বৈশ্বিক সংকটে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন - দৈনিকশিক্ষা

বৈশ্বিক সংকটে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন

মাছুম বিল্লাহ |

সারা পৃথিবীতে আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হচেছ। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে Teachers: Leading in crisis, reimagining the future। সংকটকালে বা সংকটের মধ্যে শিক্ষকদেরকেই নেতৃত্ব দিতে হবে, নতুনকরে ভাবতে হবে, দিকনির্দেশনা দিতে হবে, নতুন করে কল্পনা করতে হবে কিভাবে শিক্ষাকে এগিয়ে নেয়া যায় সামনের দিনগুলোতে। চমৎকার প্রতিপাদ্য। মূলত শিক্ষকরাই যেকোনভাবে সমাজের অভিভাবক। গোটা পৃথিবীতে এই সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই মূলত প্রতিবছর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ইউনেস্কোর উদ্যোগে  দিবসটি  পালিত হয়ে আসছে।

প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়িদ প্রায়ই বলে থাকেন, ‘জীবনে একবার যিনি শিক্ষক হয়েছেন , তিনি সারা জীবনই শিক্ষক।’ কথাটির সাথে তিনি তাঁর নিজের জীবনের একটি উদাহরণ দিয়েছেন। সামরিক শাসনামলে সামান্য কারণেই গাড়ী আটকে দেয়া হতো রাস্তায়। স্যারের গাড়ীর ইনসুরেন্স মাত্র শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই তিনি বিকল্প পথে বাংলামোটর তার অফিসে আসছিলেন। গাড়ী ফার্মগেটে ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে গেছে। উনি দেখলেন ওনার দিকে বিশালদেহী এক সার্জেন্ট এগিয়ে আসছেন। স্যার ভাবলেন, আজ বোধহয় মান সম্মান কিছুই থাকবেনা। ঘটনা হলো উল্টো। সর্জেন্ট এসে স্যারকে দেখে জোরে সালাম কসলেন। কোন এক সময় তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন। একদিন এক অনুষ্ঠানে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আছেন। আমাদের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে বললেন, একটি চুটকি মনে পড়ছে কিন্তু স্যার সামনে আছেন কিভাবে বলি। আমি সায়িদ স্যারকে জিজ্ঞেস করলাম যে, শিক্ষামন্ত্রী তার সরাসরি ছাত্র কিনা। স্যার উত্তর দিলেন, সরাসরি ছাত্র নয়। অথচ যে সম্মান শিক্ষামন্ত্রী তাকে দেখালেন গর্বে এবং আনন্দে আমার বুক ভরে গিয়েছিল সেদিন। আহসান উল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিধি করে আইসিটি মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলো। দেখলাম মন্ত্রী মহোদয় ভিসি স্যারকে ’ স্যার’ বলে সম্বোধন করছেন। সেই দৃশ্য দেখে জীবনে চমৎকার এক তৃপ্তি পেয়েছি। বর্তমানকালের তথ্যমন্ত্রী দেখলাম তাঁর স্কুল জীবনের শিক্ষকের বাসায় গিয়ে তাঁর পা ছুয়ে সালাম দিচেছন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখলাম গতবার অমর একুশে বইমেলা উদ্বোধনের দিন তাঁর শিক্ষক প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান স্যারের চাদর টেনে গায়ে দিয়ে দিচ্ছেন। এগুলো অনন্য উদাহরণ। আবার এর বিপরীতের উদারহরণও আছে।  টিভিতে এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলুকে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি স্যার এমাজউদ্দিন আহমদকে স্যার না বলে ‘এমাজউদ্দিন’ বলে সম্বোধন করছেন।

