ভারতই বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে - ফাইনালের আগে এমনটা ধরে নেওয়া মানুষের অভাব ছিল না। আহমেদাবাদে ১ লাখ ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের গ্যালারির নীল সমুদ্র বিশ্বজয় উদ্যাপনের প্রস্তুতি নিয়েই সেদিন গিয়েছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এই পুরো গ্যালারিতে ম্যাচ শেষে নামিয়ে এনেছে 'লাইব্রেরি'র নিস্তব্ধতা!
ভারতের জন্য অনেক হতাশার সেই ফাইনালের পর ভারতেরই কেউ যদি উদ্যাপন করে, কেমন লাগতে পারে ভারতীয়দের, সেটা সহজেই অনুমান করে নেওয়া যায়। তাই বলে এমন কাউকে গ্রেফতার হতে হবে! আশ্চর্য হলেও সত্যি, কাশ্মীরে এমনটাই ঘটেছে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের হার উদ্যাপনের কারণে 'সন্ত্রাসীবিরোধী' আইনের আওতায় সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার পুলিশ জানিয়েছে, 'ভারতবিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং তাদের সঙ্গে একমত পোষণ না করা যে কাউকে ভয়ভীতি দেখানোর' কারণে এই সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে!
গত ১৯ নভেম্বর ফাইনালে ভারতকে ২৪০ রানে আটকে দিয়ে অস্ট্রেলিয়া সে রান পেরিয়ে গেছে ৬ উইকেট ও ৪২ বল হাতে রেখে। সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ জেতার রেকর্ড তো আরও আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার, সংখ্যাটাকে ৬-এ নিয়ে গেছে প্যাট কামিন্সের দল। ভারতের তৃতীয় বিশ্বকাপের স্বপ্ন অধরা থেকে গেল আরেকবার। অস্ট্রেলিয়ার ছয় শিরোপার পর দুটির বেশি শিরোপা নেই কোনো দলের।
পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সাত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী কাশ্মীরের বাইরে থেকে সেখানে পড়তে গেছেন বলে জানাচ্ছে পুলিশ।
'আমার নিজের দেশকেই সমর্থন জানানোর কারণে ওরা আমাকে গালাগালি শুরু করে। হুমকি দিতে শুরু করে যে, আমি চুপ না করলে আমাকে গুলি করবে' - পুলিশের কেইস ফাইলে অভিযোগকারীকে উদ্ধৃত করে লেখা আছে, যা সংবাদসংস্থা এএফপির চোখে পড়েছে।
শিক্ষার্থীদের যে আইনের আওতায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সেই 'আইনবিরুদ্ধ কার্যক্রম প্রতিরোধ আইন' (ইউএপিএ)-কে অনেক কঠোর আইন বলেই মানা হয়। ভারত
সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষ, সাংবাদিক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনে সরকার এই আইনটি কাজে লাগায়। এই আইনের ধারাগুলো স্পষ্ট নয় বলেও অভিযোগ আছে। এই আইনের অধীনে চার্জ আনার আগেই গ্রেফতারকৃতদের ছয় মাস আটকে রাখার সুযোগ আছে, জামিন পাওয়াও কার্যত অসম্ভব।অবশ্য ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতবিরোধীতার ছাপ পড়ে ক্রিকেটেও। অনেক সময়ই ভারতের প্রতিপক্ষ যে দলই থাকুক না কেন, তাদেরই সমর্থন দেয় কাশ্মীরের অনেক মানুষ। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার জয়ের পর শ্রীনগরে আতশবাজি পোড়ানো হয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে ভারতের হারের পর উদ্যাপনের অভিযোগে সেখানকার পুলিশ ছয়জনকে আটক করে, ইউএপিএ আইনের অধীনে তদন্ত শুরু করে আরও শত শত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।
তবে এবার সাত ছাত্রকে গ্রেফতারের ব্যাখ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'এক্স'-এ (সাবেক টুইটার) পুলিশ জানিয়েছে, নিজেদের পছন্দের দলকে সমর্থনের দায়ে নয়, বরং 'ভারতের পক্ষে বা পাকিস্তানবিরোধী মনোভাবের কাউকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের' কারণেই এই গ্রেফতার ।