পাঁচ ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর কাছ থেকে কেনা হয় ৫০ হাজার টাকায়। সেই প্রশ্ন নানা হাত ঘুরে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানার কাছে বিক্রি করা হয় দুই কোটি ৮০ লাখ টাকায়। এই প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সোহেলের।
নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্য মিজানুর রহমান মিজানকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। পরে সোমবার তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। এর আগে রোববার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। এ নিয়ে চক্রের ১৪ সদস্য গ্রেপ্তার হলেন। চক্রের আরও দুই সদস্য রাশেদ আহমেদ বাবলু এবং মোবিন উদ্দিনও রয়েছেন গোয়েন্দা জালে।
গত ৬ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তারা হলেন- মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও রাইসুল ইসলাম স্বপন। পরদিন সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদ নামে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে ব্যাংকে নিয়োগের প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব পাওয়া আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন কর্মচারী দেলোয়ার, পারভেজ ও রবিউল এবং পরে তাদের তথ্যে জাহিদসহ আরও দু'জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজনই রাষ্ট্রায়ত্ত বিভিন্ন ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।
ডিবির তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শাহাদাত হোসেন সুমা বলেন, গ্রেপ্তার মিজানের গ্রামের বাড়ি রংপুরের আলমনগরের মহাদেবপুর এলাকায়। নিজেকে তিনি শেয়ার ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন। সেই ব্যবসা থেকে বিপুল আয়ের দাবি করতেন তিনি। প্রকৃতপক্ষে প্রশ্ন ফাঁস করে অর্থ হাতিয়ে আসছিলেন।
ডিবি সূত্র জানায়, পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন রাশেদ আহমেদ বাবুল ও মোবিনের কাছ থেকে ৩৫ লাখ টাকায় কেনেন মিজান। পরে সেই প্রশ্ন জাহাঙ্গীর আলম জাহিদের কাছে এক কোটি ২০ লাখ টাকায় বিক্রির কথা ছিল। জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মিজান জানিয়েছেন, জাহিদ তার কাছ থেকে প্রশ্ন কিনে জনতা ব্যাংক কর্মকর্তা সোহেল রানার কাছে ২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় বিক্রির জন্য চুক্তি করেছিলেন। এর আগে আহ্ছানউল্লার কর্মচারী দেলোয়ার জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, প্রতি প্রশ্নপত্র সরবরাহের জন্য তিনি ৫০ হাজার টাকা পেতেন। প্রেস কর্মচারী রবিউল পেতেন ১ লাখ। শেষ পর্যন্ত সেই প্রশ্ন ২ কোটি ৮০ লাখ টাকায় বিক্রি হয় সোহেল রানার কাছে। তিনি আবার ১৭৫ জন ক্রেতা টার্গেট করেছিলেন, তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে ১০ লাখ টাকা করে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল।
গোয়েন্দারা জানান, চক্রের দুই সদস্য রাশেদ আহমেদ বাবলু ও মোবিন উদ্দিনকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তারা দু'জনই ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজে চাকরি করেন। তাদের মধ্যে মোবিন এর আগে গ্রেপ্তার দেলোয়ারের শ্যালক।