শিক্ষকদের জীবনে অর্থনৈতিক জৌলুস নেই কিন্তু মনে শান্তি আছে। প্রচুর ধন-সম্পত্তি নেই কিন্তু দুনিয়াজোড়া শিক্ষার্থী আছে, রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে পতাকা হাতে নিয়ে তাদের জন্য মেকি সম্মান প্রদর্শনের মোহড়া নেই কিন্তু অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে মানুষ হাত উঁচিয়ে সালাম দেয়। আমার বাবা ছিলেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। একবার ছোট বয়সে গ্রামের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচিছলাম বাবার সাথে। অনেক দুরে দেখলাম এক লোক সাইকেল চালিয়ে আসছেন।দূর থেকেই হঠাৎ সাইকেল থেকে নেমে মাথা নিচু করে বাবাকে সালাম দিয়ে পেছনে অনেক দূর সাইকেল হাতে চালিয়ে নিয়ে সাইকেলে ঊঠলেন। আমি বিষয়টি বুঝতে পারিনি। পরে অন্যদের সাথে আলাপ করে জানলাম শিক্ষকের সামনে দিয়ে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া এক ধরনের বেয়াদবি যা ওই যুগের মানুষ খুব ভালভাবে মানতেন। যখন উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে বরিশাল বি এম কলেজে পড়ি তখন আমাদের বায়োলজি স্যাারের সাথে আমরা ক’জন দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম তখন এক ছাত্র দ্রুত সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ এক ছাত্র নেতা সাইকেল থামিয়ে বললেন, ‘বেয়াদব, সাইকেল থেকে নাম।’ তিনি নেমে সাইকেল হাতে চালিয়ে অনেক দূর গেলেন। তখন আমার সেই ছোট সময়ের ঘটনাটি মনে পড়ে গেল। স্কুল থেকে কলেজে এসেছি এর মধ্যেই ওই সম্মানের বিষয়টি অনেকটাই উবে গেছে। 

শিক্ষকদের মর্যাদার জায়গাটি কোথায়? কেউ বলেন এই মর্যাদা রাষ্ট্র থেকে দিতে হবে, কেউ বলেন এই মর্যাদা নিজেকে অর্জন করে নিতে হবে।  আমি শিক্ষক প্রশিক্ষণে গেলে কিছু কিছু শিক্ষক আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করতেন, ‘স্যার, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বড় বা নাকি ডিসি বড়?’ এই প্রশ্নের উত্তর আমাকে খুব টেকনিক্যালি দিতে হতো। আমি বলতাম, যদি অধ্যক্ষ স্যারকে কটাক্ষ করে কেউ কিছু বলেন তাহলে দেখবেন যে, শত শত এমনকি হাজার হাজার ছাত্র রাস্তায় নেমে গেছে সেই বক্তাকে শাস্তির আওতায় অনাার জন্য এবং বক্তব্য তুলে নেয়ার জন্য। ডিসিকে কেউ কিছু বললে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত রাস্তায় নেমে আসে না তবে তার যে,নির্বাহী ক্ষমতা আসে তা প্রয়োগ করে এবং রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় তিনি অনেক পুলিশ রাস্তায় পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে যে বা যারা কিছু বলেছেন তাদের অ্যরেস্ট করাতে পারেন। কাজেই কে বড় সেটি ওভাবে বিচার করা মুসকিল। তবে, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদার দিক দিয়েও ডিসি হচ্ছেন ডেপুটি সেক্রেটারী যা একজন ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষের চেয়ে ওপরে। আবার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ যদিও একজন প্রফেসর তার কিন্তু ডিসির মতো এত শান-শওকত নেই, গাড়ী নেই। শিক্ষকের জায়গাটি আলাদা। এটি ওই বস্তুগত বিষয় দিয়ে বিচার করা কঠিন। 

পৃথিবীর অনেক দেশই জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়েছে অনেক, অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালীও হয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের এবং শিক্ষার বিষয়টিকে সেভাবে মূল্যায়ন করতে পারেনি। খুব কম সংখ্যক দেশে শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। ঐসব দেশে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াও ভিন্ন, যে কেউ ইচ্ছে করলেই শিক্ষক হতে পারেননা। অনেক দেশ ঐসব দেশের মতো শিক্ষকদের মান-মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় সুবিধা দাবি করে কিন্তু গ্যাপটি পূরণ করার কথা বলেন না। শিক্ষকের পদমর্যাদা বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয় তরফে শিক্ষকদের সঠিক প্রতিনিধি থাকতে হয় তাহলে কাজ কিছুটা সহজ হয়। রাজনীতিবিদরা যারা নির্বাচিত হয়ে দেশের আইন কানুন তৈরি করেন তারা তো স্বভাবতই নিজেদের সম্মানের জায়গাটি ধরে রাখা এবং পাকাপোক্ত করার জন্য চেষ্টা করবেন, তারা শিক্ষকদের জন্য করতে যাবেন কেন? তাদের ভাবনাটা হচেছ দেশকে তো আমরা পরিচালিত করি, অতএব সর্বত্র অমাাদেরই প্রতিনিধিত্ব ও প্রভুত্ব থাকতে হবে। শিক্ষকরা তো শুধু বই পড়ান, তারা কেন এত উপরে থাকতে যাবেন? আর শিক্ষকরাও সে ধরনের উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেননি অনন্য দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। আমরা জানি অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বিদেশী  শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করতে পারেন, বৃত্তি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি রাষ্ট্রকে সুপারিশ করতে পারেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও রাষ্ট্র সেটিকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে বিদেশী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দেন। আমাদের দেশে এটি সম্ভব? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এই সম্মান অর্জন করতে পারেননি। 

