বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রসঙ্গে - দৈনিকশিক্ষা

বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রসঙ্গে

মো. সরোয়ার |

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির দাবিটি দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। তাদের প্রয়োজনের দিক থেকে এই দাবিটি খুবই মানবিক ও যৌক্তিক। এনটিআরসি’র সনদপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন (সর্বোচ্চ ২ বছরের অভিজ্ঞতা নির্ধারণ করা যেতে পারে) শিক্ষকদের জন্য পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে নিবন্ধনের মেধাক্রম অনুসারে মাদরাসায় থেকে স্কুল/কলেজ এবং কলেজ থেকে মাদরাসায় যাওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর এটিকে ভালো হিসেবে সমর্থন করেছেন প্রায় সব বদলি প্রত্যাশী নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্ত শিক্ষক। 

বদলি ব্যবস্থাটি বিশ্বস্বীকৃত। তবে সেটি একই প্রতিষ্ঠানে/সংস্থায়/ব্যাংকে/এনজিওতে কর্মরত বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কিন্তু প্রত্যেকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে  ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর থেকে নতুন পদ্ধতিতে এন্ট্রি লেভেলে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে শূন্যপদ সাপেক্ষে  সমপদ/সমস্কেলে শিক্ষকদের বদলি করা যেতে পারে।

যথাযথ নীতিমালা প্রবর্তন ব্যতীত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘদিনেও হয়নি সে নীতিমালা প্রণয়ন ও কাঙ্ক্ষিত  বদলির ব্যবস্থা। তাই তারা মানবেতর জীবনযাপন  করছেন।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জন্মের শুরু থেকে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের আবেদন করার সুযোগ পেয়ে আসছিলেন এবং যোগ্য বিবেচিত হলে নিয়োগ পেয়ে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন ও এমপিও স্থানান্তরের সুযোগ পেয়ে আসছিলেন। এমনকি এক অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অন্য অধিদপ্তরের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও নিয়োগ নিয়ে, এমপিও ট্রান্সফার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ যোগ্যদের ছিলো। শিক্ষকদের বদলি সুবিধা দিতে প্রয়োজনে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সে ব্যবস্থাটিকে আরো মোডিফাই করা যেতে পারতো। কিন্তু চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সেই সুযোগ রহিত করা হয়েছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা। কারণ, এনটিআরসি এর মাধ্যমে প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিপ্রাপ্ত শিক্ষকরা কোনো সুযোগ পাননি তাই তারা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত ও কষ্টের দিন যাপন করছেন। 

প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করার ন্যূনতম সুযোগটুকুও বর্তমানে নেই। এতে আরো বেড়ে গেছে শিক্ষকদের দুঃখ-কষ্ট। এমতাবস্থায় শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থেই দূর-দূরান্তে অবস্থিত সব ধরনের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (কারিগরিসহ সাধারণ স্কুল, কলেজ, মাদরাসা) এর এমপিওভুক্ত ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকদের দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্ত হবার সুযোগ দিয়ে তাদের মধ্যে দ্রুত বদলি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। 

যেহেতু বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়োগ এনটিআরসিএ কর্তৃক চূড়ান্ত করা হয় এবং যেহেতু বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি, সরকারি বেতনভাতা প্রদান, এমপিও ট্রান্সফার, টাইমস্কেল প্রদান, পদোন্নতি প্রদান, অবসর সুবিধা প্রদান, কল্যাণ ভাতা প্রদান ইত্যাদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়মে হয়ে থাকে এবং যেহেতু এ সব নিয়ম প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি তথা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারী মানতে বাধ্য থাকেন; সেহেতু এখন শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলির ব্যবস্থাটি কোনো সুষ্ঠু নীতিমালার ভিত্তিতে করা হলে তা সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

সব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে সাড়ে পাঁচ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী সন্তুষ্ট রেখে একটি বদলি নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যেই আমি কয়েকটি প্রস্তাব উত্থাপন করছি:  

