যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির নেতাদের বিরোধ চরমে পৌঁছেছে। বৈষম্যের অভিযোগ এনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। ছয় দফা দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
তবে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ‘হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক আমার বিদায়কালে গায়ে পড়ে বিশৃঙ্খলার পাঁয়তারা করছেন। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে এ আন্দোলন বিষয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি পদে ড. মোহাম্মদ তোফায়েল আহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আমজাদ হোসেন। এরপর নতুন কমিটির নেতারা শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষের ওপর চাপ দিলে প্রথমে সম্পর্কের টানাপড়েন, পরে তা বিরোধে রূপ নেয়। এখন পরিস্থিতি এমন শিক্ষক সমিতির নেতারা প্রকাশ্যে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। বিপরীতে উপাচার্যের পক্ষে শিক্ষকদের একাংশ এবং প্রশাসন অবস্থান জানান দিচ্ছেন। কার্যত শিক্ষকদের দুটি অংশ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন।
জানা যায়, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সাধারণ সম্পাদক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আমজাদ হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের ২৩তম সভার ২৯তম সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রাপ্যতার তারিখ (ডিউ ডেট) থেকে আর্থিক সুবিধাসহ প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে বঞ্চিত সব শিক্ষককে পদোন্নতি, আসন্ন রিজেন্ট বোর্ডে প্রাপ্যতার তারিখ (ডিউ ডেট) থেকে আর্থিক সুবিধাসহ সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে সব শিক্ষককে পদোন্নতি, যেকোনো সময় ধারাবাহিক/অধারাবাহিকভাবে স্নাতকোত্তর, পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টরালের জন্য সবেতনে শিক্ষা ছুটির ব্যবস্থা কার্যকর করা, শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি/পদের বিপরীতে কর্মরত শিক্ষকদের শ্রান্তি বিনোদন ছুটি-ভাতা ও চাকরির দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হওয়ার পরের দিন থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে স্থায়ী পদে স্থানান্তরের দাবি জানান শিক্ষকরা।
একই সঙ্গে প্রথম বর্ষ থেকে নন-ডিপার্টমেন্টাল সব কোর্সের জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সম্মানী/পারিতোষিক/আনুতোষিকের ব্যবস্থা, সব শিক্ষকের জন্য ল্যাপটপ/ডেস্কটপ অথবা ডিজিটাল ডিভাইসসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের নিয়োগ বা পদোন্নতির নিয়োগপত্রে চাকরি নিশ্চিতকরণের জন্য নীতিমালাবহির্ভূত গবেষণাপত্র প্রকাশের শর্ত বাতিল করাসহ রিজেন্ট বোর্ডে ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতকোত্তর (সান্ধ্যকালীন নয়) ডিগ্রি গ্রহণের অনুমোদনের বিষয়ে দাবি জানানো হয়।
কিন্তু শিক্ষক সমিতির এ দাবি বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ উপেক্ষা করে আসছে। দাবি-দাওয়ার বিষয়ে তারা উপাচার্যের কাছে গেলে তিনিও পাত্তা দেননি। এরপরই মূলত শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যকে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। এরপর থেকে শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ক্যাম্পাসে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম দিবস বর্জন করে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এবং সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মসূচিতেও অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মোহাম্মদ তোফায়েল আহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. আমজাদ হোসেন বলেন, ‘অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদানের পর থেকে শিক্ষকদের প্রতি নানা বৈষম্য করে আসছেন। শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে আমরা ছয় দফা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক সমিতির কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। তারপর তারা নতুন দাবি যোগ করেছেন। এসব করা হচ্ছে বিদায় বেলায় আমাকে হেয় করার জন্য। এ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষক নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান আজ আকাশচুম্বী। আমরা নানামুখী উদ্যোগের মাধ্যমে যখন বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিচ্ছি, তখন শিক্ষকদের কেউ কেউ ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তাদের দাবি-দাওয়া থাকলে আমাকে বলতে পারে। তা না করে প্রতিদিন অবান্তর সব কথা বলা হচ্ছে; কতিপয় শিক্ষক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছেন।’