বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার দাবি কেন জোরালো হচ্ছে? - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার দাবি কেন জোরালো হচ্ছে?

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে সরব হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৫ মার্চ থেকে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই নিজ বাড়িতে চলে যান।

সম্প্রতি স্থানীয়দের সঙ্গে বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়েছে। এর পর শিক্ষার্থীদের মাঝে হল খোলার দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। তবে, কেউ কেউ মনে করছেন বিসিএস পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য হল ও লাইব্রেরি ব্যবহার করেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধ থাকায় তা ব্যহত হচ্ছে।  এদিকে বিসিএস পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করছে পিএসসি। আবার পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি ও পার্টটাইম চাকরি করেও পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন অনেক শিক্ষার্থী। হল বন্ধ থাকায়  এসব ব্যাহত হচ্ছে। 

এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে কথা বলেছেন মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ। বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে যে শিক্ষার্থীরা থাকেন, তাদের করোনার টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। টিকা দেওয়া সম্পন্ন হলেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হতে পারে।

তবে কবে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি অধ্যাপক বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, খোলার সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয়ভাবে নেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলোচনার পর খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২৩ ফেব্রুয়ারি ইউজিসি এ বিষয়ে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ বিবেচনায় টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

করোনা মহামারির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ২৫ মার্চ থেকে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর পর শিক্ষার্থীদের প্রায় সবাই নিজ বাড়িতে চলে যান।

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সে সময়ে তারা মনে করেছিলেন অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আবার হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। অনেকে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও রেখে যান। তবে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়তে থাকলে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েন। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ায় একদিকে সেশনজট, অন্যদিকে আর্থিক চাপেও পড়ে যান বহু শিক্ষার্থী। টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরিসহ নানা কাজ করে অনেকে পড়াশোনার ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন।

আবার কেউ কেউ নিজ পরিবারকেও আর্থিক সহায়তা দেন। এই শিক্ষার্থীদের বড় অংশই পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে এসে মেস ভাড়া করে থাকতে শুরু করেন। এতে তাদের বিপুল আর্থিক খরচ হচ্ছে। পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক নানা জটিলতাও বাড়ছে।

আবাসিক হল খোলার দাবিতে গতকাল রোববার রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা শনিবার তালা ভেঙে হলে ঢুকলেও ছাত্রীরা ঢুকতে পারেননি। ছাত্রী হলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য আজ সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। না হলে তারাও তালা ভেঙে হলে ঢুকে পড়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন।

অন্যদিকে, আজ সকাল ১১টার মধ্যে খুলে দেওয়া না হলে নিজেরাই হল খুলে ভেতরে ঢোকার আলটিমেটাম দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আবাসিক হল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরাও। গতকাল রোববার সকাল ১১টায় ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শতাধিক শিক্ষার্থী।

শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসও খোলা আছে, পরীক্ষাও হচ্ছে। বাসে ঠাসাসাসি করে এসে তারা এক বেঞ্চে একজন করে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের আশপাশে বাসা বা মেসও পর্যাপ্ত নেই। মেসে গাদাগাদি করে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই তাদের থাকতে হচ্ছে।

হল-ক্যাম্পাস খোলার দাবিতে গতকাল আন্দোলনমুখর ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। শিক্ষার্থীরা এর আগেও বেশ কয়েকবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বরাবর দু'বার স্মারকলিপিও দিয়েছেন। তবে প্রশাসন বরাবরই বলে আসছে, সরকারের নির্দেশনা ছাড়া হল ও ক্যাম্পাস খোলা সম্ভব নয়।

হল খোলার বিষয়ে মন্তব্য চাইলে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা কিছু বলতে রাজি হননি। তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, হল ও ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এ বিষয়ে উপাচার্য প্রশাসনের জরুরি মিটিং ডেকেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উপাচার্য বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বাদে দেশের বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেই অর্থে স্বায়ত্তশাসিত নয়। তাই সার্বিক বড় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাদের সরকারের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। হল খোলার মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত উপাচার্যের একার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।

এক বছর হলের বাইরে, সংকটে শিক্ষার্থীরা :রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান। সম্প্রতি তার মাস্টার্স পরীক্ষা শুরু হয়েছে। তিনি এখন একটি ছাত্রাবাসে থাকছেন। তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনাকালের বাস্তবতায় ছাত্রাবাসের ভাড়া আর্থিক সক্ষমতার বাইরে। এ ছাড়া নিরাপত্তা সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত  মৈত্রী হলে থেকে থেকে রাজধানীর একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিপণিবিতানে খণ্ডকালীন চাকরি করে পড়াশোনার খরচ জুগিয়ে আসছিলেন উম্মে হাবিবা। তিনি দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, হল খালি করে দেওয়ার পর দু'মাস গ্রামে ছিলেন। তার বাবা নেই, মা ও ছোট দুটি ভাই তার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তিনি বাধ্য হয়ে ফার্মগেটের একটি ছাত্রী হোস্টেলে থাকছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য হল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ১৩ মার্চ থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেওয়া হবে। গত ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হল খোলার দুই সপ্তাহের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, মাস্টার্স কিংবা অনার্সের যেই সেমিস্টারের পরীক্ষা আগে হবে, তা নির্ধারণের পর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আগে হলে তোলা হবে। এর দুই সপ্তাহ পর পরীক্ষা শুরু হবে। তবে যেসব বিভাগ ইতোমধ্যে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করেছে, তাদের পরীক্ষা নিতে বাধা নেই।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্যাহ বলেন, দেশের সবকিছু প্রায় আগের মতো চললেও শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে আছে। এতে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এর ফলে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যাও করেছেন। এ ছাড়া বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর হল খোলার দাবি আরও বেগবান হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হল খোলার দাবি যৌক্তিক।

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেন নষ্ট না হয়, এ বিষয়ে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য অতি দ্রুত সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল ও ক্যাম্পাস যেন খুলে দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রানা আহম্মেদ দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, 'পরীক্ষার কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন ক্যাম্পাসে চলে এসেছে। এ ছাড়া চাকরির পড়ার কারণেও অনেকেই ক্যাম্পাসে এসেছে। হল বন্ধ থাকায় বাইরে থাকতে হচ্ছে তাদের। বাইরে থাকা-খাওয়া অনেক টাকার ব্যাপার। করোনার কারণে টিউশনিও বন্ধ। তাই হল খুলে দিলে অন্তত বাইরে থাকার ভাড়া নিয়ে চিন্তা করতে হতো না।'

ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004072904586792