বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি চালুর যৌক্তিকতা - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-রাজনীতি চালুর যৌক্তিকতা

মাছুম বিল্লাহ |

আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের কথা জানি, সেটি কিন্তু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা সেই অর্থে বেশিদিনের নয় তারপরেও বেশ কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ব্র্যাক, নর্থ সাউথ, আই ইউবি, ড্যাফোডিলস ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের প্রায় কাছাকাছি স্থানে পৌঁছে গেছে। বর্তমান প্রচেষ্টা ধরে রাখলে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও একদিন হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডের মতো পর্যায়ে চলে যাবে। আর এই এগিয়ে যাওয়ার পেছনে যত কারণ কাজ করছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো ছাত্র-রাজনীতি না থাকা।  তথাকথিত ছাত্র রাজনীতির নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা  হচ্ছে তাতে শিক্ষার  মান ক্রমশই নিম্নগামী হচ্ছে কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা যা হচ্ছে সেগুলোর কোনটিই  ছাত্র রাজনীতির কোন ক্রাইটেরিয়াতেই পড়ে না। সে দিন কথা প্রসঙ্গে উচ্চপদস্থ সরকারি এক কর্মকর্তা বন্ধু জানালেন তার ছেলে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। জিজ্ঞেস করলাম কোন হলে থাকে। উত্তরে বললেন একি আমাদের যুগ আছে যে, হলে থাকবে। আমরা যেভাবে হলে ছিলাম এখনকার ছেলে মেয়েরা সেভাবে হলে থাকতে পারছে না।

ছেলে হলে থাকতে পারছে না, মেসে থাকছে। এই রাজনীতি যদি আমরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও চালু করি তাহলে কিছুই আর বাকী থাকবে না। উচচশিক্ষিতদের অবশ্যই রাজনৈতিক সচেতনতা থাকতে হবে। তবে, সেটি কোনভাবেই আমরা যে অর্থে ছাত্ররাজনীতি প্রত্যক্ষ করছি সেটি নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত করার জন্য কেউ কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতি চালু করার পক্ষে জোরালো মত ব্যক্ত করেছেন। তারা হয়তো  রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগী তা না হলে কোনভাবেই এর পক্ষে কথা বলতেন না। অনেক অভিভাবক ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। এ সব অভিভাবকদের শঙ্কার প্রধান কারণ ছাত্র রাজনীতির নামে ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা হচ্ছে। সন্তানদের নিরাপত্তার প্রশ্নে যে কোন মা-বাবারই এমন উদ্বেগ জানানোটাই স্বাভাবিক। ছাত্র রাজনীতি হবে নিজেদের অর্থাৎ শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করা, দাবি দাওয়া যৌক্তিকভাবে তুলে ধরা যার মাধ্যমে তারা নেতৃত্ব শিখবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা শিক্ষার কল্যাণে নিবেদিত হতে হয় ছাত্র রাজনীতি। সংঘাত, সহিংসতা এবং সন্ত্রাসের স্থান সেখানে থাকবে না। কিন্তু কি হচ্ছে আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে? কি প্রত্যক্ষ করছি আমরা ইডেন কলেজে?

কোন কোন শিক্ষাবিদ বলেছেন, ’ আমরা সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিভাজনে বিশ্বাস করি না। তাই একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে গড়ে উঠবে, আমরা চাইব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও তেমনি পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে উঠুক। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের শিক্ষার্থীদের রাজনীতি বিমুখ করে রাখা উচিত নয়। তাদের নিয়ে কোন বিরাজনীতিকরণ নয়।’ এগুলো তো আদর্শের কথা, কাগুজে কথা। সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শুরুতেই তো বিশাল বিভাজন হয়ে আছে। রাষ্ট্র পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দশ-বিশ টাকা বেতন দিয়ে পড়েন, সাধারণত হলে থাকেন। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা লাখ লাখ টাকা দিয়ে পড়েন, হলে থাকার কোন সুযোগ নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ পড়াতে পাড়ুক আর না পারুক তাদের চাকরি ঠিক আছে।  

