পারলেন না লিয়োনেল মেসি। পারলেন না দলকে জেতাতে। তিনি নিজে গোল করলেও হেরে গেল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হেরে গেলেন মেসিরা। সৌদির রক্ষণে বার বার আটকে গেলেন মেসি, দি মারিয়ারা। অনবদ্য সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁকে টপকাতে পারলেন না আর্জেন্টিনার স্ট্রাইকাররা। নিজেদের সবটা নিংড়ে দিলেন সৌদির ফুটবলাররা। বুঝিয়ে দিলেন, নাম নয়, মাঠে নেমে খেলাটাই আসল।
তবে এটাই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হেরে শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। তার মধ্যে এক বার তারা উঠেছে ফাইনালেও।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বকাপে রানার্স হয়েছিল আর্জেন্টিনা। তার পরে ১৯৩৪ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ২-৩ হেরে বিদায় নেয় তারা। সে বার শুরু থেকেই নকআউটে খেলা হয়। আর্জেন্টিনা হারে প্রথম ম্যাচেই। এর পর ১৯৫০ এবং ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দেও প্রথম ম্যাচেই পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-৩ গোলে হারে তারা।
১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম ম্যাচে পোল্যান্ডের কাছে ২-৩ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। এরপর ১৯৮২ বিশ্বকাপে তারা প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের কাছে ০-১ ব্যবধানে হারে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে দিয়েগো মারাদোনার সৌজন্যে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ট্রফিজয়ের দাবিদার হিসাবে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সে বার ক্যামেরুনের কাছে প্রথম ম্যাচে ০-১ গোলে হারে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেই হারের ধাক্কা সামলে একের পর এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যান ম্যারাডোনারা। গত বার তারা প্রথম ম্যাচে ড্র করেছিল আইসল্যান্ডের বিপক্ষে।
মঙ্গলবার ম্যাচের শুরুটা ভাল করে আর্জেন্টিনা। নিজেদের মধ্যে বল ধরে ছোট ছোট পাসে উঠছিলেন মেসিরা। তার ফলে সুযোগও তৈরি হয়। প্রথম ২ মিনিটের মধ্যেই এগিয়ে যেতে পারত আর্জেন্টিনা। ডান প্রান্তে বল পেয়ে বক্সের কাছে এসে লাউতারো মার্তিনেজের দিকে বাড়ান দি মারিয়া। মার্তিনেজের ব্যাক হিল ধরে বাঁ পায়ের মাটি ঘেঁষা শটে গোল করার চেষ্টা করেন মেসি। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচিয়ে দেন সৌদির গোলরক্ষক।
তাতে অবশ্য গোল পেতে সমস্যা হয়নি আর্জেন্টিনার। খেলা শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন মেসি। পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি। ভার প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পেনাল্টি দেন রেফারি। গোল করতে কোনও ভুল করেননি মেসি। প্রথমার্ধে আরও তিনটি গোল করতে পারত আর্জেন্টিনা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেগুলি। প্রথমে ২২ মিনিটের মাথায় সৌদি আরবের জালে বল জড়ান মেসি। কিন্তু লাইন্সম্যান অফসাইডের পতাকা তোলেন। মেসির উদ্দেশে যখন বল বাড়ানো হয়েছিল, তখনই অল্পের জন্য অফসাইডের ফাঁদে ছিলেন তিনি।
পাঁচ মিনিট পরে আরও এক বার গোলে বল জড়ায় আর্জেন্টিনা। এ বার গোল করেন লাউতারো মার্তিনেজ। প্রথমে গোল দিয়ে দেন রেফারি। কিন্তু পরে ভার প্রযুক্তির সাহায্যে দেখা যায় অফসাইডে ছিলেন মার্তিনেজ। তাই গোল বাতিল হয়। একটু গা-জোয়ারি ফুটবল খেলছিল সৌদি আরব। মেসিকে জোনাল মার্কিংয়ে রাখার চেষ্টা করছিল তারা। তাই বার বার জায়গা বদল করে খেলছিলেন মেসি। ৩৪ মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে আবার গোল করেন মার্তিনেজ। কিন্তু সেটিও অফসাইডের কারণে বাতিল করেন রেফারি। প্রথমার্ধেই অফসাইডের কারণে আর্জেন্টিনার তিনটি গোল বাতিল হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় খেলার ছবি। প্রথম ১০ মিনিটেই জোড়া গোল করে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। আর্জেন্টিনার রক্ষণের ভুলে ৪৮ মিনিটের মাথায় গোল করেন সালে আলশেহরি। সমতা ফেরায় সৌদি আরব। গোল করার পরে খেলার ধরন পুরোপুরি বদলে যায় সৌদির। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে তারা। প্রথম গোল খাওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় গোল খায় আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের দুরন্ত শটে গোল করেন সালেম আলদাওশারি। ১-২ গোলে পিছিয়ে পড়েন মেসিরা।
গোল শোধ করার অনেক চেষ্টা করছিল আর্জেন্টিনা। বার বার সৌদির অর্ধে উঠে আসছিল তারা। কিন্তু গোলের মুখ খুলছিল না। সৌদির ফুটবলারদের সঙ্গে শারীরিক লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়ছিল আর্জেন্টিনা। গোলের নীচে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন সৌদির গোলরক্ষক আলওয়াইসি। বেশ কয়েকটি ভাল শট বাঁচান তিনি। শেষ পর্যন্ত হেরে মাঠ ছাড়তে হয় মেসিদের।