ভয়াবহ ব্যাধির বিস্তার - দৈনিকশিক্ষা

ভয়াবহ ব্যাধির বিস্তার

এমাজউদ্দীন আহমদ |

গত ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগের রাতেই ফাঁস হয়ে যায়- এই সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত-প্রচারিত হওয়ার পর ফের শঙ্কার সৃষ্টি করে। ‘ঘ’ ইউনিটের (ঢাবির) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার ঘটনায় প্রায় তাৎক্ষণিক কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তি আটক হওয়ার পরও সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ বিষয়টি অস্বীকার করার প্রবণতা আরও বেশি শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। যদি বিষয়টি এ রকমই হয় তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাদের আটক করলেন তাদের মধ্যে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও পরীক্ষার্থীরা যে রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য কী হবে? সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, যে কোনো পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস এক ভয়াবহ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে।

২৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে একটি কোচিং সেন্টারের সংশ্নিষ্টতা পেয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। ওই প্রতিবেদনে এ কথাও বলা হয়েছে, এই কোচিং সেন্টার থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁস করে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। রাজধানীর ফার্মগেটকেন্দ্রিক ওই কোচিং সেন্টার ও জালিয়াতিতে জড়িতদের নাম তদন্তের স্বার্থে জানাতে রাজি হননি তদন্ত সংশ্নিষ্ট সিআইডি কর্মকর্তারা। এরপরও কি এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকতে পারে? প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে কোনো কোনো কোচিং সেন্টার জড়িত- এমন অভিযোগ এই যে প্রথম উঠেছে তাও নয়। সামাজিক অবক্ষয় ও অনৈতিকতা ক্রমেই সচেতন মানুষের উদ্বেগের মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। এই উদ্বেগের একটি বড় কারণ, শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং এই দুর্নীতির সঙ্গে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হচ্ছে সরকারদলীয় অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এর আগেও যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা এবং নানা সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তখনও নানা মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে; কিন্তু সুফল মেলেনি। গণমাধ্যমে ব্যাপক পর্যালোচনা হয়েছে, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্নিষ্টরা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু খুব চিন্তার কারণ হলো, এরপরও এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা রোধ করা যায়নি, যাচ্ছে না।

যে কোনো চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ইতিমধ্যে কম ঘটেনি। বড় লজ্জার কথা। অসদুপায়ে যে কোনো চাকরি লাভের চেষ্টা করাই নিন্দনীয় অপরাধ। আর সেই চাকরি যদি হয় শিক্ষকের চাকরি, তাহলে তা লাভের জন্য অসদুপায় অবলম্বন করা দ্বিগুণ নিন্দনীয় এবং শতগুণ লজ্জাজনক। বিশেষ করে শিশুদের হাতেখড়ি যারা দেবেন তারাই যদি অসদুপায় অবলম্বন করেন, তাহলে নিন্দার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না। লজ্জায় হেঁট হয়ে আসে মাথা। বিভিন্ন স্তরে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ইতিমধ্যে এমন ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে। কী করে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে তা জানার জন্য যেমন দৃষ্টি দিতে হবে উৎসে, তেমনি তা স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য আশু কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কিন্তু বারবারই এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শুধু অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতির মধ্যে আটকে আছে। কেন? এই নীতিহীনতার, এই ন্যক্কারজনক অপরাধের কি কোনোই প্রতিকার নেই? এ কথা তো অনস্বীকার্য যে, প্রশ্নপত্র তৈরির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া বাইরের কারোর পক্ষে অন্যত্র তথ্য পাঠানো সম্ভব নয়। একই সঙ্গে আরও একটি বিষয়ের প্রতি আমার মনে হয় গভীর মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। বিষয়টি হলো, এমসিকিউর ব্যাপারে দ্রুত ভাবতে হবে। সৃজনশীল প্রশ্নের হার বাড়িয়ে সবক্ষেত্রে এমসিকিউর হার বিশ শতাংশের মধ্যে সীমিত করা জরুরি বলে মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য আমার ছাত্র। উপাচার্যের প্রতি আমার আহ্বান, সংশ্নিষ্ট সবাইকে নিয়ে দ্রুত বসে পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতি পাল্টানোর কথা ভাবুন। ব্যবস্থা না বদলালে অবস্থা বদলাবে না।

খুব বিস্মিত হয়ে যাই যখন শুনি কিংবা জানি, কোনো কোনো অভিভাবকও এই বক্র পথে পা রেখে তাদের সন্তানদের বৈতরণী পার করতে চেষ্টা করেন। একজন অভিভাবক তার সন্তানকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবেন, এটাই তো শাশ্বত নিয়ম অথবা প্রত্যাশা। অথচ সেই অভিভাবকই দুর্নীতির মাধ্যমে সন্তানকে উচ্চশিক্ষার দরজায় কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে পা রাখতে উদ্বুদ্ধ করছেন! বাস্তবতা যখন এমনই তখন তো বলতেই হবে যে, পচন ধরেছে একেবারে মাথায়। সমস্যা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় শুধু অপরাধীকে শাস্তি দিয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে না। মানুষের নৈতিকতা ফিরিয়ে আনার কাজটিকে এখন সর্বাগ্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শুধু আইনি পদক্ষেপ নিয়ে বর্তমান সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হবে না। যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এমন পরিস্থিতিতে কোনো কর্তৃপক্ষ যদি দাবি করে যে, ‘প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না’- তাহলে এই সত্য অস্বীকারের ফল আরও বড় বিপর্যয় ডেকে আনার পথটাই প্রশন্ত করবে, যা শুভ বোধসম্পন্ন কারোরই কাম্য হতে পারে না। বাস্তবতা কিংবা সত্য অস্বীকারে সমাধান তো নেই-ই বরং তাতে দুর্নীতিবাজ চক্র আরও আশকারা পায় এবং দায়মুক্তির পথটি উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। আমরা এমন পরিস্থিতির নিরসন চাই দ্রুত। এমন দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে অনেক। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে আর এমন দৃষ্টান্ত না দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতেই হবে।

