ভর্তির নামে বিনা রসিদে অর্থ আদায়ের অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

ভর্তির নামে বিনা রসিদে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি |

চৌগাছা উপজেলায় বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই দেয়ার সময়ে বিনা রশিদে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই টাকা আদায়ে কোন ধরনের রশিদ দেয়া হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। এমনকি কেন এই টাকা নেয়া হচ্ছে তাও শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের জানানো হচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন একজন অভিভাবক।

গতকাল উপজেলার সৈয়দপুর-কোটালীপুর (এসকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক টাকা আদায়ের ভিডিওসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। তিনি জানান, স্কুলটিতে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা ৬ষ্ট শ্রেীণতে ২৫০ টাকা এবং ৭ম, ৮ম, ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে ২০০ টাকা করে আদায় করছেন। তখন উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে (শাহিনুর) বলেন ‘এক সপ্তাহ অপেক্ষা করেন, প্রতিষ্ঠান প্রধান এ বিষয়ে রশীদ দিয়ে দেবেন।’ পরে ওই অভিভাবক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কথায় সন্তুষ্ট না হতে পেরে সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামানের মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

স্কুলটির প্রধান শিক্ষক হানেফ আলী বলছেন, গত বছরের বেতন হিসেবে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। আর ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আগাম ৫ মাসের বেতন হিসেবে ৫০ টাকা করে ২৫০ টাকা নেয়া হয়েছে। 

শাহিনুর রহমান বলেন, আমার একজন সন্তান ওই স্কুলে এবছর ৯ম থেকে ১০ শ্রেণীতে উঠেছে। তারসহ আমাদের বাড়ির আরও কিছু ছেলে মেয়ে যারা বিভিন্ন ক্লাসে উঠেছে সবার কাছ থেকে ২শ’ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। আর ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। টাকা আদায় করছেন স্কুলের অফিস সহকারী শরিফুল ইসলাম বাদশাহ, শিক্ষক আক্তারুল ইসলাম ও স্কুলের বিএসসি শিক্ষক। তবে এটা কিসের টাকা, কেন নেয়া হচ্ছে তা এসব শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলেও তারা বলতে পারেননি। তারা শুধু বলেছেন প্রধান শিক্ষক এই টাকা নিতে বলেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে সৈয়দপুর-কোটালীপুর (এসকে) মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হানেফ আলী মোবাইল ফোনে বলেন, হ্যা টাকা নেয়া হচ্ছে। না নিলে প্রতিষ্ঠান কিভাবে চালাব? পরে তিনি বলেন এগুলো গত বছরের বেতন হিসেবে নেয়া হচ্ছে। 

৬ষ্ঠ শ্রেণীর বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ফি নেয়ার জন্য সরকারি নির্দেশনা আছে। তবুও আমাদের শিক্ষা অফিসার স্যার বলেছেন ভর্তি ফি না নিয়ে বেতন হিসেবে নিতে।

সে কারণে ৫০ টাকা করে ৫ মাসের অগ্রিম বেতন নেয়া হচ্ছে। এই করোনার সময়ে মানুষ এমনিতেই সমস্যায় আছে, অথচ আপনারা তাদের থেকে অগ্রিম পাঁচ মাসের বেতন আদায় করছেন? তিনি তখন বলেন, না নিয়ে কি করব? আমাদের তো স্কুল চালাতে হবে। রশিদ ছাড়াই এই টাকা আদায় করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার স্কুলের রশিদ শেষ হয়ে গেছে। আমরা সাদা কাগজে তালিকা করে রাখছি, এক সপ্তাহের মধ্যেই রশিদ দিয়ে দেব। বাচ্চাদের তো বলা হয়নি এটা কিসের টাকা? অভিভাবকরাও জানেন না... জবাবে তিনি বলেন এক সপ্তাহের মধ্যে রশিদ দিয়ে দেয়া হবে।

তখন বুঝতে পারবেন এটা কিসের টাকা। বলা হয় পত্রিকায় নিউজ হবে আপনার বক্তব্য কি? তখন তিনি বলেন গত বছরের বেতনের টাকা। তিনি আরও বলেন, ক্লাস এইটে বেতন ৭২ টাকা। তাদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ২শ’ টাকা। অভিবাবকদের যদি এতেও না হয় তাহলে আমরা ১২ মাসেরই বেতন আদায় করব।

জানা গেছে উপজেলার প্রায় অর্ধশত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সবগুলোতেই এভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন করোনার কারণে গত বছর মার্চ মাস থেকেইে স্কুল বন্ধ রয়েছে। স্কুল যেখানে সারাবছরই বন্ধ রয়েছে, তাহলে স্কুলের খরচই বা কিসের? তাছাড়া শিক্ষকরা তো সরকারের দেয়া বেতন নিয়েছেন।

গ্রামের স্কুলগুলোর শিক্ষকরা তো এই দশমাসে একটিবারের জন্যও তাদের শিক্ষার্থীদের কোন প্রকার খোঁজ-খবর নেননি। তাদের তো শিক্ষার্থীদের জন্য মুঠোফোন খরচও হয়নি। আর আমাদের মতো ছা-পোষা কৃষক মজুররা কর্ম হারিয়েছি। সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি।

সেখানে করোনার বছরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতনের টাকা আদায় করা হবে কেন? আর অগ্রিম বেতনই বা নেয়া হবে কেন? বিষয়টিতে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামানের মুঠোফোনে বেলা তিনটা ২০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে কয়েকবার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067288875579834