বরাবরের মতোই এবারও এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ভর্তি করা হবে একাদশ শ্রেণিতে। কোন কলেজ কেন চয়েস দেবেন ভর্তিচ্ছুরা, কোন কোন বিষয় বিবেচনায় নেয়া জরুরি, দশটির চয়েসক্রম কীভাবে দেবেন, এসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন দেশসেরা ঢাকা কলেজসহ কয়েকটি কলেজের অধ্যক্ষরা।
শিক্ষার্থীদের নতুন কলেজে ভর্তির পরামর্শ নিয়ে দৈনিক আমাদের বার্তার সাথে কথা বলেছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী এবং মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ।
কলেজে ভর্তিতে অধ্যক্ষরা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ বাড়ির কাছের কলেজকে প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের মতে, দূরের কলেজে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা বাবা-মার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে। অনেক ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টা দূরের কলেজে ভর্তি হওয়ার ফলেও যাতায়াতে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় চলে যায়। তাছাড়া করোনাকালে যাতায়াতে বাড়তি অসুবিধা। এতে শিক্ষার্থীদের ওপর পরবর্তী সময়ে চাপ পড়বে বলেও মনে করেন তারা। এছাড়াও তীব্র আবাসিক সংকটে মাঝপথে ভর্তি বাতিল করতে হয় অনেককে।
বাড়ির কাছের কলেজের ভর্তির আবেদন করার পরামর্শ :
বাড়ির কাছের কলেজে শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবেই স্কুল থেকে বেরিয়ে একটি ছেলে অথবা মেয়ে যখন একটি কলেজে যায়, তখন তার মানসিক বিকাশের ওপর অন্যরকম প্রভাব পড়ে। সে নিজেকে প্রাপ্তবয়স্ক ভাবতে শুরু করে। কিন্তু আমরা জানি, ১৬-১৭ বছরের একজন শিক্ষার্থী অনেক ভুল করতে পারে। তাই এ মুহূর্তে অভিভাবকরা একটি ভালো ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমি একজন অধ্যক্ষ এবং একজন পিতা হিসেবে বলব উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীকে বাবা-মায়ের সঙ্গে রাখা ভালো। তাই আমি মনে করি শিক্ষার্থীদের বাসার আশেপাশের কলেজে ভর্তি করাটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
তিনি আরও বলেন, ভালো কলেজগুলোর প্রতি শিক্ষার্থীদের অনেক আগ্রহ থাকে। তবে একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য অনেক সময় চলে যায়। শিক্ষার্থীরা দূরের কলেজে ক্লাস করে বেশিরভাগ সময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে, যা পরবর্তীতে মানসিক চাপ সৃষ্টি করে।
মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী বলেন, দেশের সব জায়গায় ভালো প্রতিষ্ঠান আছে। তবে করোনাকালে সবার উচিত বাসার কাছের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দেয়া। আমার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০০ আসন রয়েছে। আমি আশেপাশের শিক্ষার্থীদের আমার কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করি। কখনোই দূরের কোনো শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে বলি না। দূরে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত নিয়ে একটা সংকটে পড়বে। যে সংকট করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেলে আরও প্রকট হবে।
মোহাম্মদপুরের কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে তারা যেন কাছাকাছি কলেজে ভর্তি হয়। দূরের কলেজে ভর্তি হলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অসুবিধা হবে। এছাড়া অন্যান্য অসুবিধা দেখা দিতে পারে। ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা দেখা দেবে। আর মেয়েরা অনেক সময় দূরের কলেজে ভর্তি হলে উত্যক্তের শিকার হয়। তাই শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে নিকটবর্তী ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার।
বিবেচনা করে দিতে হবে চয়েস :