আমি সর্বশেষ একটি উদাহরণ দিতে পারি। আমাদের দেশ থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীকে ফ্রান্সের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উচ্চশিক্ষার জন্য সুপারিশ করেছেন, রাষ্ট্র থেকে তাদের বৃত্তি দেয়া হয়েছে এবং এই কভিড-১৯ অবস্থার মধ্যেই তাদের সব কিছু সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু দুটি পরীক্ষা বাকী থাকায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদ্বয়কে ফ্রান্সে যেতে সহায়তা করতে পারেনি। তারা অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীদ্বয়কে শেষ পর্যন্ত সচিব ও মন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন, তাদেরকে বুঝিয়েছেন যে, তারা ঐ পরীক্ষাদুটো ওখানে গিয়ে অনলাইনে অনায়াসে দিতে পারবেন। মন্ত্রী হস্তক্ষেপ করায় শিক্ষার্থীদ্বয় সেখানে গেছেন এবং ক্লাস শুরু করেছেন। এই হচ্ছে তফাৎ আমাদের দেশের শিক্ষক ও অন্যান্য দেশের শিক্ষকদের মধ্যে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কথা বলি, শিক্ষকদের সামর্থ্য থাকলেও তো তারা শুভ কাজে তা প্রয়োগ করতে পারেন না। আর এই উদাহরণই বলে দেয় যে, তারা স্বায়ত্বশাসন ভোগ করার উপযুক্ততা অর্জন করেন নি। এটি পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার দীনতা।

বাংলাদেশের শিক্ষকদের মুক্তি কিসে? শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা হলেই সমস্ত শিক্ষক তাদের সম্মানের জাযগায় অধিষ্ঠিত হতে পারবেন? অর্থনৈতিক মুক্তি ও অনেকটাই নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবে তারা এটি চাচ্ছেন। যেভাবে তথাকথিত প্রতিষ্ঠান কমিটি, সভাপতি শিক্ষদের ওপর, প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করেন সেটির বিচারে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সবাই চাবেন যে, এসব কমিটির হাতে যাতে শিক্ষার মতো মহান দায়িত্ব অর্পন করা না হয়। কিন্তু কায়েমি স্বার্থের তাগিদে সেটিই যেন চলছে। 