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের  যদি ঠিকমতো পড়াতে পারেন  তাহলেই তারা চাকরি করতে পারেন। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে রাজনীতি শিক্ষার্থীরা শিখছে তার ভয়ংকর রূপ লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রত্যক্ষ করছেন, কেউ জীবন দিচ্ছে, কেউ অঙ্গ দিচ্ছে কেউ মানসিক যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছ,হাজার হাজার মেধাবী  শিক্ষার্থী নিজ দেশে, স্বাধীন দেশে পরবাসী। যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই রাজনীতি চালু করতে চান তারা কি এ বিষয়গুলো জানেন না? অবশ্যই জানেন, তারপরেও কেন তারা সেটি চাচ্ছেন তা বুঝে আসেনা। শত শত শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। এই রাজনীতি যারা পয়সা দিয়ে পড়ছেন তাদেরও শিখতে হবে। যারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই রাজনীতি ঢুকাতে চাচ্ছেন তাদের কাছ থেকে আমরা আশা করেছিলাম যে, তারা বলবেন সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতির নামে যা যা হচ্ছে সেগুলোকে আগে পথে আনতে হবে তারপর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতি চালু করার কথা চিন্তা করা যাবে।

বিশ্ব রাজনীতি থেকে শুরু করে, জাতীয় রাজনীতি ও স্থানীয় রাজনীতি সাধারণ মানুষদের কি দেয় বা কি দিচ্ছে সেটি যদি একবার দেখার চেষ্টা করি  তাহলে দেখতে পাব রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের চরম বিরক্তির বিষয়টি। বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার কোন যন্ত্র নেই বলে রাজনীতি নিয়ে আমরা এত মোলায়েম কথা বলি।

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরায়েল ফিলিস্তিন সংঘাত, ভারত-পাকিস্তান-কাশ্মীর সংঘাত, মিয়ানমার- রোহিঙ্গা-বাংলাদেশ সমস্যা   এ সব কিছুই রাজনীতি। মানুষ যদি মানুষের অধিকারের কথা চিন্তা করত, সত্যিকার মানবতার কথা চিন্তা করত, মানুষের সংক্ষিপ্ত স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করতো তাহলে কি পৃথিবীতে এত সংঘাত থাকত? আমরা জাতীয় রাজনীতিতে কি দেখছি? সাধারণ মানুষ যদি নিরাপদে চলাচল করতে পারেন, তাদের সৎ উপায়ে  উপার্জিত অর্থ  দিয়ে সৎ জীবন যাপন করতে পারতেন তাহলে রাজনীতি নিয়ে তাদের এত বিরক্তি থাকার কথা ছিল না। কিন্তু যখন তারা বাজারে যান, যখন তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে সেবার জন্য যান তখন  পদে পদে হেনস্তার শিকার হন, এর কোন প্রতিকার নেই আছে বরং উল্টো ভীতি আর শাস্তি । এ থেকে সাধারণ মানুষের কোনও পরিত্রাণ নেই।   আমরা যখন বাজারে যাই সেখানে তো কোন সরকার নেই, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে আমরা যখন যাই সেখানকার সরকার তো সেই প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতাধররা। জনগণের কোন ঠাঁই নেই সেখানে, সেবা তো দুরের কথা। । 

