ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া রাকিবুল হাসান। সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। রাকিবুল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের চারাতলা গ্রামের নবীর হোসেনের ছেলে। চার বছর ধরে তিনি ভ্যান চালিয়ে লেখাপড়ার খরচ যোগাড় করে আসছেন।
জানা গেছে, রাকিবুল হাসানের বাবা একজন দিনমজুর। মা অন্যের গরু-ছাগল পালনের পাশাপাশি বিড়ি বাঁধেন। সাত শতক বসত ভিটাই তাদের সম্বল। ভাঙ্গাচুরা টিনের ঘরে চার ভাইসহ মা-বাবার সাথে থাকেন। তার ছোট দুই যমজ ভাই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারাও লেখাপড়ার অবসরে বাবার সাথে কখনো দিনমজুরের কাজ করে কখনো ভ্যানও চালায়। আর রাকিবুল হাসান যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের গদখালী, নাভারণ, চারাতলা-আন্দোলপোতা রাস্তা এলাকাতে ভ্যান চালান।
রাকিবুল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে ভ্যান চালাচ্ছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিকের ব্যবস্থা না থাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে মেসে থাকতে হয়। তাতে প্রতিমাসে খরচ হয় অন্তত সাত হাজার টাকা। যা তার পারিবারের দেয়ার কোন উপায় নেই। তাই পাঠদান বন্ধ থাকলেই তিনি বাড়ি চলে এসে ভ্যান চালান।
রাকিবুল আরও জানান, হাইওয়ে রোড়ে পুলিশ ভ্যান চালাতে দেয় না। তাছাড়া, থ্রিহুইলারের কারণে মানুষ ভ্যানে উঠতে চায় না। এজন্য কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।
রাকিবুলের মা নাসরিন বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বড়ো ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ও যমজ দুই ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। দিনমজুর স্বামী তাদের ভরনপোষণ ও লেখাপড়ার খরচ দিতে না পারায় সন্তানরা ভ্যান চালায়, দিনমজুরের কাজ করে। রাকিবুলকে টাকার অভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারছিলাম না। শেষমেষ একটি বাড়ি, একটি খামার থেকে ১২ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা দেই। আমি অন্যের ৪ টি ছাগল ও ২ টি গাভি পালন করি। বাড়িতে আকিজ বিড়ি বাঁধি। তাতে সপ্তাহে ১৮০-২০০ টাকা আয় হয়। সে টাকা দিয়ে রাকিবুলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় নেয়া ঋণের টাকার কিস্তি দিই। তিনি ছেলেদের লেখাপড়ার খরচের সহযোগিতাসহ ছোট সন্তান গর্ভকালীন সময়ে মাতৃত্বভাতার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েও কোন ফল পাননি বলে অভিযোগ করেন।
চারাতলা এলাকার দেউলি শতদল পাঠাগার ও ক্রীড়া সংঘের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, রাকিবুল হাসানের লেখাপড়ার বিষয় আমাদের সহযোগিতা করা উচিৎ। না হলে দারিদ্র্যতায় তার লেখাপড়া বন্ধ হলে আমরাও দায়ী থাকবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অর্থের অভাবে কারোর লেখাপড়া বন্ধ হবে না। তার লেখাপড়াসহ পরিবারকে যথাসম্ভব সহযোগিতা দেয়া হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।