মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিভিন্ন সময় নানারকম অনিয়মের অভিযোগ অতীতেও শোনা গেছে, বর্তমানেও যাচ্ছে। চলতি বছর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সুষ্ঠু এবং সঠিক তালিকা জাতির সামনে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হয়নি। বরং অসংখ্য অমুক্তিযোদ্ধা ভুয়া সনদ নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অথচ বাংলার আনাচে কানাচে পড়ে আছেন অসংখ্য প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের মুখে দিনে একবারও অন্ন জোটে না। তারামন ও কাঁকন বিবির মতো অসংখ্য নারী মুক্তিযোদ্ধা জীবন পার করছেন এ বিলাসী জীবনযাপনকারী ব্যক্তিদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে। তাদের খবর কেউ রাখে না। একটি স্বাধীন দেশে এটা কখনো কাম্য হতে পারে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এমন ঘটনা ঘটছে এবং তা ধারাবাহিকভাবেই। কেন? এই 'কেন'র উত্তর তারা খুঁজছেন, যারা এই দেশটির স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন, যারা নিজের স্বামী-সন্তানকে যুদ্ধে হারিয়েছেন। এর জবাব তাদের জানা দরকার, যারা নিজের পিতাকে একজন বীরযোদ্ধা হিসেবে জেনে এসেছেন। কিন্তু জবাবটা দেবে কে?
সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই নিয়ে বিতর্ক চলছেই। একদিকে অভিযোগ উঠছে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম রাখার জন্য অর্থ লেনদেনের, অন্যদিকে আপত্তি উঠছে কমিটির সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার করার। তারা কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে কমিটি থেকে বাদও দেয়া হয়েছে। ফলে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অনেক ভুয়া লোক ঢুকে পড়েছে, এমন অভিযোগ সরকার নিজেও স্বীকার করে। কিন্তু তালিকায় ভুয়া বা অমুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ঠিক কতো, সে বিষয়ে পরিষ্কার তথ্য নেই মন্ত্রণালয়ের কাছে। যেমনটি নেই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সুষ্ঠু এবং সঠিক গ্রহণযোগ্য তালিকাও। গবেষকরা মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অনিয়ম এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে সরকারি সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের যে অভিযোগ রয়েছে, তার পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা কারণ রয়েছে। গবেষক আফসান চৌধুরী মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে বিতর্ক হওয়ার পেছনে রাজনীতির সাথে কিছু কাঠামোগত সমস্যাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চরিত্র ছিল কিছুটা ইনফর্মাল। ইনফর্মাল যুদ্ধের সমস্যা হচ্ছে সেখানে রেকর্ড খুব একটা থাকে না। এখন মুক্তিযুদ্ধে মোট কত লোক অংশ নিয়েছে, সেটা কেউ হিসেব করে বলতে পারবে না। স্বাধীনতার পরে মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে কেউ ভাবত না। তখন সনদ ছিল, কিন্তু কোন ভাতা ছিল না। কিন্তু জিয়াউর রহমান আসার পরে পুরো বিষয়টার পুনর্বিন্যাস করা হয়। জিয়াউর রহমান সেসময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে তার নিজের লোকেদের নিয়োগ দেয়া হয়। এই সংক্রান্ত রাজনীতিকরণটা মূলত তখন থেকেইা শুরু হয়।
চলতি বছরের ৩০ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ৬১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানেরা। মোরেলগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান হাওলাদার। এর আগে চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি গোপালগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল, মতিয়ার রহমান খান, মোশারফ হোসেনসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন। এসময় যাচাই-বাছাই বন্ধসহ ৭ দফা দাবি জানিয়ে বক্তরা বলেন, ‘যাচাই-বাছাইয়ের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করা হচ্ছে। দ্রুত এসব বন্ধ করতে হবে।’
এরপর প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসক বরাবর ৭ দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। দাবিগুলো হলো: আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের অবাঞ্চিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত যাচাই-বাছাই বন্ধ করতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সনদসহ আইডি কার্ড দিতে হবে, জেলা প্রশাসকগণের মাধ্যমে সকল জেলায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদের একটি নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করতে হবে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের গৃহ নির্মাণের অর্থ প্রদান বরাদ্দ করতে হবে; অপ্রত্যাশিতভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বন্ধ না করে সকল মুক্তিযোদ্ধার ভাতা চালু রাখতে হবে, জামুকা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সকল অনিয়ম ও মুক্তিযোদ্ধা হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং জামুকা ও মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চাকরিতে দায়িত্ব পালনের জন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের নিয়োগ দিতে হবে।
সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের নামে মহা প্রহসন চলছে বলে অভিযোগ করেছে ‘খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড’নামের একটি সংগঠন। এই প্রহসন বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে সংগঠনটি। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সৃষ্ট অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের প্রতিকারের দাবিতে’আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন সংগঠনটির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাইয়ে কোটি কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। যাচাই-বাছাইয়ের সময় সর্বজনস্বীকৃত মুক্তিবার্তা লাল বই, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরিত সনদ, সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার বাহিনীর গেজেট ও ভারতীয় তালিকায় নাম আছে, এমন মুক্তিযোদ্ধাদেরও হয়রানি করা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই হচ্ছে একতরফা। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাবের টাকা বন্ধ আছে অভিযোগ করে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতা প্রদান করে মুক্তিযোদ্ধাদের আর্থিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছেন। কিন্তু ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সাবেক সচিব আবদুল হান্নান প্রণীত ও স্বাক্ষরিত নীতিমালায় যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ একটি ভাতা দিতে বলা হয়েছে। এতে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের খেতাব ভাতা বন্ধ হয়েছে।’আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও কলেজ গেট ১ নম্বর মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অবিলম্বে ওই অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে যোগ্য প্রাপকদের বরাদ্দ প্রদান করারও আহ্বান জানান তিনি।
