বিসর্গের দুঃখ - দৈনিকশিক্ষা

বিসর্গের দুঃখ

মো. রহমত উল্লাহ্ |

আমরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছি আমাদের মাতৃভাষা। আমাদের শহীদ দিবসেই আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অথচ সঠিক চর্চা ও পরিচর্যার মাধ্যমে মাতৃভাষার উত্কর্ষ সাধনে আমরা অনেকেই এখনো অনেক বেশি উদাসীন। এমনকি অক্ষরের প্রয়োগ, শব্দের বানান, শব্দ গঠন, শব্দ সংক্ষেপণ, শব্দের প্রয়োগ, বাক্য গঠন, যতিচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি সাধারণ বিষয়েও আমরা প্রায় সবাই এত বেশি ভুল লিখি যা স্বল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই এই নিবন্ধে কেবল বিসর্গের (ঃ) ব্যাপক অপব্যবহারের আংশিক চিত্র তুলে ধরা হলো।

ভাষার গতিবৃদ্ধির জন্য শব্দসংক্ষেপ অপরিহার্য। তাই শব্দ সংক্ষেপ করার জন্যও প্রত্যেক ভাষারই থাকা চাই সর্বজনবিদিত একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম। আমাদেরও আছে। কিন্তু সে নিয়ম অনুসরণ করছি না আমরা সবাই।

যেমন: ‘ডাঃ মোঃ সাঃ জাঃ ফয়েজ, এমঃ বিঃ বিঃ এসঃ’। এক্ষেত্রে বিসর্গ (ঃ) গুলোর অপব্যবহার করা হয়েছে যতিচিহ্ন (শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন) হিসেবে। অর্থাত্ ‘ডাক্তার মোহাম্মদ সারোয়ার জাহান ফয়েজ’, ‘ব্যাচেলর অফ মেডিক্যাল সাইন্স’ কথাগুলোকে সংক্ষিপ্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে বিসর্গ দিয়ে।

আবার ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্মারক নম্বর’ কথাগুলোকে সংক্ষেপে লেখা হচ্ছে—‘শিঃ মঃ স্মাঃ নং’ এভাবে। গভঃ দিয়ে গভর্নমেন্ট, প্রাঃ দিয়ে প্রাইভেট, লিঃ দিয়ে লিমিটেড, হঃ দিয়ে হযরত, ছঃ দিয়ে ‘ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম’, রাঃ দিয়ে ‘রাদিয়াল্লা হু আন হু’ ইত্যাদি লেখা হয়ে থাকে। এভাবে বিসর্গ (ঃ) দিয়ে শব্দ সংক্ষেপ করা সঠিক নয়।

বিসর্গ (ঃ) কে যতিচিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। যতিচিহ্নের কোনো উচ্চারণ ধ্বনি নেই। কেননা, কোনো যতিচিহ্নই বর্ণ নয়। বিসর্গ (ঃ) একটি বর্ণ। বিসর্গের (ঃ) আছে উচ্চারণ ধ্বনি। আছে সঠিক ব্যবহারের নিয়মকানুন। অথচ আমরা অনেকেই না জেনে, না বুঝে এই বিসর্গ (ঃ) ধ্বনিকে ব্যবহার করছি যতিচিহ্ন হিসেবে। এতে বিলুপ্ত হচ্ছে বিসর্গ (ঃ) এর উচ্চারণ ধ্বনি ও অস্তিত্ব। আবার এইরূপ অপব্যবহূত বিসর্গ (ঃ) এর উচ্চারণ করতে গেলেও অর্থ দাঁড়াচ্ছে অন্যরকম। যেমন— ‘হাইমচর হামদর্দ হাসপাতাল’কে বিসর্গযোগে সংক্ষিপ্ত করতে গেলে হবে ‘হাঃ হাঃ হাঃ’। উচ্চারণ হবে ‘হাহ্ হাহ্ হাহ্’। অর্থ দাঁড়াবে উচ্চৈঃস্বরে হাসির শব্দ।

শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করতে হবে যতিচিহ্ন। একমাত্র দাঁড়ি (। ) ব্যতীত সকল যতিচিহ্নই আমরা পেয়েছি বা নিয়েছি ইংরেজি ভাষা থেকে। তাই ব্যবহারও হচ্ছে ইংরেজি ভাষার রীতি অনুসারেই। সেমতে শব্দ সংক্ষেপ করার জন্য ব্যবহূত হবে ডট (.)। বাংলায় আমরা এর নাম দিয়েছি এক বিন্দু (.) বা শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্ন। যেমন: ডা. মো. সা. জা. ফয়েজ, এম. বি. বি. এস.। শি. ম.স্মা., এস. এস. সি., এম. এসসি., বি. এড., বি. ডি. আর. ইত্যাদি।

শুধু শব্দ সংক্ষিপ্ত করার জন্যই যে বিসর্গের (ঃ) অপব্যবহার হচ্ছে তা নয়, বিশ্লেষণ করার জন্যও অহরহ অপব্যবহূত হচ্ছে বিসর্গ (ঃ) নামক ধ্বনি। ‘যেমন—/ যেমন:’-কে বিসর্গ দিয়ে লেখা হচ্ছে ‘যেমনঃ’। ‘নাম—/ নাম:’-কে লেখা হচ্ছে ‘নামঃ’। ‘গ্রাম—/ গ্রাম:’-কে লেখা হচ্ছে ‘গ্রামঃ’। ‘পোস্ট—/ পোস্ট:’-কে লেখা হচ্ছে ‘পোস্টঃ’। বিসর্গের মতো এমন অনেক ধ্বনি, বর্ণ এবং যতিচিহ্ন প্রয়োগ আমাদের খামখেয়ালির জন্য বাংলা ভাষা আজ ক্ষত-বিক্ষত ও দুঃখভারাক্রান্ত।

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও বাস্তব যে, বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নামফলক, চিঠিপত্র, টেলিভিশন এমনকি অনেক প্রকাশিত বই-পত্রপত্রিকায় এমনি ভুলভাবে বিসর্গের অহরহ প্রয়োগ দীর্ঘদিন দেখতে দেখতে এখন নতুন প্রজন্মসহ আমরা অনেকেই মনে করি তা-ই সঠিক। এমনকি আমাদের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষের নামের সংক্ষিপ্তরূপ আমাদের শিক্ষা সনদে লেখা হয়েছেও হচ্ছে (ঃ) বিসর্গ দিয়ে। যেমন—মো., মোসা., মি. এসবকে লেখা হচ্ছে মোঃ, মোসাঃ, মিঃ, ইত্যাদি। আজীবন এই ভুল বয়ে বেড়াচ্ছি সবাই।

অথচ শিক্ষা বোর্ড এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ একটু সচেতন হলেই বন্ধ করা যায় এই চলমান / প্রচলিত ভুল। তা করা হলে নিজের সনদ দেখেই আমাদের সন্তানেরা শিখতে পারবে শব্দ সংক্ষেপণ চিহ্নের ব্যবহার এবং পরিহার করতে পারবে (ঃ) বিসর্গের অপব্যবহার। এ ব্যাপারে যথাশীঘ্র সম্ভব বাংলা একাডেমিসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল প্রতিষ্ঠান ও প্রিন্ট মিডিয়াসমূহ ঐকমত্যে এসে একই নিয়ম অনুসরণ অত্যাবশ্যক। মনে রাখতে হবে সামান্য অবহেলায় ভাষার ভেতরে কোনো ভুল বিস্তৃত হয়ে পড়লে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভাষা; যা কাটিয়ে ওঠা হয়ে পড়ে অত্যন্ত কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।

লেখক :অধ্যক্ষ, কিশলয় বালিকা

বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা

স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059530735015869