ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে শুক্রবার। এ ধারাবাহিকতায় ৪ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও (রাবি) ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা।
এ বছর ঢাবি ভর্তি পরীক্ষায় কিছুটা পরিবর্তন চোখে পড়েছে। ঢাবি ক্যাম্পাস ছাড়াও দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন, যা বলাই বাহুল্য। কোনো কোনো মহলের আন্তরিকতা সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর উদ্যোগ সফল না হওয়ার কারণ মূলত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অসহযোগিতা।
জানা গেছে, এর পেছনে রয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ। প্রতিবছর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষ্যে উচ্চমূল্যে ফরম বিক্রিসহ নানা রকম ডিউটি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও অন্যান্য কাজে শিক্ষকরা মোটা অঙ্কের অর্থ রোজগার করেন। কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা হলে অর্থ আয়ের এ পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে- এ আশঙ্কায় নাকি অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দেওয়া হচ্ছে না।
প্রতিবছর স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি ও হয়রানির পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের অর্থও খরচ হয়। ইতঃপূর্বে ইউজিসির পক্ষ থেকে ভর্তি পরীক্ষার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছিল, শুধু ভর্তি পরীক্ষা বাবদ প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে গড়ে ৯০ হাজার টাকার মতো ব্যয় করতে হয়। অথচ ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বছরের পর বছর শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের এ ধরনের ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা বিরাজ করায় একদিকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়ছেন, অন্যদিকে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোচিং ব্যবসার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হলে পদ্ধতিগত জটিলতার অবসান ঘটিয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন জরুরি।
একটিমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সরকারি-বেসরকারি শতাধিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসে ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও একই পদ্ধতির আওতায় আনতে সমস্যা কোথায়? আমরা আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অভিন্ন ভর্তি পরীক্ষা চালুর ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেবে এবং এ লক্ষ্যে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবে।
অপ্রিয় হলেও সত্য, দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অপ্রতুল। ফলে প্রতিবছর দেখা যায়, গুটিকয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘিরে শিক্ষার্থীদের ভিড় লেগে আছে। দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসারের পাশাপাশি ভালো ও মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাব ও ভর্তি সংকটের সুযোগে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত শাখা বা ক্যাম্পাস গড়ে উঠতে দেখা যায়।
প্রাইভেট টিউশনি, কোচিং সেন্টার ইত্যাদির পর শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বাণিজ্যধারায় সর্বশেষ যুক্ত হওয়া দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় এনে অভিন্ন পদ্ধতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে, এটাই প্রত্যাশা।