ব্যয় বাড়লেও কম খরচে পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিচ্ছেন প্রেস মালিকরা - দৈনিকশিক্ষা

ব্যয় বাড়লেও কম খরচে পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিচ্ছেন প্রেস মালিকরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কাগজ ও কালির দাম বৃদ্ধি এবং বাঁধাই ও পরিবহন ব্যয় বাড়লেও সরকারের প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অন্তত ২৫ শতাংশ কম খরচেই পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিচ্ছেন ছাপাখানার মালিকরা। এতে এবার সরকারের প্রায় ২৭৫ কোটি সাশ্রয় হচ্ছে। দরপত্র আহ্বানের পর জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বই ছাপার যাবতীয় উপকরণের দাম বেড়েছে। এতে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের কাজে অনীহা দেখায়।

কিন্তু কয়েকটি পক্ষে বিভক্ত ছাপাখানার মালিকরা কম খরচেই কাজ পেতে নানা চেষ্টায় চালায়। এ সুযোগ নিয়েছে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের দায়িত্বে থাকা ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)। সংস্থাটি বাজারমূল্যের চেয়ে ‘অস্বাভাবিক’ কম ব্যয়েই কার্যাদেশ দিতে যাচ্ছে। এতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের ‘মানসম্মত’ পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ নিয়ে খোদ শিক্ষামন্ত্রী এবং এনসিটিবি কর্মকর্তারাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম গতকাল বলেছেন, ‘আমরা এত কম খরচে কাজ দিতে চাইনি। ব্যবসায়ীরা কম খরচে বই ছাপার কাজ নিচ্ছেন। এখানে এনসিটিবির কিছুই করার নেই। দরপত্রের শর্ত মেনেই তা করা হচ্ছে।’মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক ছাপা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দরপত্রের প্রতিটি শর্ত যথাযথভাবে কার্যকর করব। কাগজ, কালি, গ্লু, বাঁধাইসহ সবকিছুই দরপত্রের স্পেসিফিকেশন (শর্ত) অনুযায়ী আদায় করা হবে।’

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, বিগত সময়ে দরপত্রের মাধ্যমে একই প্রতিষ্ঠান দিয়ে বই ছাপার কাগজ ও ছাপা বইয়ের মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা সরবরাহের ছাড়পত্র দেয়া হতো। এবার ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজ করা হচ্ছে।

এবার বই ছাপার আগে ‘পিএলআই’ (পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন) কাগজ, কালি ও ছাপাখানার মান মূল্যায়ন করবে একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর ছাপা শেষে ‘পিডিএম’ (প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন) করবে আরেক প্রতিষ্ঠান।

দুই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মান যাচাই হলে শিক্ষার্থীদের হাতে মানসম্মত বই পৌঁছে দেয়া যাবে বলে আশা করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তারা বলেন, কোন একটি ‘ইন্সস্পেকশন’ প্রতিষ্ঠান গাফিলতি করলে সেটিও ধরা পড়বে।

কম খরচে কাজ নিয়ে কীভাবে ভালোমানের বই দেবেন- জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ছাপাখানার মালিক বলেন, ‘কাজ না পেলে ছাপাখানা বন্ধ করে দিতে হবে। এ খাতে আমার শত কোটি টাকা বিনিয়োগ, শত শত শ্রমিক আছে। আগে কাজ নেই, পরে দেখা যাক কী করা যায়। সরকার তো আমাদের মেরে ফেলবে না।’

২২ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বই ছাপার পরিকল্পনা :

এবার কয়েকটি ধাপে পাঠ্যবই ছাপার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সব স্তরের বই মুদ্রণের কাজই আগামী ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করতে চাই এনসিটিবি। এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা ও দরপত্রের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদনের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এখন সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি ক্রয় কমিটির অনুমোদন পেলে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যারা কাজ পাচ্ছে তাদের নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড (অনাপত্তিপত্র) দেয়া হবে। এরপর ২৮ দিনের মধ্যে এনসিটিবির সঙ্গে ব্যবসায়ীদের চুক্তি হবে। চুক্তি অনুযায়ী ৭০ দিনের মধ্যে মাধ্যমিকের বই এবং ৫০ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ শেষ করবে প্রিন্টার্সরা (ছাপাখানার মালিকরা)। সবমিলিয়ে ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরো কাজ শেষ হয়ে যাবে।’

এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রায় ৩৪ কোটি ৬১ লাখ ৬৩ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিক স্তরের ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার কপি এবং মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ২৪ কোটি ৬৩ লাখ দশ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১০ কোটি কপি পাঠ্যবই ছাপতে ৯৮টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়।

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দরপত্রের শর্তানুযায়ী প্রাথমিক স্তরের বই ৮০ শতাংশ জিএসএমের (গ্রাম/স্কয়ার মিটার) কাগজে ৮৫ শতাংশ উজ্জ্বলতা বা পাল্প থাকতে হয়। সম্প্রতি জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে এই মাপের প্রতি টন কাগজের দাম বর্তমানে এক লাখ থেকে এক লাখ ১৮ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকার মতো হয়েছে।

আর বইয়ের কভারে ২৩০ জিএসএমের আর্ট কার্ড (মোটা কাগজ) ব্যবহার করতে হয়; যার প্রতি টনের দাম এক লাখ ৪০ হাজার টাকার মতো। তবে ব্যবসায়ীরা যখন দরপত্রে অংশ নেয় তখন ৮০ জিএসএম কাগজের টনপ্রতি মূল্য অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কম ছিল।

২৭৫ কোটি টাকা সাশ্রয়েও সংকটে এনসিটিবি

এবার প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপতে প্রতি ফর্মার (৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা) প্রাক্কলিত ব্যয় দুই টাকা ৯০ পয়সা ধরা হয়েছিল। কিন্তু সর্বনিম্ন দরদাতাদের প্রায় ২৫ শতাংশ কম খরচে কাজ দেয়া হচ্ছে।

এই স্তরের বই ছাপাতে গত বছর ব্যয় হয়েছিল ২৬৯ কোটি টাকা। এবার এই স্তরে বই ছাপাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) কাছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছে এনসিটিবি।

আর মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯৯২ কোটি টাকা প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। কিন্তু এর বিপরীতে মাধ্যমিকের বইয়ের জন্য ৮৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে এনসিটিবি। এ হিসাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট বরাদ্দ থেকে ২৫ শতাংশ ব্যয় কম ধরনে সাশ্রয় দাঁড়ায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকা।

অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জানান, দরপত্রের মূল্যায়ন শেষে দেখা যাচ্ছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে গড়ে ২৫ শতাংশ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপাতেও প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত খরচ দুই টাকা ৮৪ পয়সা ধরা হয়েছিল। কিন্তু ব্যবসায়ীরা কেউ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে, কেউ ৩০ শতাংশ, কেউ সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ কমেও দরপত্রে অংশ নিয়েছে। গড়ে ২৫ শতাংশ কমে কাজ দেয়া হচ্ছে। মাধ্যমিকের বই ছাপাতে মোট ১৮২টি লটে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল।

এনসিটিবির প্রাক্কলিত ব্যয়ের বাইরে এবার মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর (প্রায় আড়াই কোটি) জন্য ‘কিশোর বঙ্গবন্ধু’ নামের একটি বই ছাপা হচ্ছে। এই বই ছাপাতে সংস্থাটির প্রায় ৫৫ থেকে ৬০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।

এছাড়া ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ছাপাতে বাড়তি খরচ বহন করতে হচ্ছে এনসিটিবিকে। কারণ ওই স্তরের বইয়ের ‘সাইজ’ অনেকটাই বড় হয়ে যাচ্ছে। এই স্তরের বইয়ের জন্য এনসিটিবির প্রায় ৪৬২ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হচ্ছে।

অন্য ব্যয়ের মধ্যে ব্রেইল বই ছাপাতে বাড়তি তিন কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। বই ছাপাতে প্রায় ৫০ কোটি টাকা এনসিটিবির ‘সার্ভিস চার্জ এবং বইয়ের মান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানের চার্জ প্রায় দুই কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044188499450684