বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্ব পাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদরাসা মাঠে খেলাধুলা বন্ধ করে ধান চাষ করেছে মাদরাসাটির সুপার মো. আব্দুল হাই ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমান তালুকদার। মাঠে ধান চাষ করায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মাদরাসা শিক্ষার্থী ও এলাকার শিশু ও কিশোররা। শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হওয়ায় আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। প্রভাবশালী আমান তালুকদার ও সুপার আব্দুল হাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তবে এ ঘটনায় এলাকার চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলার তালুকদার বাজারে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাতাকাটা মেহের আলী দাখিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়। মাদরাসার সামনে এক একর জমির খেলার মাঠ রয়েছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ওই মাঠে মাদরাসার শিক্ষার্থী ও এলাকার শিশু ও কিশোর খেলাধুলা করছে। চাওড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী একমাত্র মাঠে প্রতিদিন কয়েকশত শিশু ও কিশোর খেলাধুলা করে। কিন্তু মাদরাসা কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে ওই মাঠে খেলাধুলা বন্ধের পায়তারা করছে। কিন্তু এলাকাবাসীর চাপে পারেননি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ বছর প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে মাদরাসা সুপার মো. আব্দুল হাই ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আমান তালুকদার মাঠে খেলাধুলা বন্ধ করে দেন। এতে গত চার মাস ধরে ওই এলাকার শিশু ও কিশোররা খেলাধুলা করতে পারছে না। গত সেপ্টেম্বর মাসে ওই মাঠে সুপার ও সভাপতি ধান চাষ শুরু করেছেন। এতে পুরোপরি খেলাধুলা বন্ধ হয়ে গেছে। মাঠে খেলাধুলা বন্ধ হওয়ায় এলাকার শিশু ও কিশোররা বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কিশোররা মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এদিকে মাঠে ধান থাকায় মাদরাসা খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চা ও জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশনে সমস্যা হবে। প্রভাবশালী আমান তালুকদার ও সুপার আব্দুল হাইয়ের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না এলাকাবাসী। তবে এ ঘটনায় এলাকার ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাদরাসা মাঠে ধানের চারা বেড়ে উঠছে। মাঠে ধান থাকার এলাকায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করতে পারছে না।
মাদরাসার শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম, আতিকুল রহমান, আব্দুল্লাহ ও রোকনুজ্জামান রাফি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, করোনার সময় মাদরাসা বন্ধ। এ সময় খেলাধুলা করে সময় পার করতাম কিন্তু মাদরাসা মাঠে ধান চাষ করায় আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না, অলস সময় কাটাচ্ছি।
স্থানীয় কিশোর মঞ্জিল মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাঠে ধান চাষ করায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এই মাঠে প্রতিদিন অন্তত কয়েকশত শিশু ও কিশোর খেলাধুলা করতো। এখন খেলাধুলা করতে না পারায় শিশু ও কিশোররা বিপদগামী হচ্ছে। দ্রুত মাঠ পরিস্কার করে স্বাভারিক অবস্থা ফিরে আনার দাবি জানাই।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. জাকির হোসেন মৃধা বলেন, মাদরাসা মাঠে খেলাধুলা না করতে পারায় শিশু ও কিশোররা বিপথগামী হচ্ছে। চাওড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী তালুকদার বাজারের এ খেলার মাঠ দ্রুত পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার দাবি জানাই।
মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো. জব্বার মল্লিক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাদরাসা মাঠে ধান চাষ করা অন্যায়। আমি কমিটির সদস্য হয়েও ধান চাষ করার বিষয়টি জানিনা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মাদরাসার সুপার মো. আব্দুল হাই দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মাদরাসার নামে ৬ দশমিক ১৮ একর জমি রয়েছে। ওই সকল জমি বে-দখল। মাদরাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আমান তালুকদার ওই মাঠে ধান চাষ করেছে। এটা একদিকে অন্যায় আবার অন্যদিকে ন্যায় করেছে।
মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. আমান তালুকদার মাঠে ধান চাষ করার কথা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বহিরাগত ছেলেরা এসে মাঠে আড্ডা দেয় এবং মাদক সেবন করে, তাই খেলাধুলা বন্ধ করে ধান চাষ করেছি।
আমতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হক মিলন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাঠে ধান চাষ করা বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।