ভিকারুননিসায় কোটি টাকার ভোট চলছে - দৈনিকশিক্ষা

ভিকারুননিসায় কোটি টাকার ভোট চলছে

রুমন তূর্য |

জাঁকজমক আয়োজন ও কোটি টাকার প্রচার শেষে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত গতে যাচ্ছে রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোট। আজ সকাল দশটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ভোট চলবে। এ প্রতিষ্ঠানটির ভোটার তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও পুরনো তালিকা অনুসারেই ভোটের আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সভাপতিসহ ১১ সদস্যের গভর্নিং বডি গঠন করা হলেও সরাসরি অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচিত হবেন ৯ জন। তাদের মধ্যে ৬ জন অভিভাবক প্রতিনিধি ও ৩ জন শিক্ষক প্রতিনিধি। এসব পদের জন্য মোট ২৭ প্রার্থী এ নির্বাচনে সরাসরি অংশ নেবেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শাখার সামনে দেখা গেছে শেষ মুহূর্তে প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের প্রস্তুতি। যেদিকে চোখ যায়, পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুন। প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বিলি করা প্রচারপত্র গড়াগড়ি খাচ্ছে রাস্তায়। পোস্টার-ব্যানারের ভিড়ে প্রতিষ্ঠানটির মূল সাইনবোর্ড ঢাকা পড়ে গেছে।

একদিকে অফিসার্স ক্লাব থেকে শান্তিনগর মোড় এবং সিদ্ধেশ্বরী মৌচাক এলাকায় পর্যন্ত ছেয়েছে পোস্টার-ব্যানারে। পাশের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সাইনবোর্ড নির্বাচনী ব্যানারে ঢাকা পড়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির গেইট ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারণার বিরাট বুথ। আজ এখান থেকেই চলবে প্রচার।  

সাধারণ অভিভাবকদের ধারণা এ নির্বাচনে প্রার্থীরা কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছন প্রচারে। এদিকে এ নির্বাচনের ভোটার তালিকা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে অভিভাবকদের। সাধারণ অভিভাবকদের মতে, ‘ভর্তি-নিয়োগ বাণিজ্য করে লাভবান হওয়ার জন্যই কোটি টাকার প্রচার চালানো হয়। যদিও প্রার্থীরা বলছেন, নিজেদের অবস্থান জোরালো করতেই এতো আয়োজন। তারা সভাপতি মনোনয়ন নিয়ে অনিয়মের শঙ্কা করছেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানটির সামনে কথা হয় এক অভিভাবক শ্যামল ঘোষের সঙ্গে। ভিকারুননিসার ছাত্রী নিজ মেয়েকে প্রতিষ্ঠানটির নাচের ক্লাস থেকে নিতে এসেছিলেন তিনি। ব্যাপক প্রচার নিয়ে শ্যামল ঘোষ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, তারা তো ভোট করছে ভর্তি বাণিজ্য আর নিয়োগ বাণিজ্য চালাতে। আগেও তো নির্বাচন দেখেছি, এমনটা দেখিনি, কিন্তু ছাত্রীদের জন্য কিছু করা হয় না। তারা গভর্নিং বডিতে পদ পেয়ে কি করেছেন তা আমরা দেখেছি। আর্থিকভাবে লাভবান না হলে কোনো এ পদে জন্য কোটি টাকা খরচ করছে তা সবাই বুঝতে পারছেন। 

কলেজের অভিভাবক সদস্য পদপ্রার্থী হুমায়ূন কবির হওলাদার আমাদের বার্তাকে বলেন, প্রচারণা বেশি দেখা যাচ্ছে কারণ কম জায়গার মধ্য ২৭ প্রার্থী প্রচারণা চালচ্ছেন। সবাই আসলে নির্বাচনে জিততে চান এজন্য এ ব্যাপক প্রচার।

এ নির্বাচনের প্রচারণায় কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, আমার লাখ খানেক টাকা খরচ হয়েছে। আমাদের অনুসারীরাও নিজ নিজ জায়গা থেকে খরচ করছেন। আমি নিজেতো দাঁড়াইনি নির্বাচনে দাঁড়াতে চায়নি। আমাকে যারা দাঁড় করিয়েছেন তারা নিজেদের সম্মানের স্বার্থে এ টাকা খরচ করছেন।  

হুমায়ূন কবির হওলাদার আরো বলেন, ‘আমাদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার কথা থাকলে দেখা যায় আশপাশের গণ্যমান্য ও জঘন্যরা একজনকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দিয়ে আমাদের বলেন তাকে ভোট দিতে। আবার অনেক সময় সরকারের পক্ষ থেকে একজনকে সভাপতি পদে দাঁড় করিয়ে আমাদের বলা হয় তাকে ভোট দিতে। আগেও এমনটি হয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা শঙ্কা আছে।  

প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীদের স্বজনরাও। মোহম্মদ মিজানুর রহমান নামের একজন অভিভাবক পদপ্রার্থীর বাবা সত্তোরর্ধ্ব হাজী খলিলুর রহমান ও প্রার্থীর ভাগিনা আব্দুর রহমানও অংশ নিচ্ছেন প্রচারণায়। ব্যাপক প্রচারণা নিয়ে জানতে চাইলে হাজী খলিলুর রহমান বলেন, এভাবে প্রচারণা চালানো কখনোই রুচিশীল মানুষের কাজ না। আসলে অনেক প্রার্থী ছোট জায়গায় প্রচারণা চালানোয় এ অবস্থা। প্রতিষ্ঠানটির মূল ফটকের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নামই দেখা যাচ্ছে না ব্যানার পোস্টারের জন্য। 

ভাগিনা আব্দুর রহমান জানান, তারাও প্রায় একমাস ধরে নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। এজন্য মোট কত টাকা খরচ করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে দাবি করেছেন, প্রার্থীরা পরিচিতির জন্য ব্যাপক অর্থ খরচ করে প্রচারণা চালাচ্ছেন।  

এ নির্বাচনের ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে এক অভিভাবক আদালতে দারস্থ হলে প্রথম দফায় ভোট স্থগিত করা হয়। পরে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিভাবকদের কারো কারো দাবি, নির্বাচন স্থগিত হলে নতুন করে তফসিল ঘোষণা করা উচিত। কিন্তু তা করা হয়নি। আদালত ভোটার তালিকায় অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন স্থগিত করেছিলো। সে ভোটার তালিকাতেই নির্বাচন করা হচ্ছে। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব পরীক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভিকারুননিসা কলেজে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের অভিভাবকদের ভোটার করা হয়নি। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তাদের ভোটার করা হয়েছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির ভোটার হতে পারেননি প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবক ফোরামের নেতা আবদুল মজিদ সুজন নিজেও ভোটার হতে পারেননি। তিনি আক্ষেপ নিয়ে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার মেয়ে এসএসসি দিয়ে এই কলেজেই ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাই আমাদের ভোটার করা হয়নি।  

এসব অভিযোগ ও নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার পক্ষ থেকে গতকাল শুক্রবার ও গত বৃহস্পতিবার একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার ও ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহনাজ সুলতানার সঙ্গে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058140754699707