মাথা থেকে নামাতে হবে পরীক্ষার ভূত - দৈনিকশিক্ষা

মাথা থেকে নামাতে হবে পরীক্ষার ভূত

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
যুগ যুগ ধরে উপমহাদেশে পরীক্ষা পদ্ধতি চলে আসছে। বেশিরভাগ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা, পরীক্ষা ব্যবস্থা জ্ঞান পরিমাপের একমাত্র মাধ্যম। এ পরীক্ষা ব্যবস্থা হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসার মতো। এতে শিক্ষার্থীর সার্বিক জ্ঞান অর্জন ও মেধা বিকাশ যাচাই হয় না। এজন্য বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থা যুগের চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মতো একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে আগামীর সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলবেন। যাতে শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ অথবা যে কোনো প্রতিযোগিতায় শতভাগ পাস করেন। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় নগণ্য সংখ্যক উত্তীর্ণ নম্বর না পাওয়ায় বিশাল পাস বা জিপিএ-৫ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আসছে। শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করা। বাহবা বা মিষ্টি খাওয়ার পাস নয়।
 
শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা নয়, সহযোগিতা বিষয়টির ওপরও গুরুত্ব দিতে  হবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় সমৃদ্ধ ফিনল্যান্ডে সহযোগিতার মাধ্যমে তারা উন্নত জাতি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তাদের মাঝে পরীক্ষা নিয়ে এত বাড়াবাড়ি মোটেই নেই। তাদের শিক্ষার উদ্দেশ্য জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মেধার বিকাশ ঘটানো। তাদের পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু এসএসসি পর্যায় থেকে। লেখাপাড়ায় সমৃদ্ধ দেশগুলোতে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার পাশাপাশি বিনোদন, খেলাধুলাকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। অথচ করোনায় শিক্ষা ঘাটতির দোহাই দিয়ে প্রাথমিকের সময়সূচি করোনাবান্ধব করে শিশুর শিখন ঘাটতি বরং বৃদ্ধি করছে। 
 
এক্ষেত্রে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজি মহোদয়সহ সংশ্লিষ্টরা উল্টা পথে চলছে। যার ফলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাস্তবসম্মত নির্দেশনা অমান্য করা হচ্ছে। অপরদিকে লঙ্ঘিত হচ্ছে শিশুর অধিকার, পরীক্ষার পরিবর্তে মূল্যায়ন ব্যবস্থা হলো শিক্ষার্থীর সার্বিক যাচাই করে ঘাটতি পূরণের মাধ্যমে এগিয়ে নেয়া। অভিভাবকদের মন থেকে পরীক্ষার ভূত দূর করতে হবে। এজন্য দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদের। এ চ্যালেঞ্জ দূর করার জন্য কতিপয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
 
১. শিক্ষকদের কোচিং ও টিউশনিমুক্ত করার লক্ষ্যে জীবনধারণ উপযোগী বেতন, ভাতা প্রদান করতে হবে।
 
২. শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন। ২য়, ৩য় শ্রেণির মর্যাদা দিয়ে আগামী প্রজন্মকে সুনাগরিক তৈরি করার চিন্তা করা সমীচীন নয়। 
 
৩. শিক্ষক সংকট শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। শিক্ষক সংকট থাকলে নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। 
 
৪. শিশুর পাঠদানসংক্রান্ত যাবতীয় কাজের জন্য শিক্ষকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। 
 
৫. শিক্ষক আর ছাত্রের অনুপাত ১:২০ রাখা অত্যাবশ্যক।
 
৬. শিক্ষকদের প্রতিটি ক্লাসের পর বিরতি থাকা প্রয়োজন। যাতে শিক্ষক বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে পরবর্তী ক্লাসে পাঠদান করতে পারে। 
 
৭. পাঠদানবহির্ভূত সকল কাজ থেকে শিক্ষকদের মুক্ত রাখতে হবে।
 
৮. সকল শিশুর জন্য অভিন্ন কর্মঘণ্টা, বই, মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও শিশুশিক্ষাকে বৈষম্যমুক্ত রাখতে হবে। 
 
৯. কিন্ডারগার্টেনসহ সকল বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান প্রক্রিয়া চলছে কিনা তা নিবিড় পর্যবেক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
 
১০. শিশুশিক্ষায় বিনোদনের জন্য বিদ্যালয়ে কম পক্ষে এক ঘণ্টা খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। বিকেল বেলায় খেলাধুলা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিশুবান্ধব সময়সূচি, যেমন (দুপুর ২টার মধ্যে) শিক্ষার্থীর দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম বা ঘুমের মাধ্যমে বিকেলের খেলাধুলা প্রস্তুতি নিতে পারবে। সুস্থ দেহ ও মনই পারে একমাত্র শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধন করতে।
 
১১. বাড়িতে পড়ার চাপ শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। 
 
বিদ্যালয় হোক শিক্ষার্থীর লেখাপাড়া ও বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। অভিভাবকদের পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীকে প্রতি পিরিয়ডে, সপ্তাহে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। প্রতিটি পাঠৈ পাঠে মূল্যায়ন হলে শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি থাকতে পারে না। পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে দুর্বল শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ঘাটতি দূর করতে হবে। 
 
এজন্য প্রয়োজন প্রাথমিক শিক্ষার অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল। শিশু শিক্ষাকে বর্তমান শিক্ষাক্রমে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি দিয়ে গড়ে তুলতে হবে স্বতন্ত্র প্রাথমিক শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস। অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ থেকে অভিজ্ঞতাবিহীন সচিব, ডিজি বা কর্মকর্তা দিয়ে শিশু শিক্ষার মানোন্নয়ন কল্পনা করা কতটা বাস্তব তা নিবিড়ভাবে ভাবতে হবে। শিশু শিক্ষাকে ক্যাডারবিহীন রেখে সমৃদ্ধ প্রাথমিক শিক্ষার কথা ভাবা নিছক অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু নয়। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী গভীরভাবে ভাববেন ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন। তা হলে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নে মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় গড়ে উঠবে ফিনল্যান্ডের মত উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে সার্বিক চ্যালেঞ্জ দূর করার প্রক্রিয়ায় আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি জাগ্রত হোক।   
 
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান,  সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।
প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037119388580322