এসএসসি ও সমমানের প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি আবেদনের চয়েস পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যক্ষরা। অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, না বুঝে চয়েস না দিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় বিবেচনা করে ভর্তির চয়েস দেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ গত কয়েক বছরে দেখা গেছে ঢাকা কলেজের মেরিটে যারা চান্স পেয়েছিল তাদের নম্বর ছিল ১ হাজার ১৮০-র বেশি। এখন কোনো শিক্ষার্থী, যে ১ হাজার ১৫০ নম্বর পেয়েছে সে নিঃসন্দেহে ভালো শিক্ষার্থী। কিন্তু সে ঢাকা কলেজ প্রথম চয়েস দিলে তার চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই তাকে বিবেচনা করে চয়েস দিতে হবে।
একই পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী এবং অধ্যক্ষ মো. রহমতুল্লাহ।
মাইগ্রেশনের সুযোগ কাজে লাগাতে চয়েস দিতে হবে বুঝে শুনে :
অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, কলেজ মাইগ্রেশনের সুযোগ থাকছে। এতেও কিছু সমস্যায় পড়ে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু একজন শিক্ষার্থী যদি তার চয়েসের পেছনের দিকের একটি কলেজে চান্স পান, পরে তার চয়েসের ওপরের দিকের কলেজে আসন ফাঁকা থাকলে সে কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে। তাই তাদের উচিত এসব দিক বিবেচনায় রেখে তাদের চয়েস দেয়া।
প্রাধান্য দিতে হবে কলেজের পরিবেশকেও :
শুধু কলেজের নাম দেখে চয়েস না দিয়ে কলেজের পরিবেশকেও প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী। তিনি বলেন, একটি কলেজ শুধু ক্লাসরুমের সমষ্টিই নয়। একটি কলেজ একজন শিক্ষার্থীর জীবনের একটি অংশ। একটি কলেজের খোলামেলা পরিবেশ, তার মাঠ ইত্যাদি শিক্ষার্থীদের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ভর্তির চয়েস দেয়ার আগে যে কলেজের পরিবেশ, কলেজের ঐতিহ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে।
প্রাধান্য দিতে হবে অনলাইন ক্লাস নেয়ার সক্ষমতাকেও :
কলেজ ভর্তির চয়েস দেয়ার ক্ষেত্রে কলেজের অনলাইন ক্লাস নেয়ার সক্ষমতাকেও প্রাধান্য দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর আলী। তিনি বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে কোনও সময় সশরীরে ক্লাস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমরা আগের বছরও দেখেছি, সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও অনলাইনে যেসব কলেজ ক্লাস নিতে পেরেছে, তাদের শিক্ষার্থীরা সব দিক থেকে এগিয়ে ছিল। অন্যান্য কলেজে, যেখানে অনলাইন ক্লাস হয়নি, তার থেকে অনলাইন ক্লাস হওয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কম হয়েছে। তাই এ বিষয়টি কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। আর কেউ ক্লাসে না বুঝলেও অনলাইনে ধারণকৃত ক্লাস দেখে সে নিজেই সব বুঝতে পারবে।
হোস্টেলের বিষয়ে আগেই খোঁজ নিতে হবে :
দূরের হোস্টেল থাকা কলেজে ভর্তির চয়েস দেয়ার ক্ষেত্রে হোস্টেলের বিষয়ে আগেই খোঁজ খবর নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, ঢাকা কলেজে আসন সংখ্যা ১ হাজার ২০০। প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য হোস্টেলে আসন সংখ্যা খুবই কম। তিনশ’র বেশি থাকার সুযোগ দেয়া যায় না। বাকিদের মেসসহ বিভিন্নভাবে থাকতে হয়। তাই ভর্তির সময় বাইরে শুনলেই হবে না যে অমুক কলেজে হোস্টেল সুবিধা আছে। বাস্তবে কতজন হোস্টেল সুবিধা পাবে তা জেনে নেয়া উচিত আগে।
কলেজে ভর্তির আবেদন শুরু ৮ জানুয়ারি :
২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন ৮ জানুয়ারি শুরু হবে। এবারও অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন ও মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। তিন ধাপে একাদশে ভর্তির অনলাইন আবেদন নেয়া হবে। আর ২ মার্চ থেকে একাদশের ক্লাস শুরু হবে।