করোনায় আক্রান্তদের দেহে অক্সিজেনের চাহিদা পূরণে এবং উচ্চগতির ভেন্টিলেশনের জন্য ‘অক্সিজেট’ নামের একটি স্বল্প মূল্যের সিপ্যাপ ভেন্টিলেটর ডিভাইস তৈরি করছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। এই যন্ত্র কোন প্রকার বৈদ্যুতিক শক্তি ছাড়াই শুধুমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডার বা মেডিক্যাল অক্সিজেন লাইনের সাথে সংযুক্ত করে ব্যবহার করা যাবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অক্সিজেটের তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এ ট্রায়ালের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরের দায়িত্বে রয়েছেন বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান এবং কো-ইনভেস্টিগেটর হিসেবে রয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. টিটু মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন কমিউনিকেবল ডিসিস কন্ট্রোল শাখার পরিচালক ডা. রোবেদ আমিন এবং মেডিসিন বিভাগের অন্যান্য চিকিৎসকরা। বুয়েটের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বুয়েট বলছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এই ধাপে, প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে অক্সিজেট সিপ্যাপের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণের জন্য মোট ৪০ জন রোগীর অর্ধেক অংশকে অক্সিজেট সিপ্যাপ এবং বাকি অর্ধেক অংশকে হাই-ফ্লো ন্যাসাল ক্যানলার মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হবে। তৃতীয় ধাপে সাফল্য লাভ করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে ও চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী এই যন্ত্রটি হাই-ফ্লো নাসাল ক্যানলার স্বল্প মূল্যের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
বুয়েট আরও জানিয়েছে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের দেহে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে প্রথমে স্বল্প মাত্রায় অক্সিজেন দেয়া হয় (low-flow oxygen therapy, 0-15 L/min), কিন্তু এই স্বল্প মাত্রায় রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে উচ্চগতির অক্সিজেন প্রবাহ (high-flow) প্রয়োজন পড়ে যা রোগীকে অবস্থার অবনতি রোধ করতে পারে। করোনা প্রকোপ শীর্ষে থাকা অবস্থায় আমাদের দেশের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পরিমানে হাই-ফ্লো নেজাল ক্যানলা যন্ত্র পাওয়া যায় না। এছাড়াও এ যন্ত্রগুলো ব্যয়বহূল ও ব্যবহার কৌশল জটিল হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়। সহজে ব্যবহারযোগ্য অক্সিজেট সিপ্যাপ এই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করবে।
অক্সিজেট সি-প্যাপ ভেন্টিলেটর স্বল্প মূল্যে সাধারণ ওয়ার্ডেই উচ্চগতির অক্সিজেন দিতে পারে এবং এতে রোগীদের আইসিএউয়ে ভর্তি কমাতে সাহায্য করবে। অক্সিজেট একটি সুক্ষ্ম ভেঞ্চুরি ভাল্ভের মাধ্যমে বাতাস ও অক্সিজেন এর সংমিশ্রণ তৈরি করে অন্তত ৬০ লিটার/মিনিট গতিতে সরবরাহ করে। মেডিক্যাল অক্সিজেন সাপ্লাই ও দ্বৈত ফ্লো-মিটারের সাহায্যে এটি প্রয়োজনে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন দিতে পারে। এই ডিভাইসটি যুক্তরাজ্যের সিপ্যাপ যন্ত্র পরীক্ষণের নির্দেশনা (UK-MHRA Rapidly Manufactured CPAP systems guideline) অনুযায়ী বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পরীক্ষা করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের (বিএমআরসি) অনুমোদনক্রমে এটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল এর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ সফল ভাবে অতিক্রেম করে তৃতীয় ধাপের অনুমতি লাভ করেছে। দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় দেখা যায়, চিকিৎসা দেওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে অক্সিজেট সিপ্যাপ রোগীদের রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা (অক্সিজেন স্যাচুরেশন) গড়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি করে।
বুয়েট জানিয়েছে, অক্সিজেট সিপ্যাপ প্রকল্পটির আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগের উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন একাডেমী প্রতিষ্ঠাকরণ (আইডিয়া) শীর্ষক প্রকল্প, অঙ্কুর ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন এবং মানুষ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োজিত রয়েছেন বুয়েট বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মীমনুর রশিদ, কাওসার আহমেদ, ফারহান মুহিব, কায়সার আহমেদ, সাঈদুর রহমান এবং সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তওফিক হাসান।