মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তরের প্রস্তুতি শুরু - দৈনিকশিক্ষা

মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তরের প্রস্তুতি শুরু

রুম্মান তূর্য |

মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তরের পথে হাঁটছে সরকার। দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করে আসছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। যার মূল পদগুলোতে আছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ শিক্ষকরা। প্রায় ২২ হাজার নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল একই অধিদপ্তরের মাধ্যমে তদারকি করায় নানা কাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। উপরন্তু, স্কুলশিক্ষকরা নিজেদের অবহেলিত ও উপেক্ষিত মনে করে দীর্ঘ দিন ধরে আলাদা অধিদপ্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন। বিপরীতে শিক্ষা ক্যাডারের কতিপয় কর্মকর্তা এই দাবি দমিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। এমন পরিস্থিতিতে অধিকতর দক্ষতা ও সুষ্ঠুতা নিশ্চিতের প্রয়োজনে গত মার্চ মাসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক উইংয়ের মাধ্যমে মাধ্যমিক শিক্ষকদের কাজকর্ম পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

এ নির্দেশনাকে স্বতন্ত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের প্রথম ধাপ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, আলাদা উইং নয়, মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর করা এখন সময়ের দাবি। জাতীয় শিক্ষানীতিতেও মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তরের কথা উল্লেখ আছে।

সম্প্রতি অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শিক্ষার সব কাজ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক উইংয়ের মাধ্যমে করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিভাগের তৎকালীন সচিব মাহবুব হোসেন। সভার সিদ্ধান্ত ছিলো, মন্ত্রণালয় যে পদ্ধতিতে মাধ্যমিক অনুবিভাগ করছে অনুরূপভাবে অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শিক্ষার কার্যক্রম মাধ্যমিক উইংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয় কার্যকম নিতে হবে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সম্মতি আছে। 

গত ২২ মার্চ এ নির্দেশনা দিয়ে অধিদপ্তরে চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাতে মাধ্যমিক শিক্ষার যাবতীয় কাজ মাধ্যমিক উইংয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে বলা হয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মাধ্যমিক অনুবিভাগের কোনো কাজ অন্য কোনো অনুবিভাগ বা শাখার মাধ্যমে সম্পাদন করা যাবে না। নির্দেশ বাস্তবায়ন করে দশ কর্মদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়কে জানাতে বলা হলেও তা করেনি অধিদপ্তর।   

জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাধ্যমিকের আলাদা অধিদপ্তর করার কথা উল্লেখ আছে। কারিগরি শিক্ষা ও মাদরাসা শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর রয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদপ্তর নেই। যদিও মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনস্ত মোট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮২ শতাংশই মাধ্যমিক।

শিক্ষানীতি ২০১০ অনুযায়ী, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি নিয়েই মাধ্যমিক স্তর হওয়ার কথা। কিন্তু প্রাথমিক স্তর সংযুক্ত থাকায় মাধ্যমিক স্তরের কার্যক্রম চালাতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছিল, সেই জায়গায় অতিরিক্ত কোনো পদ সৃষ্টি না করেই ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ১০টি সরকারি স্কুলে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি চালু করা হয়। 

মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য স্বতন্ত্র অধিদপ্তর না থাকায় এ সমস্যাগুলোর মূল কারণ বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। শিক্ষা ক্যাডার পরিচালিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক তারা কেবল শাসিত হচ্ছেন বলে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা মনে করেন। 

শিক্ষকরা বলছেন,  মাধ্যমিকের জন্য নেয়া প্রকল্পগুলোয় মাধ্যমিক শিক্ষকদের কোনো অংশগ্রহণ নেই, কেবল প্রান্তিক প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়া। শিক্ষা বোর্ডগুলোয় মাধ্যমিক শিক্ষকদের পরীক্ষক হওয়া ছাড়া আর কোনো কর্মকাণ্ডে ভূমিকা নেই। মাধ্যমিক শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী হওয়ার পরও পেশাগত ডিগ্রি বিএড ও এমএড অর্জন করে থাকেন। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন তাদের কতটুকু মূল্যায়ন করে তা প্রশ্নবোধক। যথাযথ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে মাধ্যমিকের জন্য মাত্র তিনটি পদ সংরক্ষিত, তাও দীর্ঘদিন অনিয়মিত। মাধ্যমিক শিক্ষকদের মধ্য থেকে আসা আঞ্চলিক উপপরিচালকরা ২০-২২ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত। সংশ্লিষ্টদের মতে, জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করা হলে মাধ্যমিক স্তরে গতিসঞ্চার হতো, যা সরকারের রূপকল্প ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ক্যাডেট কলেজের সাবেক শিক্ষক মাছুম বিল্লাহ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সরকার ঘোষিত পদক্ষেপের সুফল থেকে বঞ্চিত সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষা। নানামুখী বঞ্চনার কারণে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা চরম হতাশায় নিমজ্জিত। আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হলে হয়তো সমস্যাগুলোর উদ্ভব হতো না। শিক্ষানীতিতে প্রস্তাবিত মাধ্যমিকের জন্য স্বতন্ত্র মাধ্যমিক অধিদপ্তর বাস্তবায়ন করা হলে শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড মাধ্যমিক স্তরে গতিসঞ্চার হতো, যা সরকারের রূপকল্প ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারত।

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035908222198486