপড়া করিনা। এই অবস্থাটি কিন্তু আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক! এটি চলতে দেওয়া যায় না অনন্ত কাল। এসব পরীক্ষা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এখন তো বিশেষ ছুটির কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফাঁকা। পরীক্ষা কেন্দ্র গুলোর নিকটবর্তী অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভেনু দিয়ে এক বেঞ্চিতে একজন করে বসিয়ে স্বাস্থ্য  বিধি মেনে বিশেষ রুটিন দিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখার প্রস্তাব আগেও দিয়েছি, আবারও দিচ্ছি। সকল স্তরের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস খুলার পরে নয়, বরং আগেই সেইসব ফাঁকা প্রতিষ্ঠানগুলো ভেনু করে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া অধিক নিরাপদ হবে বলে আমি মনে করি।         

মনে রাখতে হবে, করোনার সফল ঔষধ বা ভেক্সিন আবিষ্কার হবার পরেও তা সবার নাগালে আসতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে। তাই সর্বক্ষেত্রে আমাদের নিজস্ব শক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেই এখন এগিয়ে যেতে হবে সাধ্যমতো। অন্য অনেক দেশের তুলনায় আমরা তা পারছি এবং পারবো ইনশাল্লাহ্। 

লেখক :  মো. রহমত উল্লাহ্ , সাহিত্যিক ও কলাম লেখক এবং অধ্যক্ষ - কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ,  মোহাম্মদপুর, ঢাকা।                                                                                                                                                               

 

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035789012908936