করোনার প্রকোপ থেকে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে, গত ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরই মধ্যে কেটে গেছে পাঁচ মাসেরও অধিক সময়। করোনা দেশ থেকে যায়নি কিন্তু জীবন-জীবিকার তাগিদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে প্রায় সবকিছুই পূর্বের মতো সচল করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। বড়দের থেকে পর্যায়ক্রমে, অর্থাত্ সবার আগে খোলা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ভ্যাকসিন আসার আগে যেহেতু করোনা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়, শুধু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তাই ভ্যাকসিন আসার আগে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে হয়, তাহলে সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সকল অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা আছে, যেগুলোতে করোনাঝুঁকি বাড়াবে, সেগুলোর সমাধান করা জরুরি। বৃহস্পতিবার (২০ আগষ্ট) ইত্তেফাক পত্রিকার এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন সাইদুর রহমান।
নিবন্ধে আরও জানা যায়, ক্লাসরুমের স্বল্পতা, হলগুলোতে সিট সংকট, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোতে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হয় এগুলো দূর করতে হবে, পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নতুন করে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে, করোনার ভয়াবহতা এবং আমাদের বিদ্যমান অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় খুললে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। এমনকি প্রাণহানির ঝুঁকিও থাকবে। তবে এটা ঠিক যে আমরা কোথাও নিরাপদ নই। করোনা এখন সারা দেশেই ছড়িয়ে গেছে। তথাপিও করোনার ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় খোলা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হবে।
তবে যদি একান্ত প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেই হয়, তাহলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে, ঝুঁকি হ্রাস করার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। সেজন্য যা করতে হবে : প্রথমত, হলগুলো থেকে বহিরাগত, অছাত্র বের করতে হবে। এতে গণরুমে থাকা শিক্ষার্থীদের সিটের ব্যবস্থা করা সম্ভব। বিলোপ হবে গণরুম প্রথা। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সীমানা লকডাউন করতে হবে। প্রবেশ পথগুলোতে ব্যারিকেড দিতে হবে। যেন কোনোভাবেই বাইরের যান চলাচল এবং বহিরাগতদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র না হয়। তৃতীয়ত, ক্লাসগুলোতে সেকশন ডাবল করতে হবে।
এতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ক্লাস করা সম্ভব হবে। চতুর্থত, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, টিএসসি বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ রুমে পড়াশোনা করবে, টিএসসি বন্ধ থাকলে জমায়েত বন্ধ হবে। পঞ্চমত, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে এক থেকে দুইটা পিসিআর ল্যাব স্থাপন করতে হবে। যেখানে যে কেউ ইচ্ছা করলেই করোনা পরীক্ষা করাতে পারবে। ষষ্ঠত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটা অস্থায়ী আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করতে হবে। কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সকল ওষুধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরবরাহ করার ব্যবস্থা করতে হবে। সপ্তমত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১০০% আবাসিক না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বাইরে থেকে এসে ক্লাস করেন, বাসগুলোর ট্রিপ ডাবল করতে হবে। যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাই যাওয়া-আসা করতে পারে।
আরো যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে, সন্ধ্যার পরপরই সব হল লক করে দিতে হবে। কেউ বাইরে গিয়ে খেতে পারবে না। সকল ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে ক্যাম্পাসে। ক্যান্টিন, ডাইনিংগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি আরোপ, এক হলের স্টুডেন্ট অন্য হলে যেতে পারবে না। আপাতত কারো গেস্ট আসবে না, সর্বোপরি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে হবে। মাস্কবিহীন কেউ ক্লাস, ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না।
দেশে এখনো প্রতিদিন ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাই হয়তো এখনই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা ঠিক হবে না। সব বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে, কিন্তু এখনো অংশগ্রহণমূলক হয়নি। অনলাইন ক্লাসকে কীভাবে বাস্তবসম্মত করা যায় এদিকেই যদি আমরা বেশি নজর দেই তাহলেই মনে হয় ভালো হবে।
গত ৯ আগস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে, আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে যে সকল শিক্ষার্থীর ডিভাইস নেই তাদের নির্ভুল তালিকা চেয়েছে আর গতকাল দেখলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছে তার ৩০ জিবি ডাটা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অনলাইন ক্লাসের প্রধান দুটি বাধা অনেক শিক্ষার্থীর ডিভাইস না থাকা এবং ইন্টারনেট ডাটা না কিনতে পারা। এই দুটো সমস্যার সমাধান করতে পারলে অনলাইন ক্লাস অংশগ্রহণমূলক হবে।
লেখক :মো. শহীদুল ইসলাম,শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়