চার বছর পার হয়ে গেলেও সে দাবিগুলোর বাস্তবায়ন হয়নি। পর্যাপ্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। যেসকল মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত, তাদের পরিবারও এর থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এমনকী, যারা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাচ্ছিলেন, ক্ষেত্রবিশেষে আকস্মিকভাবে তাদের ভাতাও বন্ধ করে দেয়া হয়ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনার সুষ্ঠু জবাব নেই। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ভুলবশত তাদের নাম গেজেটভুক্ত করা হয়নি। কেন হয়নি, সেটারও কোন উত্তর নেই। তবে এসব বিষয়ে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া যায়। চলতি বছরের ২ এপ্রিল সাভারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আমিই বঙ্গবন্ধু’ নামে প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন ‘আমাদের একটাই শুধু দেখার বিষয়, তিনি কার সহযোদ্ধা ছিলেন? তার সাথে যদি কমপক্ষে তিনজন সহযোদ্ধা যদি বলেন, আমার সাথে ট্রেনিং গ্রহণ করেছেন বা আমার সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, এটাই যথেষ্ট। অন্য কোনোরকম কোনো কাগজপত্রের দরকার নাই।’মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মধ্যে ১৫-২০ লাখ বাদ দিলে সকলেই মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেছেন। আমাদের মা, বাবা, আত্মীয়স্বজন, দেশবাসী সবাই। খুবই একটি ক্ষুদ্রতম অংশ ছাড়া সবাই মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী ও সহায়ক শক্তি। এটা বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন।’
মুক্তিযুদ্ধকে রাজনীতিকীকরণের শুরু ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের পরে হলেও, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ প্রথম নেয়া হয় ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। তৎকালীন এরশাদ সরকারের সময় থেকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট ৭ বার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হয়েছে। আর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও নির্ধারণ করা হয়েছে অনেকবার। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা এক আদেশে বলা হয়েছিল, মুক্তিযোদ্ধা মানে এমন একজন ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত যে কোনও সংগঠিত দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। সে হিসাবে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর স্বাক্ষরযুক্ত সনদ যাদের কাছে ছিল, তারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন এমন মানুষের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহ দিতে শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, চিকিৎসক, লেখক, সাংবাদিক এবং দেশে বা বিদেশে বিভিন্নভাবে অবদান রাখা ব্যক্তিরাও। তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়সের সীমাও কয়েকবার নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বশেষ এখন সরকারের নির্ধারিত বয়স হচ্ছে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে একজন মুক্তিযোদ্ধার বয়স ন্যূনতম সাড়ে ১১ বছর হতে হবে। বয়স নিয়েও বিভিন্ন সময় অনিয়মের অভিযোগ শোনা গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এর পেছনে মূলত রাজনৈতিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধার ভাগীদার হওয়াটাই প্রধান কারণ। রাজনীতি বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন সম্প্রতি বিবিসি-কে দেয়া এক সাক্ষৎকারে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক সময় গুরুত্বপূর্ণ ছিল ধর্ম, জাতীয়তাবাদ। কিন্তু এখন সেটা হয়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক রাজনীতি। এর পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা ও সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে এবং পরবর্তীতে নাতি-নাতনি পর্যন্ত যে কোটার ব্যবস্থা ছিল, তার কারণে বিভিন্ন সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে ও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়ে অনিয়ম হয়েছে।’
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ২০১৮ খিষ্টাব্দ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর সব ধরনের চাকরি থেকে কোটা তুলে দেয়া হয়। চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতার পরিমাণ ২০ হাজার করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকে। সরকারি হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে সব রকম স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ও আসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা আছে। এমনকী করোনাভাইরাস ঠেকাতে ভ্যাকসিন দেয়ার ক্ষেত্রেও মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছেন। বিভিন্ন সুবিধার জন্য মুক্তিযোদ্ধার তালিকা নিয়ে অনিয়ম বেড়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অনেকে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেছেন, যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক সচিবও ছিলেন। পরে সনদ ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়। মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এ ধরণের অনিয়মের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজে ঢিলেঢালাভাব এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেন মুক্তিযোদ্ধারা।
নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণের জন্য যখন নানারকম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়, তখন বিষয়টা পুরো রাষ্ট্র তথা রাষ্ট্রব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতির নামে অসম্মান এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে অপমান করা। শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এমন টানা হ্যাঁচড়া সত্যি দুঃখজনক এবং অমানবিক। সব মুক্তিযোদ্ধা এখন বৃদ্ধ। তাদের অনেকে মারা গেছেন। জীবিতদের অনেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। অনেকই আছেন যারা অসুস্থতাজনিত কারণে স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন। তাদের এমন বারবার যাচাই-বাছাইয়ের নামে কষ্ট দেয়ার কী মানে? আমরা আশা করি, যাচাই-বাছাইয়ের এই অত্যাচারের অবসান হবে। আমরা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক তালিকা পাব।।
লেখক : শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ, সিনিয়র সাংবাদিক।