মানুষ যখন কোন বিপদে পড়ে, ঘন্টার ঘন্টার ঘন্টা অযথা জ্যামে আটকে থাকে সেখানে তো কোন সরকার নেই। মানুষ বিপদে পড়ে রাষ্ট্রীয় কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোন ধরনের সেবা পাওয়ার কোন নজির নেই, তাহলে তাদের রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করার কি দরকার? ছাত্র রাজনীতি আছে বলেই আজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন বিপন্ন, ব্যক্তি স্বাধীনতা বিপন্ন। ঠিকমতো পড়াশুনা করা, জীবন ও জগতকে জানা, রহস্য নিয়ে গবেষণা করা--- এগুলোর ধারে কাছেও কি আছেন আমাদের শিক্ষার্থীরা? কি হচ্ছে তাদের? কি দিচ্ছে তাদের ছাত্র-রাজনীতি আমরাতো সবাই দেখছি।একটি রাজনৈতিক দল, একটি সংগঠন তাদের আদর্শ বাস্তবায়ন করবে সেজন্য দরকার জনসমর্থন আর সেটি অর্জন করতে হবে তাদের আদর্শের দ্বারা, তাদের মহান কাজের দ্বারা। মানুষ এমনিতেই আকৃষ্ট হবে।  অথচ এসব জায়গা দখল করেছে ভীতি, সন্ত্রাস, অস্ত্র, মারামারি আর সংঘাত, সশস্ত্র সংঘাত। তাহলে রাজনীতি দিয়ে কি হবে? যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতিমধ্যে ছাত্র সংগঠন আছে সেখানে কি কোন নির্বাচন হচ্ছে? সেখানে কি গণতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে? সেগুলো তো আগে ঠিক করতে হবে, তারপরে চিন্তা করতে হবে যেখানে রাজনীতি নেই সেখানে এই মহান আদর্শ (?) শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কী ভাবে কাজ করতে পারে। এসব জায়গায় আমরা দেখছি একই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে মারামারি, হানাহানি। কেন? স্বার্থ, শুধুই স্বার্থের জন্য হানাহানি।

ট্রাস্ট পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাক্ষর দিয়ে ভর্তি হয়েছেন তারা কোন ধরনের ছাত্ররাজনীতি করবেন না এবং তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকেও সেভাবে প্রতিস্বাক্ষর নেওয়া হয়। তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষা সহায়ক ও রাজনীতি ব্যতিরেকে শিক্ষা বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার অবারিত সুযোগ রয়েছে।  বিভিন্ন কমিটি উপকমিটি কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিয়ে  তৈরি করে তারা নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ অবশ্যই পাচ্ছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই শ্রেণি প্রতিনিধি বা মনিটর রয়েছে, যারা প্রতি সেমিস্টারের  ফলাফলের ভিত্তিতে উপাচার্য কর্তৃক মনোনীত হন এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেন। এগুলো ছাড়াও  শিক্ষার্থীদের নানামুখী প্রতিভার বিকাশ ও নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনের জন্য সহশিক্ষা ও অতিরিক্ত শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ভিত্তিক স্টুডেন্ট ক্লাব নিয়মিতভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় নিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষার্থীদের কর্তৃক নিয়মিতভাবে আয়োজিত নানা অনুষ্ঠান, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক চর্চা, মন ও শরীর গঠনের মতো আবশ্যিক কাজগুলো করা হয়ে থাকে।  অন্যান্য দেশের  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেও যৌথভাবে প্রোগ্রাম হয়, প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।   ছাত্ররাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে –উচ্চশিক্ষা থেকে তৃণমূল শিক্ষা পর্যন্ত। এই অবস্থা থেকে ফিরে আসা সহজ নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসব থেকে অনেকটাই এখনও মুক্ত শুধুমাত্র তথাকথিত ছাত্র রাজনীতি নেই বলে। সেখানেও আমরা হানাহানি ঢুকিয়ে দিতে চাচ্ছি? কেন?

অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা এবং শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের আগ্রহ না থাকায় রাজনৈতিক কোন সংগঠন তাদের কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রসারিত করতে পারেনি। তারপরেও কতগুলো ছোটখাটো বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা গঠন করে থাবা বিস্তারের পথ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। অনেক অভিভাবকই অনেক কষ্টে টাকার সংস্থান করে ছেলেমেয়েকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন শুধু রাজনীতিমুক্ত পরিবেশ আছে বলে। রাজনীতির কথা শুনে তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এর ফলে যেটি হবে সেটি হচ্ছে একটু সচ্ছল অভিভাবকগণ তাদের ছেলেমেয়েদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবেন পড়াশুনার জন্য, দেশীয় মুদ্রা চলে যাবে দেশের বাইরে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের চাকরি অনেক শক্ত, তারাই ছাত্র সংগঠনগুলোর সাথে কোনভাবেই পেরে উঠছেন না, সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এই সংগঠনগুলোর ইচ্ছেমতো চলতে হয় তাদের।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের চাকরি তো পাবলিকের মতো শক্ত নয়, সেখানে এ সব সংগঠন দাঁড়িয়ে গেলে তাদের সাথে কিছুই করা যাবে না, চলতে থাকবে নৈরাজ্য। এক মহা হ-য-ব-র-ল পরিবেশের সৃষ্টি হবে। অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু বিদেশী শিক্ষকও আছেন, আছেন বিদেশী শিক্ষার্থী - আর তাই কিছুটা হলেও প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার রেশ এগুলোতে আছে। বেঁচে যাচ্ছে দেশের অনেক মুদ্রা। রাজনীতি চালু হলে এসব শিক্ষক থাকবেন না যেমনটি নেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আর শিক্ষার্থীরা চলে যাবে দেশের বাইরে কারণ ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা যৌক্তিক কারণেই সমাজে প্রচলিত আছে। এটি দূর না হলে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমান ধারার ছাত্ররাজনীতি চালু করার বিষয়ে যথেষ্ট চিন্তা-ভাবনা করার অবকাশ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতো শিক্ষার পরিবেশকে আর কলুষিত হতে দেওয়া ঠিক হবে না। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা অনেক বেশি। এই বিশাল অংশকে রাজনীতির দ্বারা কলুষিত হতে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবেনা। আমরা জানি এবং পত্রিকায় দেখি যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠনের মিছিল থাকায় শিক্ষার্থীরা হল থেকে বেরিয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি কারণ একই সময়ে মিছিল ও পরীক্ষা। মিছিল তাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং মিছিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক যদি হলে থাকতে হয়।

অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি সেমিস্টার একাডেমিক ক্যালেন্ডার দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। যেমন তিন মাসের সেমিস্টারে ২৪টি ক্লাসে সাজানো। প্রতিটি ক্লাসের সময়সীমা দেড় ঘন্টা। এর ভেতর কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, মিডটার্ম পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন, ভাইবা, ফাইনাল  পরীক্ষা ইত্যাদি কার্যকলাপ দিয়ে পুরো সেমিস্টারই পরিপূর্ণ। প্রতি ডিপার্টমেন্ট চেষ্টা করে মাসে অন্তত একটি সেমিনার করতে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিডারশীপ গড়ে তুলতে এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে নানা ধরনের ক্লাব। এরপর আর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ধারায় শিক্ষা সংকট তৈরি করার জন্য রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন জায়গা করে নেওয়ার সুযোগ পাবে কোথায়? এর মধ্যে যদি ছাত্র রাজনীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় তার অর্থ হবে সুস্থধারার ক্লাবগুলোকে একপাশে সরিয়ে অসুস্থ রাজনীতির জন্য জায়গা করে দেওয়া। আমরা দেখতে পাচ্ছি একই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একাধিক দল থাকে। তারা পক্ষ-প্রতিপক্ষ এবং ক্যাম্পাসে তারা প্রায়ই অস্ত্রের ঝনঝনানি প্রদর্শন করে , ফলে সেখানে শিক্ষা-দীক্ষা, বই-পুস্তক আর গবেষণার চিন্তা উবে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় নিয়োজিত সকল শিক্ষার্থী সমাজ-সচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে, মূল্যবোধ সম্পন্ন হবে আর তারুণ্যের আবেগে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে। এটিই সকলের চাওয়া। সেটি করতে হলে বর্তমান ধারার ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করানোর কোন যুক্তি নেই, সেটি হবে আত্ম-বিধ্বংসী।

 

লেখক : শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক

 

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053930282592773