ভালোমানের স্কুল এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণের সুপারিশ - দৈনিকশিক্ষা

ভালোমানের স্কুল এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণের সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

মানসম্মত সেগুলোকে এমপিওভুক্তি ও জাতীয়করণের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটি। কমিটি মনে করে, যাদের (স্কুল) পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের কয়েক বছর অপেক্ষায় না রেখে এমপিওভুক্ত করা উচিত। যেসব স্কুল কোয়ালিফাইড তাদের সরকারীকরণ করা এবং দ্বৈত পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হবে। এ ছাড়া বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালুর জন্য আগামী ১০ বছরে কোন কোন সেক্টরে উন্নয়ন করতে হবে তার একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির এই মিটিংয়ের কার্যপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। সভায় কমিটির সভাপতি জামালপুর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অন্য সদস্যরা এতে বক্তব্য দেন।

সভায় কমিটির সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বাজেটের যে অর্থ বেঁচে যায় তা দিয়ে যতদূর সম্ভব কিছু কোয়ালিফাইড স্কুল এমপিওভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বলেন, যাদের পাঠদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের কয়েক বছর অপেক্ষায় না রেখে এমপিওভুক্ত করা উচিত। যেসব স্কুল কোয়ালিফাইড তাদের সরকারীকরণ করা এবং দ্বৈত পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি আনতে শিগগিরই শিক্ষা সচিবকে কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) নিয়ে জরুরি বৈঠক করার নির্দেশ দেন তিনি।

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনা কেবিনেট সভায়, জাতীয় অর্থনৈতিক কমিটির নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় জোর দিয়ে বলেছেন আইএমইডিকে আরও শক্তিশালী করার জন্য। আইএমইডির লোকবলের অভাব থাকায় ঢাকায় বসে ১ হাজার ৮০০ প্রকল্প দেখা সম্ভব নয়। সেখানে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল প্রতিটি বিভাগে একটি করে অফিস খোলার জন্য। যদি উপযুক্ত মানের কর্মকর্তা সেখানে নিয়োগ দেওয়া যায় তাহলে ওই বিভাগের প্রকল্পগুলো তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে অনুমোদন দিলেন। একটা রেজল্যুশন হলো, তার অর্ডার হলো। এটা নিয়ে যখন কাজ শুরু করা হলো, তখন অনেক বাধা এলো। অর্ডারটি এখনো আছে। সেটা নিয়ে এখনো চেষ্টা করা হচ্ছে কাজ করার জন্য।

কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, শিক্ষা খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় তা ১৬১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫৫তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ সবচেয়ে কম। শিক্ষা খাতের বরাদ্দ নিয়ে স্থায়ী কমিটি কোনো সহায়তা করতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এখন কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে আধুনিক উন্নত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু বেসিক দুর্বলতা হলো সক্ষমতার ঘাটতি।

এ ব্যাপারে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) কোনো সুপারিশ আছে কি না, তা তিনি জানতে চান। দেশে যত বেশি শিক্ষিত, ততই বেকারত্বের হার বেশি। চাহিদা যেগুলো আছে, সেগুলোর একটি সিমুলেশন করতে হবে। আগামী ১০ বছর বাংলাদেশ কোথায় নিজেকে দেখতে চায় এবং সেটার জন্য কোন কোন সেক্টরে গ্র্যাজুয়েট দরকার, সেটার সঙ্গে এডুকেশন সিস্টেমটা সিমুলেট করে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ শিক্ষাব্যবস্থায় একটা মডেল সিটিজেন তৈরি করতে যাচ্ছে, অর্থনীতির যে রোডম্যাপ আছে, সেটার সঙ্গে সংগতি রেখে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিন থেকে গ্র্যাজুয়েট তৈরি করতে হবে।

সভায় সাবের হোসেন আরও বলেন, আইএমইডিকে শক্তিশালী করা হবে এ কথাটি অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছে। আজ পর্যন্ত শক্তিশালীকরণের কোনো নমুনা গ্রাউন্ডে দেখা যাচ্ছে না, সেটা দেখতে চাই। আইএমইডির কাছে যে রিপোর্টগুলো এসেছে, সেই অনুযায়ী কোনো পিডি বা কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এমন কোনো উদাহরণ নেই। তাদের মান অনুযায়ী যে কাজ করার কথা তা তারা করেনি, তার জন্য পিডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? প্রশ্ন রাখেন তিনি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পরিশ্রম করে, মেধা খাটিয়ে যে রিপোর্টগুলো দাঁড় করানো হচ্ছে, সেগুলো থেকে যদি সর্বোচ্চ ইউটিলিটিটা না নেওয়া যায়, তাহলে শুধু রিপোর্ট দিয়ে লাভ হবে না। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে যারা কমপিটেন্ট পিডি তাদের কোনো গ্রেডিং করা হয় না। একজনের পারফরম্যান্স কী হলো সে বিবেচনায় রেখে তাকে আগামীতে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না, এ বিষয়টি ইভ্যালুয়েশনের মধ্যে রাখা হয় উচিত। সেটা কতটুকু করা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে পরিকল্পনা কী, তা তিনি জানতে চান।

সভায় সদ্য পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া তৎকালীন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, সমুদয় বাজেটের ৪০ ভাগ হলো উন্নয়ন ব্যয়। উন্নয়ন ব্যয় প্রকল্প বাস্তবায়নের বড় অভিযোগ তোলে সিভিল সোসাইটি বা থিংক ট্যাঙ্ক বা সাধারণ মানুষ। প্রকল্পের অনেক পরিদর্শন বেড়েছে, মূল সমস্যা বাস্তবায়ন দক্ষতা বাড়ানো। তিনি বলেন, দেশের বেকার সমস্যা প্রবল। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত ২৯ ভাগের পর্যাপ্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চাকরি কোনোটাই নেই। তাদের কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যাচাই-বাছাই করে জনবল নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে প্রকল্প বাস্তবায়নে সমস্যা থেকেই যাবে। আইএমইডি থেকে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেওয়ার পর মন্ত্রণালয় সেটা নিয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সে সম্পর্কে আইএমইডিকে অবহিত করে না, এ বিষয়টারও উন্নতি হওয়া দরকার।

কমিটির অপর সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ল্যাবরেটরিগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করার পাশাপাশি শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের গবেষণা সহায়ক পরিবেশ তৈরি ও প্রশিক্ষণ প্রদানে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অনেক মন্ত্রণালয় আছে, বাজেটে যা বরাদ্দ দেওয়া হয় তা খরচ করতে পারে না। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় আছে, যা প্রয়োজন তার চেয়ে কম বরাদ্দ পায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও যা বরাদ্দ পেয়েছে, তা খরচ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পতাকা উত্তোলন হচ্ছে না। শুধু মাদ্রাসা নয়, কোনো স্কুল, কলেজ যদি এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত না করে তাহলে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কিছু শিক্ষক যুগের পর যুগ তাদের পছন্দের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি করছেন। স্কুল ও কলেজ এই দুটো জায়গায় ম্যানেজিং কমিটির এই পদ্ধতি পরিবর্তন করা প্রয়োজন। এমপিওভুক্তির বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অন্যানা প্রতিষ্ঠান শুধু পৌর এলাকায় না করে একটা সুষম বণ্টনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলগুলোকেও উন্নত করতে হবে। অন্যথায় গ্রামাঞ্চল থেকে দারিদ্র্য দূর হবে না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না।

 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050950050354004