১. এনটিআরসি এ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ২০২১ এর ১২.২ নীতিমালা অনুসারে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে সমপদ সমস্কেলে বদলি চালু করা যেতে পারে।

২. সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা যোগদানের ২ বছর পরে বদলির জন্য বিবেচ্য হয় সুতরাং NTRCA কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম রাখা যেতে পারে।
৩. জেনারেল প্রতিষ্ঠান থেকে সমপদ সমস্কেলে মাদরাসা কারিগরিতে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলি করা যেতে পারে।
৪. মাদরাসা ও কারিগরি থেকে জেনারেল প্রতিষ্ঠানে সমপদ সমস্কেলে পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে বদলি করা যেতে পারে।
৫. বর্তমান প্রতিষ্ঠানে সরকারি চাকরির ন্যায় সর্বোচ্চ দুই বছর চাকরিতে বহাল রাখা যেতে পারে।
৬. বদলির ক্ষেত্রে প্রথমে উপজেলায় তারপর জেলায় সর্বশেষ বিভাগে বদলি কার্যকর করা, এক্ষেত্রে মেধা বিবেচনা করা ও দূরের শিক্ষকদের অগ্রধিকার দেয়া যেতে পারে।
৬. বদলিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর পছন্দক্রম অনুসরণ করে স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার এর মাধ্যমে বদলি করা যেতে পারে।

পারস্পরিক বদলি:

ক. পারস্পরিক বদলি বিদ্যমান এমপিওভুক্ত (নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত) শিক্ষকদের জন্য সহজেই প্রবর্তন করা যেতে পারে কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করা হলে ১ শতাংশ শিক্ষক উপকৃত হতে পারে।

এরূপ পারস্পরিক বদলির জন্য কোনো সময় নির্ধারণ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রয়োজন নেই। শিক্ষা বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ওয়েবসাইটে শূন্যপদের তালিকা দেয়া থাকলে সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নির্ধারিত নিয়ম-নীতি অনুসারে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দু'জন শিক্ষক/প্রদর্শক/ কর্মচারী যৌথভাবে আবেদনপত্র দাখিল করে যোগ্য বিবেচিত হলে যেকোনো সময় পারস্পরিক বদলির সুযোগ পেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, পারস্পরিক বদলি অন্য কোনো বদলির বিকল্প নয়। এটি অন্যান্য বদলির পাশাপাশি একটি নিত্য চলমান বদলি প্রক্রিয়া।

খ. এমপিওভুক্ত সবাইকে বদলির সুযোগ দেয়া হলে এবং একই পদে একাধিক আবেদনপত্র দাখিল হলে নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফল গণনা করে অধিক পয়েন্ট প্রাপ্তকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে। 

গ. শুধু নিবন্ধনধারী এমপিওভুক্তদের বদলির সুযোগ দেয়া হলে এবং একই পদে একাধিক আবেদনপত্র দাখিল হলে তাদের নিবন্ধন পরীক্ষার ফলাফলের জাতীয় মধাক্রম ও উপজেলা/জেলা/ বিভাগের বাইরের শিক্ষকদের গণনা করে অধিক পয়েন্ট প্রাপ্তকে অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।

ঘ. নির্ধারিত ক্রাইটেরিয়া অনুসারে একজন বদলি প্রত্যাশী শিক্ষক/কর্মচারীকে তার পছন্দক্রম অনুসারে একাধিক শূন্য পদের বিপরীতে অনলাইন আবেদনের সুযোগ দেয়া যেতে পারে পারে। এবং উপজেলা ও জেলায় অগ্রাধিকার দেয়া যেতে পারে।

ঙ. একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বেচ্ছায় বদলি কার্যকর করে পরিবর্তিত শূন্য পদ নির্ধারণ বা পুনর্নির্ধারণ করে নতুন নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যেতে পারে।
এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের জন্য ২০২১ এর ১২.২ নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের কাঙ্ক্ষিত বদলি দ্রুত কার্যকর করা আবশ্যক। 

লেখক: প্রভাষক (ইংরেজী), বরগুনা

 

নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032100677490234