চিরাচরিত অভ্যাসমতো ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি’, ‘এটা স্রেফ গুজব’ ইত্যাদি বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা যেমন করা যাবে না, তেমনি এমন সর্বনাশা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপশক্তির হাত আরও শক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি করেও দেওয়া যাবে না। গত এক দশকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অনেক অভিযোগই উঠেছে। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, কোনো ঘটনায় জালিয়াতির পেছনে মূল ব্যক্তিদের শনাক্ত করা গেছে, এমনটি জানা নেই। পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও প্রযুক্তির ব্যবস্থার জালিয়াতির ঘটনা একের পর এক ঘটেই চলেছে। এতে সংযুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন কৌশল ও প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ। এদের শিকড় অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত, বিদ্যমান বাস্তবতা এরও প্রমাণ দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশের অন্য সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা একটি গৌরবোজ্জ্বল উচ্চ বিদ্যাপিঠ। এর ঐতিহ্য গর্বের। কিন্তু যে অশুভ শক্তি এর ঐতিহ্যে কালিমা লেপনে উন্মত্ত, তারা নিশ্চয়ই চুনোপুঁটি নয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্র অনেক দিন ধরেই এই ভয়ঙ্কর অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং চাকরি ও পরীক্ষা পাসের প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন সময় ঘটনা ঘটার পর সচেতন দেশবাসী আশা করেছে, পুরো সত্য উদ্ঘাটিত হবে। কিন্তু সব আশাই দুরাশায় রূপ নিয়েছে শেষ পর্যন্ত। এ রকম কেলেঙ্কারি সব মূল্যবোধকে নসাৎ করে দিচ্ছে। জাতির জন্য নিদারুণ লজ্জা আর গ্লানির বিষয় এটি। শর্ষের মধ্যেই ভূত বসে আছে, যারা এমন কথা বলেন তাদের বক্তব্য উপেক্ষা করার অবকাশ আছে কি? এই ভূত আগে তাড়াতে হবে। সার্বিক প্রয়োজনে কাটাতে হবে আস্থার সংকট। সমাজ এমন এক পর্যায়ে গেছে যেখানে সমষ্টি নয়, ব্যক্তিই যেন প্রধান হয়ে দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা থেকে ফিরতে না পারলে আস্থার সংকট থেকে মুক্তি নেই।

আস্থার সংকট যদি সমাজ জীবনে ঘনীভূত হয়ে পড়ে, তাহলে সমূহ বিপদাশঙ্কা ক্রমেই হয়ে উঠবে প্রকট। খারাপ ঘটনা ঘটার পর যদি এর যথাযথ প্রতিকার না হয়, অপশক্তি চিহ্নিত না হয়, তাহলে সমাজে অন্ধকারের বিস্তার ঘটবে। এবারের ঘটনাটিই যেন হয় এমন ন্যক্কারজনক শেষ ঘটনা। এর কঠোর প্রতিকার নিশ্চিতকল্পে এবং মূল হোতাদের সন্ধানে সর্বশক্তি নিয়োগ করে জনপ্রত্যাশা মোতাবেক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই হবে। এই রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পেতে সরকার ও প্রশাসনের কঠোর এবং নির্মোহ মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। এর বিকল্প নেই। কোনো রকম আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি আর উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকারের মধ্যে আটকে থাকার কিংবা দৃশ্যত কয়েক দিন তৎপরতা প্রদর্শন করে থেমে যাওয়ার অবকাশ আর নেই। কোনো একটি ঘটনার প্রতিকার যদি হয় দৃষ্টান্তযোগ্য, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য নেতিবাচক ঘটনা ঘটার পথও হবে সংকুচিত। ধর্মের নামে, শিক্ষার নামে, চাকরির নামে, ব্যবসার নামে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দিচ্ছে মহলবিশেষ। এদের চিহ্নিত করে শিকড়সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে হবে সবকিছুর ঊর্ধ্বে ওঠে। এসব বিষয়ে এ যাবৎ কথা হয়েছে বিস্তর। এবার অন্তত কাজের কাজটি সম্পন্ন হবে অত্যন্ত দৃঢ়তায়- এই প্রত্যাশা শুভ বোধসম্পন্ন সবার। আমাদের মনে আছে, কেবল প্রশ্নপত্র নয়, অতীতে উত্তরপত্র কেলেঙ্কারির ঘটনাও ঘটেছে। সর্বত্র মেধাশূন্য করার হীন কৌশল চলছেই। এমনটি কখনোই কোনো রাষ্ট্রযন্ত্রের কিংবা দেশবাসীর কাম্য হতে পারে না।

সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানী

সৌজন্যে: সমকাল

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.010396003723145