রূপালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখায় শিক্ষকদের ঋণ বিতরণে টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে হেড অফিসের দোহাই দিয়ে ব্যাংকের ঋণ শাখার কর্মকর্তা ইদ্রীস আলী শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতি লাখ টাকা ঋণের জন্য এক হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা করে নিচ্ছেন। এমন অভিযোগ সাধারণ শিক্ষকদের। যদিও শিক্ষকদের কাছ থেকে ঋণ দেয়া বাবদ কিছুটা নেয়া হচ্ছে বলে ব্যাংক কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন। ম্যানেজার বলছেন, আগে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ থাকলেও এখন কোন টাকা নেয়া হচ্ছে না।
জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থ ছরে শিক্ষকদের বেতনের সল্প সুদে ৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করছে ব্যাংকটি। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি প্রায় ৩ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বেসরকারি শিক্ষকদের।
ঋণ বিতরণ ও কমিশনের বিষয়ে ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রীস আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আমরা বেসরকারি শিক্ষকদের বাড়ি মেরামত ও জমিক্রয় ইত্যাদির জন্য বেতনের ৮০ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করছি। ঋণ দিতে প্রতি লাখে কত করে নিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন সিবিএ খরচ, ভ্যাট, কাগজ প্রসেসিং ইত্যাদি বাবাদ টাকা নেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত টাকার কোন রশিদ দেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমরা কোন রশিদ দিচ্ছি না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ম্যানেজার আমাদের যেভাবে বলেছে আমরা সেই ভাবেই টাকা আদায় করছি।
ঝিনাইদহ শহরের শিশুকুঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজ এবং চন্ডিপুর বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের প্রায় ২৫ জন শিক্ষক বেতনের বিপরিতে ঋণ গ্রহণ করেছেন। তারা প্রত্যেকেই ব্যাংক কর্মকর্তা ইদ্রিস আলীকে লাখ প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা দিয়েছেন।
বিষ্ণুপদ স্কুল এন্ড কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনি দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এ জন্য ইদ্রিস আলীকে আড়াই হাজার টাকা কমিশন দিতে হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তসলিমা খাতুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এরকম অনিয়মের কথা আমিও শুনেছি। কিন্তু আমরা জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষকরা স্বীকার করে না। ফলে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা।
ঝিনাইদহের এক টেকনিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষকদের বেতনের বিপরিতে যে ঋণ বিতরণ হচ্ছে, তাতে ঝুঁকি নেই। তারপরও কেন ঘুষ নিচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারিনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংক ম্যানেজার ইমদাদুল ইসলাম নূরানী রোববার বিকেলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এ শাখায় যারা কর্মরত বেশিরভাগ কর্মচারীই স্থানীয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে আছেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার কথা আমিও শুনেছি। তবে সার্কুলারের বাইরে তো টাকা নেয়ার কথা নয়।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, সরকারের বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রোববার সকালে বিষয়টি তদন্ত করেছে। তারা ব্যাংকের কার্যক্রম দেখে গেছেন। তিনি আসার পর থেকে ব্যাংকে কোন অনৈতিক লেনদেন হচ্ছে না বলেও দাবি করেন ম্যানেজার।