আসন্ন বাজেটে মাদরাসাসহ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ। একইসঙ্গে মন্ত্রী-আমলাদের বেতনের ৬০ শতাংশ ও সরকারি ব্যয়ের ৫০ শতাংশ খরচ কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। আর ভারতে শিক্ষাখাতে যে পরিমান অর্থ বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়, সমপরিমান অর্থ বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সংগঠনটির নেতারা বলছেন, শিক্ষার বাজেটকে ব্যয় হিসেবে না দেখে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে হবে।
সোমবার রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা। ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল করীম আকরাম। বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল শেখ মুহাম্মদ আল আমিন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন খাতওয়ারি বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে সংগঠনটি। আসন্ন বাজেটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, কৃষিখাতে সারের ভর্তুকি বাড়ানো, স্বাস্থ্যখাতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ বরাদ্দ, সামাজিক নিরাপত্তাখাতে ১৮ শতাংশ বরাদ্দ ও কর্মস্থান-উৎপাদন ঠিক রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি। সংগঠনের পক্ষ থেকে মোট ১৬ দফা দাবি অনুষ্ঠানে উপস্থাপন করা হয়।
শিক্ষাখাতে আসন্ন বাজেট নিয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বলছে, করোনার প্রকোপে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এক মহা সংকট মুহূর্তে উপনিত হয়েছে। করোনার প্রভাবে শুধুমাত্র মাধ্যমিক পর্যায়ের ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। যারা এখন বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিযুক্ত আছে। এসব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ফেরাতে সরকারের কাছে এ বছরের বাজেটে বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণার আহ্বান জানাচ্ছি। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা প্রতি বছরই বলে গেলেও সরকার এতে কর্ণপাত করছে না। শিক্ষার বাজেটকে ব্যয় হিসেবে না দেখে সামাজিক বিনিয়োগ হিসেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
অনুষ্ঠানে আরও বলা হয়, যেকোনও দেশের শিক্ষা বাজেট সেই দেশের মোট বাজেটের ন্যূনতম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বা জাতীয় আয়ের ৪ থেকে ৬ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে তা জাতীয় বাজেটের মাত্র ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ। 'মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে আমরা নাকি পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের থেকে উন্নত। তাহলে অন্তত ভারতে শিক্ষাখাতে যে বরাদ্দটা দেয়া হয়, সেটাই আমাদের দেয়া হোক। যদিও ভারতেও বরাদ্দ অপ্রতুল।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বলছে, বছরের পর বছর শিক্ষাখাতে সবচেয়ে কম বরাদ্দ রাখার ফলও আমরা দেখছি। জ্ঞান সূচকে ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১২তম। আমাদের ওপরে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভূটান, ভারত, পাকিস্তান সবাই। উচ্চশিক্ষা খাত কিংবা প্রাথমিক শিক্ষার দিক থেকেও আমাদের অবস্থান আরও নিচে। বছরের পর বছর এ খাতে বরাদ্দ কম রেখে একটা বোকা জাতি বানানো হচ্ছে আমাদের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বাজেট বৃদ্ধির পরিবর্তে দেশের উচ্চশিক্ষা খাত ও গবেষণা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি মাদরাসাসহ সব শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণের লক্ষ্যে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। গ্রাম ও শহরে শিক্ষার মানের তারতম্য নিরসনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম মানোন্নয়ন ঘটাতে বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে। গবেষণা, আবাসন ও পরিবহন সংকট নিরসনের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে। কারিগরি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি কৃষি শিক্ষার প্রসারে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
২০২২-২৩ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ১৬ দফা দাবি প্রস্তাব করেছে। দাবিগুলো হলো, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তে জনকল্যাণমুখী ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু করতে হবে। ঋণ নির্ভর বাজেট থেকে অতিদ্রুত ফিরে আসতে হবে। প্রবৃদ্ধিতে অসমতা দূর করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। বিদেশ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে দামি কিছু বিলাসপণ্য আমদানি কয়েক মাসের জন্য বন্ধ করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ সচল রাখতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রে খাদ্যসামগ্রীর করের হার কমাতে হবে। আমদানি ও রপ্তানির সার্বিক মূল্যে ভারসাম্যতা আনতে হবে। জনপ্রশাসনে বাজেট কমিয়ে ১২ শতাংশের বেশি দেয়া যাবে না। এছাড়াও প্রশাসনিক ব্যয় ও মন্ত্রী-আমলাদের বেতনে শতকরা ৬০ শতাংশ খরচ কমাতে হবে। সরকারি গাড়ি, জ্বালানি ও বিদ্যুৎসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় শতকরা ৫০ শতাংশ কমাতে হবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং মূল্যস্ফীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কর ফাঁকি এবং মুদ্রা ফাঁকি বন্ধ করতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কালো টাকা সাদা করার ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। যেমন বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কর ফাঁকি বছরে ১২ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল কর ফাঁকি রোধ করে কর আদায় করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিদেশে টাকা পাচার রোধ, ঋণখেলাপী বন্ধ করতে, এবং সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে ১০ টাকার জিনিস হাজার টাকায় ক্রয়ের মত জালিয়াতি বন্ধ করতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াবে না এমন অবকাঠামো খাতে এ বছর বাড়তি অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করতে হবে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।