আবার জাতীযকরণ করা হলে যে  চিন্তাটি মাথায় আসে সেটি হচ্ছে শিক্ষার মহান দায়িত্ব যাতে শুধুমাত্র স্বেচ্ছাচারী প্রতিষ্ঠান প্রধান কিংবা লোভী ও অনৈতিক কিছু শিক্ষক আছেন যাদের হাতে পড়লে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কি হবে? জোর করে তাদের প্রাইভেট পড়তে হবে, শিক্ষকদের কথা না শুনলে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসবে খড়গহস্ত। অভিভাবক যদি হন নিরীহ ও অসহায় তাহলে তো গোটা জীবনই হবে দুর্বিষহ। এ ধরনের ইতিহাসও তো কম নেই দেশে। তাহলে উপায় কি? এক তরফা ক্ষমতা যাদের ওপরই অর্পণ করা হবে তারাই সেটির অপব্যবহার করবেন। রাষ্ট্রীয় তরফ থেকে একটি ভারসাম্যমূলক ব্যবস্থা না থাকলে এক তরফা ব্যবস্থা করুর জন্যই অবিমিশ্র আশীর্বাদ হবেনা। অর্থাৎ আমাদের দেশে এখনও যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষক নিয়োগ হন এবং যারা এই পেশায় প্রবেশ করেন তাদের মধ্যে সবাইকেই আমরা প্রকৃত শিক্ষক হিসেবে পাইনা।  পেশাগত উন্নয়নের বিষয়টি জীবনব্যাপী। ব্যতিক্রম ছাড়া তো অনেক শিক্ষকদের ভেতর এ ধরনের তাড়না তো দেখাই যায় না যে, নিজের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য, শিক্ষার্থীদের আনন্দদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য দুনিয়ার অন্যান্য দেশে কি হচ্ছে, আধুনিক শিক্ষা মতবাদ কি কি চালু রয়েছে, আবিস্কৃত হয়েছে এগুলো জানার জন্য অনন্য ব্যতিক্রমধর্মী দু’ চারজন শিক্ষক  ছাড়া বাকীদের কাছে এসব বিষয় নিছক তুচেছর কিংবা আনাকাঙ্খিত। তারমধ্যে কিছু শিক্ষকদের দেখেছি অনেক বাঁধা-বিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও উন্নত বিশ্বে অনুকরণে নিজেদের প্রচেষ্টায় এই করোনাকালে শিক্ষার্থীদের জন্য, নিজেদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য, দেশের শিক্ষার জন্য ম্যাটেরিয়ালস তৈরি করে ক্লাস করাচ্ছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন। তারাই কিন্তু প্রকৃত শিক্ষক। শিক্ষক নেতাদের মধ্যে একাডেমিক কোন বিষয়ই গুরুত্ব পায়না। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের বিষয়ছাড়া শিক্ষক নেতারা সেখানে আর কিছু লেখেন না, বলেন  না। শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধি, চাকরি জাতীয়করণ আর রাষ্ট্র থেকে শিক্ষকদের সম্মান দিতে হবে ইত্যাদি। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের বিষয় বিভিন্নভাবে সেখানে উপস্থাপিত হয়।সেগুলো আবার শিক্ষাবিদদদের কলামে লেখা হয়! তখন আরও অবাক হয়ে যেতে হয় যে, শিক্ষকদের অর্থনৈতিক ও বৈষয়িক দাবি দাওয়া আদায়ের কথা ছাড়া কি শিক্ষক নেতাদের আর কোন কথা থাকেনা? 

দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের মানের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ রয়েছে বহুবছর ধরেই। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যুরো অব ইকোনমিক রিসার্চের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স পাস করে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই তাদের শিক্ষকদের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সাধারন শিক্ষায় এ নিয়ে কোন গবেষণার কথা শোনা যায়নি, তবে অবস্থা এর চেয়ে খুব একটা বেশি হেরফের হবে বলে মনে হয়না। এ বিষয়টি আজকের দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে। আমরা যাদের জন্য, যে প্রজন্মকে আমরা শিক্ষিত করব তাদের সন্তষ্টির বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে এবং নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। 

দেশের এ পরিস্থিতিতে প্রাথমিক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হাতে গোনা দু’একজন শিক্ষক নতুন ডিভাইস, নতুন পদ্ধতির সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চাচ্ছেন অথচ বাকী লাখ লাখ শিক্ষকদের এসবের প্রতি কোন ভ্রক্ষেপই নেই। অনেক শিক্ষক ছয়সাত মাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরও বলছেন এগুলো তারা বুঝেন না, অর্থাৎ এগুলোর সাথে তাদের পরিচয় নেই, পরিচিত হওয়ার চেষ্টাও করছেন না। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসে শিক্ষকদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, তাদের নিজেদের প্রস্তুত হতে হবে, নেতৃত্ব গ্রহণ করতে হবে কিভাবে তারা জাতিকে, জাতির ভবিষ্যৎ বংশধরদের এই একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জগুলো, করোনার মতো মহামারিতে, কিভাবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করবেন।

লেখক : মাছুম বিল্লাহ, শিক্ষা বিশেষজ্ঞ ও গবেষক।
 

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036489963531494