বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি দ্রুত বাস্তবায়ন করুন - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি দ্রুত বাস্তবায়ন করুন

সাইফুর রহমান |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে দেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। সব স্তরে উন্নয়নের অভূতপূর্ব ছোঁয়া লেগেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার প্রাক্কালে।

উন্নয়নের মূল হাতিয়ার হলো শিক্ষা। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে তাল মিলিয়ে চলার কারণে পরিবর্তন,পরিবর্ধন ও পরিমার্জিত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কন্টেন্ট, সৃজনশীল চিন্তাধারা, একমুখী শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-৪ পূরণে বদ্ধপরিকর। সে লক্ষ্য মাত্রাকে সামনে রেখে সবাই মিলে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু এখনো একটি জায়গায় আমরা পিছিয়ে আছি। আর তা হলো ‘বে’সরকারি নামক শব্দের কাছে। দেশে মাত্র কয়েকশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি আর অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি। অর্থাৎ প্রায় ৩০ হাজারের বেশি  শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, মাদরাসা) বেসরকারি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একই শিক্ষানীতি-২০১০ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। তাহলে শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে বৈষম্য কেন?

এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীর সংখা প্রায় ৫ লক্ষাধিক। তাই সরকারিকরণ ও শিক্ষক-কর্মচারীর বদলি এখন সময়ের দাবি। এখানে যারা কর্মরত আছেন, তারা সবাই অধির আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন, কোন দিন সেই ‘বে’ শব্দটি উঠে যাবে। কারণ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ  মানবেতর জীবনযাপন করছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের শুধু মূল বেতন দেয়া হয়। যা দিয়ে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা প্রায় অসম্ভব। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে।  বাড়ি ভাড়া বাবদ সামান্য ১ হাজার টাকা দেয়া হয়, যা দিয়ে একটি রুমও পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। বর্তমানে একটি বাড়ি ভাড়া নিতে ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকার প্রয়োজন। চিকিৎসা ভাতা হিসেবে ৫০০ টাকা দেয়া হয় যা দিয়ে ডাক্তার সাহেবের একদিনের পরামর্শ ফি দেয়া সম্ভব নয়। তাহলে কীভাবে ঔষধসহ অন্যান্য চাহিদা পূরণ করবে? উপরন্তু অবসর ভাতা ও প্রভিডেন্ট ফান্ড বাবদ মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা হয়।

অপরদিকে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের আগে ম্যানিজিং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি ছিল। এক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেন এক একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। খুবই সামান্য সংখ্যক মেধাবী নিবন্ধনধারীরা  নিয়োগ পেয়েছিল এসব প্রতিষ্ঠানে। কারণ ম্যানিজিং কমিটি তাদের আত্মীয়-স্বজন বা অধিক দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ দিতেন। আর মেধাবী শিক্ষকরা উপায় অন্তর না পেয়ে নিজে জেলা ছেড়ে অন্য কোনো জেলার হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল, দুর্গম জায়গায় চাকরি করছেন। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অনেক শিক্ষক সিলেট, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে কর্মরত আছেন।এসব শিক্ষকরা নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।এমন অনেকে আছে ১০ থেকে ১৫ বছর থেকে চাকুরি করছে অন্য জেলায়। এসব শিক্ষকদের প্রাণের দাবি, কোন দিন মিলবে বদলি?

বদলিবঞ্চিত শিক্ষকরা তাদের আপন জনের সাথে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক দূরে এসে চাকরি করার কারণে স্থানীয় কমিটি বা শিক্ষক দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। আমাদের দেশে যাতায়াত ব্যবস্থা দুর্বল থাকার কারণে বাড়ি থেকে কর্মস্থল বা কর্মস্থল থেকে বাড়ি আসতে ১৩ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অনেক সময়  যানজটের কারণে ২/৩ দিন লেগে যায়।

অন্যদিকে, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ প্রক্রিয়া কমিটির হাত থেকে এনটিআরসিএর হাতে চলে আসে। এ পর্যন্ত এনটিআরসিএ প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয় মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ থাকার কারণে সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীরা বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ পেয়েছে। আর সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৫৫ হাজার শিক্ষকের চাহিদা পেয়েছে এনটিআরসিএ। এনটিআরসিএর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তা হলো- জাতীয় মেরিট লিস্ট থেকে নিয়োগের নিয়ম থাকায় মেরিটের প্রথম দিকে থাকা প্রার্থীদের বার বার সুযোগ মিলছে। ফলে শূন্যপদগুলো শূন্যই থেকে যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে উত্তম উপায় হলো ইনডেক্সধারী শিক্ষকদেরকে আগে বদলি করার পর যে পদগুলো শূন্য থাকবে সেই পদগুলোতে নতুন নিবন্ধনধারীদের জন্য সুযোগ রাখা। তাহলে মেরিট লিস্টের নিচের দিকে থাকা নিবন্ধনধারীরাও সুযোগ পাবে।

জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১০, ২০১৮ তে বদলির কথাটি উল্লেখ থাকলেও এখন পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। নীতিমালা-২০১৮ তে বদলির ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হওয়ার কথা থাকলেও, এখনো তা কেন বাস্তবায়িত হয়নি? ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বদলি নীতিমালার কমিটি গঠন করে এবং ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনলাইন সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলির কথা বলা হলেও, তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

তাই ৫ লক্ষাধিক শিক্ষকের প্রাণের দাবি এনটিআরসিএর প্রতিটি গণবিজ্ঞপ্তির আগে বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে বদলির ব্যবস্থা করুন। অথবা দ্রুত বদলির নীতিমালা প্রণয়ন করে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।

লেখক : সাইফুর রহমান, সহকারী শিক্ষক (গণিত), রাসুলপুর দাখিল মাদরাসা, বাহুবল, হবিগঞ্জ।

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003216028213501